ময়লার ভাগাড়ে বন্ধ ফুটপাত

মিনিট পাঁচেকের পায়ে হাঁটা রাস্তা ঘেঁষে স্তূপাকারে ছড়িয়ে আছে ময়লা, এর মাঝেই ছাগলের ‘খামার’- দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রাজধানীর কোনো প্রধান সড়ক সংলগ্ন ফুটপাত।

কাজী নাফিয়া রহমান নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2017, 04:27 AM
Updated : 29 April 2017, 05:37 AM

রাজধানীর কালশী মোড় থেকে বিহারি ক্যাম্প সংলগ্ন সাগুফতা রোডে ফুটপাতের এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ পথচারীরা।

বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা ‘জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে’ ওই ফুটপাতে ময়লা ফেলছেন বলে দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, কালশী মোড় থেকে ৫০০ গজের মধ্যেই ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ময়লা ফেলার জন্য সিটি করপোরেশনের একটি ডাস্টবিন রয়েছে।

যথাযথভাবে ময়লা ফেলা নিয়ে ক্যাম্প বাসিন্দাদের বারবার বলা হলেও তারা তা শুনছে না বলে দাবি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের।

ক্যাম্প বাসিন্দাদের অসহযোগিতায় ব্যস্ত এ রাস্তার ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যর্থ হয়ে ময়লা না সরানোকেই ‘কঠোর ব্যবস্থা’ বলছে তারা।

বৃহস্পতিবার সাগুফতা সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কালশী মোড় থেকে সাগুফতা রোড ধরে একটু সামনে এগোতেই প্রশস্ত ফুটপাত। কিন্তু পুরো ফুটপাতে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই, ফলে বাধ্য হয়েই পথচারীরা হাঁটছেন রাস্তা ধরে।

কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের পাশের এ ফুটপাতের ওপরেই ক্যাম্পসহ আশপাশের বাসিন্দারা নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। রাস্তার দুইপাশেই অন্তত চারটি স্থানে ময়লা ফেলে বড় স্তূপ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী, যা ছড়িয়ে পড়ায় পুরো ফুটপাতই এখন ময়লার দখলে।

ময়লার ফাঁকেই চলছে ছাগল পালনের কাজও; আর তা নির্বিঘ্ন করতে নানা প্রতিবন্ধক দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে ফুটপাতের দুইপাশের পথও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সপ্তাহে এক-দুইবার সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরতরা ময়লা নিয়ে যান। ফলে জমে থাকা ময়লায় ফুটপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তারাও।

কালশী মোড় থেকে মিরপুর ডিওএইচএস পর্যন্ত এ রাস্তাটি বছর আটেক আগে নির্মাণ করা হয়। কালশী মোড় থেকে স্টাফ রোড এমইএস পর্যন্ত মাটিকাটা সড়ক চালু হলে এ পথে দ্রুতগতির গণপরিহন চলাচলও বাড়ে। মিরপুর থেকে উত্তরামুখী বাসসহ সব ধরনের সব যানবাহন শুরুতে পূরবী থেকে কালশী রোড হয়ে গেলেও বর্তমানে সিরামিক রোড ঘুরে সাগুফতা রোড ধরে কালশী মোড়ে যায়।

সাগুফতা রোড হওয়ার পর থেকেই চার থেকে পাঁচটি জায়গায় লোকজন ময়লা ফেলে বলছেন স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান।

তিনি বিডিনিউজি টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা ময়লা ফেলার জায়গা না। কিন্তু এখানকার লোকজন নিজেরাই এটাকে ডাস্টবিন বানায়া রেখে দিছে।”

অন্যদিকে স্থানীয়দের ময়লা ফেলায় নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এখন কার্যত ওইস্থান থেকে ময়লা নেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ময়লার দুর্গন্ধ নিয়েই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে পথচারীদের।

বঙ্গবন্ধু কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা রোজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ রাস্তায় বাসসহ নানা গাড়ি চলাচল করে। মেইন রোডে হাঁটাটা বেশ রিস্কি; কিন্তু কিচ্ছু করার নাই, যেহেতু ফুটপাত দখল করে ময়লার ভাগাড় করে ফেলেছে।”

মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের বাসিন্দা ফরিদউদ্দিন হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এদিক দিয়ে প্রতিদিনই যেতে হয়। কিন্তু ফুটপাত তো ব্যবহার করতে পারি না।”

তিনি বলেন, “ফাঁকা রাস্তা থাকায় এ রাস্তায় সবসময় প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চলে। ফলে রাস্তা দিয়ে হাঁটাটা ঝুঁকিপূর্ণ। আর দুর্গন্ধ তো আছেই। এভাবে একটা ফুটপাত থাকতে পারে না, কর্তৃপক্ষের বিষয়টি বোঝা উচিত।”

ফুটপাতে ময়লা ফেলার বিষয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দা নাসিমন বেগম বলছেন, ময়লা ফেলার কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা এসব স্থানে ময়লা ফেলেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম এ রাজ্জাক তার অসহায়ত্বের কথা জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সমস্যাটা আমরা জানি, তার সমাধানেরও চেষ্টা করেছি।

“আসলে ওটা আমাদের ময়লা ফেলার কোনো স্পট না। ওখানকার কাউন্সিলর দিয়েও আমরা ওখানে ময়লা ফেলা বন্ধের চেষ্টা করেছি। এরপরও এটা বন্ধ না হওয়ায় কঠোর হয়ে ময়লা শিফট করাও বন্ধ করেছি, কিন্তু এটা বন্ধ হচ্ছে না।”

রাজ্জাক বলেন, “তাদের তো সুবিধা দেওয়া যাবে না। কালশী মোড় থেকে ঠিক ৫০০ গজ দূরে মেইন রোডের উপরে একটি ময়লা ফেলার স্থান রয়েছে। ওরা যদি ওদের ওয়েস্টটাকে ভ্যান সার্ভিসের হেল্প নিয়ে ওখানে পৌঁছে দেয়, তাহলে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।”

তবে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ভ্যানের মাধ্যমে ময়লা ফেলায় আগ্রহ নেই বলছেন স্থানীয় কয়েকজন, যাদের মধ্যে ক্যাম্পের বাসিন্দারাও রয়েছেন।

সাগুফতা রোড করার পর রাস্তার পাশে ময়লা ফেলার স্থান নিজেরাই ঠিক করে নেয় জানিয়ে দোকানি ফারুক আহমেদ বলেন, “তারা যেন ওই ডাস্টবিনে ভ্যানের মাধ্যমে ময়লা পৌঁছে দেয় সেজন্য সিটি করপোরেশন অনেকবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা তা করেনা।”

ময়লা অপসারণে ভ্যান ব্যবহারে অনাগ্রহের পেছনে সার্ভিস চার্জ কারণ জানিয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দা আশরাফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভ্যান শুধু একটা নির্দিষ্ট সময় ময়লা নিয়ে যায়, কিন্তু আমাদের লোকজনের মধ্যে যখন খুশি মর্জিমাফিক ময়লা ফেলার ভাব আছে।”

ওই ফুটপাতে ময়লা ফেলা বন্ধে ব্যর্থ হয়ে আপাতত হতোদ্যম হলেও আগামী দিনে প্রয়োজনে পাহারাদার বসানোর কথা বলছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম এ রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “আমি আমাদের স্টাফদের নিষেধ করেছিলাম ওখান থেকে ময়লা যাতে না সরায়। নিজেদের ইচ্ছামতো যেখানে ইচ্ছা সেখানে ময়লা ফেলে রাখবে? নির্ধারিত জায়গায় ময়লা ফেলতে হবে। এটাই আমাদের টার্গেট।

“গত সপ্তাহে বিহারি নেতাদের আমার সাথে এসে কথা বলতে বলেছি। তাদের ‍লিডার এসে কথা বলার পরও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তখন আমরা আরও কঠোর হব। প্রয়োজনে সেখানে পাহারাদার বসাব।”