স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও রয়ে গেছে পাকিস্তানি ভাবধারা: হাসান ইমাম

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও বাংলাদেশে এখনও পাকিস্তানি ভাবধারা রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2017, 06:05 PM
Updated : 26 March 2017, 06:05 PM

রোববার স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছি আমরা। কিন্তু এখনও সেই পাকিস্তানি ভাবধারা রয়ে গেছে।

“আমরা নানাভাবে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছি। যে চার মূলনীতি নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তার কোনোটি জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত হতে দেখি না।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আত্মসমালোচনা করে নিজেদের সংশোধন করার উপর জোর দেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক হাসান ইমাম।

সাম্প্রদায়িকতা রুখতে ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’র আহ্বান জানান তিনি।

স্বাধীনতা দিবসে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন শুরু হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার মধ্য দিয়ে।

তারপর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে একাডেমির আয়োজনে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ, আবু বকর সিদ্দিক, আশরাফ উদাস, আরিফ রহমান ও কহিনুর আক্তার গোলাপী, আবৃত্তি করেন শিল্পী মাসকুরে সাত্তার কল্লোল, মাহমুদা আক্তার ও ডালিয়া আহমেদ, সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে দীপা খন্দকারের পরিচালনায় দিব্য ও রনি চৌধুরীর পরিচালনায় নৃত্যাঙ্গন এবং সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ।

দিনব্যাপী আয়োজনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে উর্মিমালা সরকার মুন্সীর পরিচালনায় পরিবেশিত হয় সমসাময়িক নৃত্য ‘মহাকাব্যের অপেক্ষায়’। ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় নৃত্যনাট্য ‘সূর্যমুখী নদী’ পরিবেশন করে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শিশুদের আনন্দ আয়োজন

স্বাধীনতা দিবস ও একবিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী স্বাধীনতা উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল রোববার।

এদিন সকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়। নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজনের শিশু শিল্পীরা। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি করেছে কল্পরেখার খুদে বাচিকশিল্পীরা।

সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের লোকনাট্য গোষ্ঠী মঞ্চস্থ করে শান্তি রঞ্জন দে রচিত ও তাপস সরকার রচিত যাত্রাপালা ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে বিকেলে মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থাপন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শহীদ মিনারে স্বাধীনতা উৎসব 

‘লাখো শহীদের আত্মদান অফুরন্ত শক্তির আধার’ প্রতিপাদ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত তিন দিনের স্বাধীনতা উৎসব শেষ হল রোববার। এদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় উৎসব।

শহীদ মিনারে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, মরমী লোকগীতি শিল্পী গোষ্ঠী, সুরতাল ও দৃষ্টি। একক কণ্ঠে গান শোনান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, আবিদা রহমান সেতু ও সঞ্জয় কবিরাজ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে বাকশিল্পাঙ্গন, ত্রিলোক, আবৃত্তি একাডেমি, ঢাকা স্বরকল্পন ও বাকশিল্পাঙ্গন। একক আবৃত্তি পরিবশেন করেন রূপা চক্রবর্তী, হাসান আরিফ ও মাহিদুল ইসলাম। শিশুতোষ পরিবেশনায় ছিল বহ্নিশিখা শিশুদল। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষ ও দিব্য। পথনাটক পরিবেশন করে আরণ্যক ও মৈত্রী থিয়েটার।

ছায়ানটের আয়োজন

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। পরিবেশিত হয় একক ও সম্মেলক কণ্ঠের গান। সঙ্গীতানুষ্ঠান শেষে প্রদর্শিত হয় মানযারে হাসীন মুরাদ নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘এখনো একাত্তর’। 

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সরব হয়ে ওঠে সেগুন বাগিচার কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা প্রাঙ্গণ। 

বিকেলে কচি-কাঁচা মিলনায়তনে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কামাল লোহানী। তিনি শিশু কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা শোনান।

ভিকারুননিসা নূন স্কল এন্ড কলেজ

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ ৭১’ অবিনাশী সত্ত্বা সংগঠনটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রমনা এলাকার পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বাগতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সকালে বেইলী রোডস্থ মূল প্রাঙ্গণে চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিয়োগিতার আয়োজন করে। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

বাহাদুর পার্কে স্বাধীনতা উৎসব

মুক্তদ্বীপ ও বঙ্গবন্ধু শিশু মঞ্চের আয়োজনে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ‘পুরান ঢাকা স্বাধীনতা উৎসব’। এ উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। অনুষ্ঠানে ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পতাকা মিছিল, মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও ২০টি সংগঠনের পরিবেশনায় নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি ও পথনাটক।