নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ সাজাচ্ছে নতুন ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক কাজের তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2017, 07:21 AM
Updated : 19 March 2017, 07:21 AM

আগামী বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিশনের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটের আগে সংসদ নির্বাচনের অন্যতম পাঁচটি অনুষঙ্গকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৮ সালের অগাস্টের মধ্যে সেসব কাজ শেষ করার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান গত সপ্তাহে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইসি সচিবালয়ের সব কর্মকাণ্ডকে কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রাখা হয়েছে। এ জন্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছি আমরা। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কাজগুলোর তালিকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি।”

তিনি জানান, সংসদ নির্বাচনের মতো বড় কর্মযজ্ঞ শেষ করতে ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করা হচ্ছে। আরও কয়েক দফা বৈঠকের পর কাজের তালিকা ও বিস্তারিত সময়সূচি কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।

কমিশনের অনুমোদন পেলেই কাজের তালিকা ধরে ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে মোখলেসুর রহমান জানান।

ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোটের কাজের সার্বিক প্রস্তুতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনারও প্রস্তাব রাখবেন তারা। মার্চের মধ্যেই ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের রূপকল্প’ চূড়ান্ত করা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছর নভেম্বরে-ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ধরে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগে (২০১৮ সালের অগাস্টের মধ্যে) সব ধরনের কাজ শেষ করার রূপরেখা থাকছে রোডম্যাপে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে। তার আগে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয় ২ নভেম্বর।

সর্বশেষ দশম সংসদের অধিবেশন ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়ায় এবার মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে।

ইসি সচিবালয়ের ‘কর্মপরিকল্পনা তৈরি’ সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী আইনের সংস্কার ও সীমানা পুননির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশের প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়া রোডম্যাপে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন এবং অগাস্টের মধ্যে ভোটার তালিকার মুদ্রণ শেষ করার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে সেখানে।

এ চারটি প্রধান কাজ সামনে রেখে এ বছরের মধ্যেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নতুন ইসির প্রথম দফা সংলাপের প্রস্তাব রেখেছে ইসি সচিবালয়।

এছাড়া নির্বাচনের বাজেট, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী সামগ্রী প্রস্তুত, দেশি-বিদেশি সংস্থা ও দলের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রচার কাজের বিষয়েও রোডম্যাপে ইসির বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকছে। 

আইন সংস্কার: জুলাইয়ে আইন-বিধির সংশোধনী আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ; অগাস্টে প্রস্তাবিত আইন ও বিধির খসড়া প্রণয়ন; আলোচনার জন্যে চূড়ান্তকরণ এবং আইন সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে এজেন্ডা তৈরি ও সময়সূচি নির্ধারণ।

সংলাপ: সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা; নভেম্বরে সংশোধিত আইন-বিধি সন্নিবেশ করতে আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র; ডিসেম্বরে নির্বাচনী আইন-বিধি সংশোধন চূড়ান্ত করা।

নির্বাচনী সীমানা: অগাস্টে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য জিআইএস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়; সেপ্টেম্বরে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার খসড়া তালিকা প্রণয়ন; অক্টোবরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের খসড়ায় ইসির অনুমোদন; প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ ও এর উপর দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান; নভেম্বরে সংসদীয় এলাকা নিয়ে শুনানি নিষ্পত্তিকরণ; ডিসেম্বরে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার নতুন সীমানা চূড়ান্ত করে গ্রেজেট প্রকাশ।

দল নিবন্ধন: অক্টোবরে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান; আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নতুনদের নিবন্ধন আবেদনের নিষ্পত্তি।

ভোটার তালিকা: আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও খসড়া প্রকাশ; আপত্তি-নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ; ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার ছবিসহ ভোটার তালিকা, ছবি ছাড়া সিডি প্রস্তুত; জুনে মাঠ পর্যায়ে যাচাইয়ের পর ভোটার তালিকা মুদ্রণ; অগাস্টে প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকা, সিডি প্রস্তুত এবং মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ।

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্ষমতাসীন দল সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সমালোচনা করে আসছে।

অবশ্য সিইসি বরাবরই বলেছেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্যে তার কমিশন ‘আপসহীন ও নিরপেক্ষ’ থাকবে। তাদের কর্মকাণ্ডে জাতীয় নির্বাচনের আগেই জনগণের মধ্যে ‘আস্থা তৈরি হবে’।

নতুন ইসির অন্য চার কমিশনার হলেন মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।