তিনি অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জড়িত, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পেশাজীবীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “একটা ছেলেমেয়েও যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে না যায়।”
বুধবার বিকালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা।
সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষ হওয়ার পর মৌলভীবাজার ও কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশের অভিযানের মধ্যে এই আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
ধর্মের নামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম। নিরীহ মানুষকে হত্যার কথা বলে নাই। নিরীহ মানুষকে হত্যা করা আর আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া এটা কখনও ইসলাম সমর্থন করে না।
“আজকে যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে গেছে, তারা ইসলাম ধর্মের বদনাম করছে। ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করছে, হেয় করছে, বিশ্বব্যাপি মুসলমানদের মান-সন্মান নষ্ট করে দিচ্ছে।”
এই পথ যাতে পরিহার করা হয় সেইভাবে ব্যবস্থা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের সময় দল দুটি জঙ্গিবাদ ও ধংসাত্মক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকে। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার প্রসঙ্গও তোলেন শেখ হাসিনা।
“তারা একদিকে ধর্মের কথা বলে আর অন্যদিকে কোরান শরীফ পোড়ায় এবং মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে সেটাও আমরা দেখেছি। এই তিন বছরে ৫০৮ জনকে আগুণে পুড়িয়ে তারা হত্যা করেছে।”
তাদের রাজনীতি কি- এ প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পোড়ানো। হুকুম দেয় কে? ওই গুলশানে এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে খালেদা জিয়া হুকুম দেয়।”
সমাবেশে তার শাসনামলে দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী এসময় আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট চান।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে। আমরা যাতে আমাদের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে পারি তার জন্য আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকায় ভোটে দেবেন? হাত তুলে বলেন।”
জনসভায় আসা সবাই তখন নৌকায় হাত তুলে সমর্থন জানান।
শেখ হাসিনা নৌকা মার্কার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইতে দলীয় নেতাকর্মীদেরও আহ্বান জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুর রহমান প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
উদ্বোধন
ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, পল্লী কবি জসীম উদ্দীন সংগ্রহশালা নির্মাণ প্রকল্প, ফরিদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নির্মাণ প্রকল্প, শিশু একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, জেলা মুক্তিযোদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্প।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
কুমার নদ পুনঃখনন প্রকল্প, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আলফাডাঙ্গা এর নির্মাণ প্রকল্প, ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, পুলিশ অফিসার্স মেস নির্মাণ প্রকল্প, সালথা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, চন্দ্রপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, ফরিদপুর এর ছাত্রী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্মাণ প্রকল্প, ১৫০০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হল রুম নির্মাণ প্রকল্প (জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত), সালথা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প, সদরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প।