সাঈদীর ফাঁসি না হওয়ায় দুঃখ থেকে যাবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

সর্বোচ্চ আদালতের রায় শিরোধার্য হলেও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় ‘দুঃখ থেকে যাবে’ বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 02:25 PM
Updated : 15 May 2017, 02:25 PM

সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদন সোমবার আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ার পর নিজের কার্যালয়ে তিনি এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, “আমার মনে একটা ব্যথা রয়ে যাবে। সাঈদীর মতো একটা লোক, তার যে দণ্ড পাওয়া উচিত ছিল- সে দণ্ডটা সে পেল না।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের রায়ে তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত সাঈদী আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে খালাস চেয়েছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বহাল চেয়েছিল।

রায় পুনর্বিবেচনার ওই দুই আবেদন আপিল বিভাগ সোমবার খারিজ করে দেওয়ায় ৭৭ বছর বয়সী সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশই বহাল থাকছে।  

মাহবুবে আলম বলেন, “সাধারণ আইনে যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে এরকম নজির নেই। কিন্তু এ মামলাটি বিশেষ আইনের। সে আইনের কথা বলে রিভিউ পিটিশন দিয়েছিলাম। হত্যাকাণ্ডে যদি কেউ অংশ গ্রহণ করে থাকে, যেভাবেই অংশগ্রহণ করুক না কেন, তার প্রাপ্য সাজা হল মৃত্যুদণ্ড।”

মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে একাত্তরে জামায়াত নেতা সাঈদীকে তার জেলা পিরোজপুরের মানুষ চিনত ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে। তিনি যে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় অংশ নিয়েছেন, তা উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে।

অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি)

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমি দুইবার গিয়েছিলাম পিরোজপুর ও বরিশালে সাঈদীর দাখিল করা এফআইআরের বিষয়ে খবর নিতে। কিন্তু সে কাগজপত্র আর পাইনি। আমার বিশ্বাস, সাঈদীর পক্ষের লোকেরা আগে থেকেই সরিয়ে রেখেছিল। আমার মোবাইলে এসএমএস করা হয়েছিল, আমার গতিবিধি সাঈদীর লোকেরা ফলো করত। আমি এ ব্যাপারে জিডিও করেছি। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর চেয়ে আমার বিবেচনায় ধুরন্ধর। সে অত্যন্ত ধুরন্ধর।”

সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ার পেছনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার গাফিলতির কথাও বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

“এ ব্যাপারে আদালতের ওপর দোষ না দিয়ে… প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থার যেভাবে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি বলেই আজ আমরা ফাঁসির আদেশ পেলাম না।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধী যে কয়জনের ফাঁসি হয়েছে, তাদের ভেতরে সাঈদী হলো শিরোমনি। সবচেয়ে বেশি ধূর্ত। আমাদের মানব সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। অথচ সে লোকটারই ফাঁসি হল না। এটা আমার দুঃখ। আদালতের ওপর দোষ দিচ্ছি না। তবে সমগ্র দেশের অধিকাংশ জনগণের দাবি, তার চরম দণ্ড হওয়া উচিত ছিল।”

এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের দুর্বলতার বিষয়গুলো দুই দিনের রিভিউ শুনানিতেও এসেছে।

আপিল বিভাগ বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যেসব প্রসিকিউটর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে, তারা ‘মিসকন্ডাক্ট’ করছে।

সোমবার রিভিউ শুনানির দ্বিতীয় দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্য শেষ করার পর আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আপিলের রায়ে প্রসিকিউশন নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ বাদ দেওয়ার আবেদন নিয়ে দাঁড়ান।

তখন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, “কিছু নন-প্রাকটিসিং লইয়ার প্রসিকিউটর হয়েছেন। কিছু প্রসিকিউর ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির মিটিংয়েও যান, যাদের পলিটিক্যাল এজেন্ডা রয়েছে। তারা কিন্তু মিসকন্ডাক্ট (অসদাচারণ) করছেন। এরা পাবলিক প্রসিকিউটরের পজিশন বোঝে না।”

এরপর আদালত প্রসিকিউশন নিয়ে আপিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু অংশ বাদ দেয়।