রাষ্ট্রপতির জীবনাবসান

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আর নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2013, 05:02 AM
Updated : 21 March 2013, 04:21 AM

বুধবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে জিল্লুর রহমানের। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

দায়িত্ব নেয়ার চার বছরের মাথায় জীবনাবসান ঘটল দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের।

অসুস্থ জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন স্পিকার আবদুল হামিদ। এখন সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।  

তার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে জিল্লুর রহমান মারা যান বলে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচব এ কে এম নেছার উদ্দিন ভূইঞা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর পাওয়ার সময় এনইসিতে এক বৈঠকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। টেলিফোনে খবর পেয়ে বৈঠক শেষ না করেই গণভবনে ফেরেন তিনি, চূড়ান্ত করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতিকে শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার না করায় সরকারের সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসার তদারকিতে সিঙ্গাপুরে মন্ত্রী পর্যায়ের কাউকে না পাঠানোয়ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সরকারিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও ঢাকা জেলায় তাদের হরতালের কর্মসূচি স্থগিত করেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিমানবন্দরে আসবে রাষ্ট্রপতির মরদেহ।

গত ১০ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছিল জিল্লুর রহমানকে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে তার আগের দিনই ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

মরদেহ ঢাকায় আনার পর শোক শোভাযাত্রাসহ তা নেয়া হবে বঙ্গভবনে, সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানানো হবে।

পরদিন জুমার নামাজের পর জাতীয় ঈদগাহে জানাজার পর বিকালে বনানী কবরস্থানে স্ত্রী আইভি রহমানের কবরে সমাহিত করা হবে তাকে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি।

এই রাজনীতিক দম্পতির একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান বর্তমানে সংসদ সদস্য। তার দুই বোন হলেন তানিয়া বখত ও তনিমা বখত।

জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের পর তিনিই প্রথম মারা গেলেন।

অশীতিপর জিল্লুর রহমান দায়িত্ব পালনের মধ্যে অসুস্থতার জন্য কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসেও যুক্তরাজ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।

জিল্লুর রহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দেন।

কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব থেকে শুরু করে জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জিল্লুর।

এর দুই দশক পর শেখ হাসিনার সঙ্গেও দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জিল্লুর রহমান, সংসদ উপনেতাও ছিলেন তিনি। পরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।  

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তারের সময় শেখ হাসিনা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব জিল্লুর রহমানকে দেন।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ '৭৩, '৮৬, '৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।

বর্তমান অর্থাৎ নবম সংসদ উপনেতা ছিলেন জিল্লুর রহমান। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে ওই পদ ছাড়েন তিনি।