বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তির কথা শুনে ‘বিস্মিত হয়েছিলেন’ রাদওয়ান

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়ার কথা প্রথম জেনে বিস্মিত হয়েছিলেন তার নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 06:03 PM
Updated : 19 August 2017, 09:53 PM

১৯৮৬ সালে রাদওয়ান প্রথম এ কথা শোনার সময় কিন্ডারগার্টেনে পড়তেন।

বঙ্গবন্ধুর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমি ইনডেমনিটি আইনের কথা শুনে খুব আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। কীভাবে এমন একটি আইন হতে পারে?”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে আক্রমণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা করে একদল সেনা সদস্য।

সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

ইতিহাসের কলঙ্কজনক ওই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা দখল করা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকার জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে পঁচাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে।

পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে ওই অধ্যাদেশের বৈধতা দেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দেশে কূটনীতিক মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পার্লামেন্টে ওই আইন বাতিল করে ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাই কোর্ট প্রথমে বিভক্ত রায় দিলে পরে তৃতীয় বেঞ্চ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ২০১০ সালে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বিদেশে মৃত্যু হয়েছে একজনের, ছয়জন এখনও পলাতক। তাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। সরকার তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরের চেষ্টা করছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল স্ট্রাস্টে আয়োজিত সেমিনারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী, প্রসিকিউটর, আইনের শিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি তরুণ পেশাজীবীরা এতে অংশ নেন।

নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের জাতির জনক সম্পর্কে জানা ও অন্যদের জানানোর আহ্বান জানান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, “আমরা ঢাকায় আসি ১৯৮৬ সালে এবং বনানীর একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আমি ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সেই স্কুল বদলাতে হয়েছিল।

“আমি রাগ হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন আমাকে স্কুল পাল্টাতে হবে? তখন তিনি বলেছিলেন, খুনিদের ছেলেরা এখানে আছে। আমি তখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, খুনিরা কীভাবে মুক্ত থাকে। তখন আমাকে দায়মুক্তি আইনের কথা বলা হয়েছিল।”

তার বয়সী ছেলেমেয়েরা তখন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিছুই জানত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের পরিবার আমাদের কাছে কখনও ইতিহাস গোপন করেনি। তাই আমাদের ওই বর্বরতা সম্পর্কে জানানো হত।”

তবে নিরাপত্তার কারণে নিজের নানা সম্পর্কে স্কুলের কারও কাছে কিছু বলতে পারতেন না বলে জানান তিনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়্যারম্যান মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান প্রসিকিউটর বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসাইন এবং দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসাইন এবং কিউরেটর ও সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান।