বিচারকদের চাকরিবিধি রাষ্ট্রপতির কাছে: আইনমন্ত্রী

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা রাষ্ট্রপতির দেখা শেষ হলেই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 10:37 AM
Updated : 28 March 2017, 10:37 AM

গেজেট প্রকাশে মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে এক সপ্তাহ সময় পাওয়ার পর দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয় না বিচার বিভাগের সাথে নির্বাহী বিভাগের কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কন্ডাক্ট রুলসের (আচরণবিধি) ব্যাপারে দুই পক্ষেরই বক্তব্য ছিল, সেটা থাকা স্বাভাবিক। সেই বক্তব্যগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে নিরসন হয় সেই চেষ্টা করা হয়েছে। সেইভাবে এটা নিরসন হচ্ছে।

“রাষ্ট্রপতির কাছে সেটা রয়েছে, তিনি এটা দেখতে চেয়েছেন, তিনি যে মুহূর্তে দেখা শেষ করে আমাদের কাছে দিয়ে দিবেন, সেই মুহূর্তেই আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত রায়ের পর আইন মন্ত্রণালয় ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার’ খসড়া প্রস্তুত করে।

কিন্তু গত বছর ২৮ আগাস্ট এক শুনানিতে ওই খসড়াকে রায়ের পরিপন্থি বলে তা সংশোধন করে সরকারকে বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।

এরপর দফায় দফায় সময় নিয়েও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে সরকার বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবকে তলব করে আপিল বিভাগ।

দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি ‘সিদ্ধান্ত’ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে একধরনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়।

ওই দুই সচিব পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে “রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।”

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ। এরপর মঙ্গলবার ধরে আরও ছয় দফায় প্রায় তিন মাস সময় পেল সরকার।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মুফতি হান্নাসহ তিনজনের ফাঁসির দণ্ড মওকুফের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে এসেছে।

“রায়ের কপি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি তার যে কাজ সেটা তিনি করবেন। রাষ্ট্রপতি সব কিছুই গভীরভাবে অনুধাবন করেন। তিনি সেটা শেষ করলে তারপর জেলকোড অনুসারে রায় যেভাবে কাযকর করার সেইভাবে করা হবে।”

হোটেল সোনারগাঁওয়ে অধস্তন আদালতের ৫৪০ জন বিচারককে প্রশিক্ষণ প্রদানে আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

স্মারকে আইন ও বিচার বিভাগের পক্ষে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এর উপাচার্য অধ্যাপক বার্নি গ্লোবার স্বাক্ষর করেন।

‘আদালত ব্যবস্থা শক্তিশালী করণে আইন ও বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ও বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার সেলী আনে ভিনসেন্ট।