অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রোববার সুনামগঞ্জের শাল্লায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “কারও যদি কোনো গাফলতি থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
বন্যায় ফসলহানীর সুযোগ নিয়ে কেউ যদি দেশের বাজারে খাদ্যশষ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ সহায়তার পাশাপাশি আগামী মওসুমের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ দেওয়া হবে। মৎস্যজীবী ও কৃষকদের ঋণের সুদের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। গোখাদ্যের যেন অভাব যেন না হয়, সে ব্যবস্থাও সরকার নেবে।
গতমাসের শেষ দিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা তালিয়ে যায়। দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিকে দায়ী করে ঢাকায় মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ হয় সে সময়।
বোরো ধান কাটার এই মওসুমে হঠাৎ এই বন্যায় লাখ লাখ কৃষকের মাথায় হাত পড়ে। এরপর পানি বিষাক্ত হলে মাছ মরা শুরু হয়; তারপর মরতে থাকে হাঁস। পরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল ওই এলাকা ঘুরে পানি পরীক্ষা করে বলে, প্রাথমিকভাবে ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার।
ছয় জেলায় মোট ২১৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; সুনামগঞ্জে তিন হাজার ৯০২টি হাঁস ও চারটি মহিষ মারা গেছে।
হাওরের পরিস্থিতি দেখতে প্রধানমন্ত্রী সকালে শাল্লা উপজেলা সদরে পৌঁছানোর পর স্থানীয় শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা জানান, হাওরের বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য তিন হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতি পরিবারকে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকার মানুষকে শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছ, গবাদীপশু ও হাঁস-মুরগি পালন বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।
হাওরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের নাব্যতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, খালগুলো যেন বেশি পানি নিষ্কাশন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
হাওরে কী ধরনের বাঁধ দেওয়া যায়, আদৌ বাঁধ লাগবে কিনা, দিলে পরে আবার প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কিনা- এসব বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখার কথাও তিনি বলেন।
“প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।হাওরের সম্ভাবনাকেও আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের সব জেলায় ভূমিহীনদের বিনা পয়সায় ঘর তুলে দেওয়া হবে, কেউ ভূমিহীন থাকবে না।
“কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। যা যা মানুষের প্রয়োজন সব আমরা দেব। সবাই যাতে সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারেন তা আমরা করেব। হাওর এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে আবাসিক স্কুল করব।”
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও স্থানীয় সাংসদ জয়া সেনগুপ্তা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।