মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়। তার পৌনে এক ঘণ্টা আগে জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় আগামী কালের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।”
প্রেসক্লাবের সামনেই বুধবার গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। হেফাজতে ইসলাম তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে নগরীতে ওই দিন যে কোনো ধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় পুলিশ।
হাতবোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য কেউ এই হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।”
বিস্ফোরণের সময় গণজাগরণ মঞ্চের কোনো কর্মী বা সংগঠক সমাবেশস্থলে ছিলেন না। তবে তাদের অনেকে প্রেসক্লাবে ছিলেন।
রাতে এই বিস্ফোরণের আগে পুলিশ জানায়, তিনটি স্থান নয়, বন্দর নগরীর কোথাও বুধবার সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
গণজাগরণবিরোধী হেফাজতে ইসলাম বুধবার চট্টগ্রামে হরতাল ডাকার পাশাপাশি তিনটি স্থানে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
এরপর পুলিশ জামাল খান, লালদীঘি ময়দান এবং স্টেশন রোডে ১৪৪ ধারা জারি করে। মঙ্গলবার পুরো নগরীজুড়েই সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায়।
গণজাগরণ মঞ্চের চট্টগ্রাম শাখা বুধবারের সমাবেশের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিকালে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম গণজাগরণ সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিলেও পুলিশের নিষেধাজ্ঞা আরোপকে স্বাগত জানিয়েছে।
পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বুধবার নগরীতে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।”
সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীতে এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ ও হেফাজত ইসলামের অনড় কর্মসূচির কারণে মহানগরীর নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।”
বন্দর নগরীর কোথাও সভা-সমাবেশ ও মিছিল করা যাবে না বলেও জানান কমিশনার।
রাতে সংবাদ সম্মেলনের আগে শরিফ চৌহান বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে বুধবারের কর্মসূচি পালিত হোক এবং চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করুক এটা আমরা সকলেই চাই। আমাদের কর্মসূচি অহিংস ও শান্তিপূর্ণ।”
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে হেফাজত ইসলামের প্রতি হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বানও জানানো হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলনের সূচনা ঘটে। পরে তা অন্য জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামেও গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ।
তবে জামায়াতবিরোধী এই আন্দোলনে ‘অনৈসলামিক’ কর্মকাণ্ড হচ্ছে দাবি করে কয়েকটি ইসলামী দল শাহবাগের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেয়। চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম এর একটি।
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, ইসলামসহ কোনো ধর্মের অনুভূতির ওপর কোনো ধরনের আঘাত হানার উদ্দেশ্য তাদের নেই। শুধু যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে তাদের।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতাকারী জামায়াত মানুষের ধর্মীয় অনুর্ভতিকে পুঁজি করে গণজাগরণ আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন শাহবাগের তরুণরা।
গণজাগরণ আন্দোলন কোনো ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে নয় উল্লেখ করে শরিফ চৌহান বলেন, “শুধু যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে আমাদের এই অহিংস আন্দোলন।”