হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে শনিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের শেষ হবে। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।
রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা বলা হয় অকাল বোধন।
মঙ্গলবার সকালে সারা দেশে মণ্ডপে মণ্ডপে হয়েছে দেবীর ঘুম ভাঙানোর সেই বন্দনা পূজা বা বোধন। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গোৎসবের সূচনা।
উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ, সঙ্গে ঢোলের বোল; মাতৃবন্দনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকাল ৯টায়। নানা উপচারে ডালা সাজিয়ে আসতে থাকেন ভক্তরা। অশুভ শক্তির বিনাশে ‘মঙ্গলময়ী’ দেবীর জাগরণে জগতে সুর শক্তি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিল্ববৃক্ষ বা বেলগাছ মহাদেবের ভীষণ প্রিয়। পদ্মযোনী ব্রহ্মাও বিল্ববৃক্ষে দেবীকে প্রথম দর্শন করেন। তাই শাস্ত্র অনুযায়ী দেবীকে বিল্ববৃক্ষ তলে আবাহন করা হয় ।
শাস্ত্র বলছে, সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন বুধবার এবং ফেরার দিন শনিবার হওয়ায় দুর্গা এবার আসছেন নৌকায় চড়ে, যাবেন ঘোড়ায়।
দুর্গার নৌকায় চড়ে মর্ত্যে আসার অর্থ হল- ‘শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম’। অর্থাৎ শস্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা। আর ঘোড়ায় চেপে দেবীর বিদায়ের মানে হল- ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। মানে- রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর শঙ্কা।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় বলেন, “এবার এত অস্থিরতা, নিরাপত্তা শঙ্কার পরও আমরা জাঁকজমকের সঙ্গেই দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছি। অসাম্প্রদায়িক এই বাংলাদেশে দুর্গোৎসব আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সাম্য আর ভাতৃত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় করতে চাই। আমরা বলতে চাই, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ২৩১টি মণ্ডপ।
শ্যামল কুমার পাল জানান, মঙ্গলবার আবাহনের মাধ্যমে মূল মণ্ডপে দেবী আসীন হওয়ার পর সন্ধ্যায় দেবীর অধিবাস। বুধবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে হবে মহাসপ্তমী পূজা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজার পর হবে কুমারী পূজা। এ দিন রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে সন্ধিপূজার পর শুক্রবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে শুরু হবে মহানবমী তিথি।
শনিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে দশমীর বিহিত পূজা শেষে দর্পন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের শেষ হবে।
সেদিন সরকারি ছুটি; বিকাল ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে প্রতীমা নিয়ে বিজয়া শোভাযাত্রা যাবে বিসর্জনের ঘাটে।