বোয়িং নিয়ে কক্সবাজার গেলেন প্রধানমন্ত্রী

বোয়িংয়ে চড়ে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরীতে সুপরিসর উড়োজাহাজ চলাচলেরও সূচনা হল।

রিয়াজুল বাশার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2017, 04:26 AM
Updated : 10 May 2017, 11:03 AM

শনিবারের এই সফরে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন এবং দুটি এলএনজি টার্মিনালের ভিত্তিফলক উন্মোচনসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন সরকারপ্রধান।  

ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রওনা হয়ে সকাল ১০টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ মেঘদূত।

কক্সবাজারের সম্প্রসারিত রানওয়ে ব্যবহার করে নামার পর বিমানবন্দরে বড় আকারের উজোজাহাজ চলাচল উদ্বোধনের পর মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের নির্মাণ করা এ বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতদিন কেবল ড্যাস কিউ ৪০০ মডেলের ৭৪ আসনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে এবং এর চেয়ে ছোট যাত্রীবাহী ও কার্গো উড়োজাহাজই এ বিমানবন্দরে ওঠানামা করত।

কিন্তু কক্সবাজারকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী এবং মহেশখালীকে বিনিয়োগের ‘হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরুর প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার কাজ শুরু করেছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহান্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করার লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তখন এখানে বোয়িং ৭৪৭ বা ৭৭৭ এর মতো বড় উড়োজাহাজও নামতে পারবে।”

বাংলাদেশ বিমানের বহরে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের উদ্বোধনও করেছিলেন শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের এভিয়েশনে এটি একটি মাইলফলক।”

এটি কমার্শিয়াল ফ্লাইট হলেও প্রধানমন্ত্রী থাকায় সেটিকে ‘ভিভিআইপি ফ্লাইট’ ঘোষণা করা হয় বলে জানান তিনি।

শাকিল মেরাজ বলেন, এখন থেকে এই মডেলের উড়োজাহাজ দিয়ে কক্সবাজারে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালাবে বিমান। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে।

মেরিন ড্রাইভ

বিমানবন্দরের অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী যান ইনানীতে। সেখানে এক অনুষ্ঠানে তিনি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করেন।

পযটক আকর্ষণের জন্য নির্মিত ৮০ কিলোমিটার এ সড়কের একপাশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি। হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে তিন ধাপে এই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে।

ইনানীর অনুষ্ঠান শেষে বিকাল ৩টায় কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন।

উদ্বোধন, উন্মোচন

প্রধানমন্ত্রী এই সফরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রী নিবাস, কক্সবাজার সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কাম এক্সামিনেশন হল, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রী নিবাস, উখিয়ার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজের দ্বিতল একাডেমিক ভবন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইনের উদ্বোধন করবেন।

এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), এলজিইডির আওতায় কক্সবাজার সদর উপজেলার বাকখালী নদীর উপর খুরুস্কুল ঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্সগার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার আইটি পার্ক, মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মহেশখালীতে ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কুতুবদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবনের ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন গোলাম মুজতবা ধ্রুব ও কক্সবাজার প্রতিনিধি শঙ্কর বড়ুয়া রুমি]