আত্মহত‌্যার প্ররোচনা: সিফাতের স্বামীর ১০ বছর জেল, বাকিরা খালাস

রাজশাহী বিশ্ববিদ‌্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতের মৃত‌্যুকে ‘আত্মহত‌্যা’ বিবেচনা করে তাতে ‘প্ররোচনার’ দায়ে তার স্বামী মোহাম্মদ আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2017, 07:34 AM
Updated : 27 Feb 2017, 09:51 AM

সিফাতের শ্বশুর অ্যাডভোকেট হোসেন মোহাম্মদ রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নজলী এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান জোবাইদুর রহমান বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

সোমবার ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব‌্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ আসামিদের উপস্থিতিতে দুই বছর আগের আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

সিফাতের স্বামী আসিফকে রায়ে ১০ বছরের সাজার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ওই ঘটনায় সিফাতের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে জানানো হয়েছে রায়ে।

রায় শুনে আদালতে উপস্থিত সিফাতের মা ফারজানা বানু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মামলার বাদী সিফাতের চাচা সাবেক ব‌্যাংকার মিজানুর রহমান এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে আপিল করবেন। সেখানে সর্বোচ্চ সাজার আবদেন করা হবে।

রায় ঘোষণার আগে আসিফকে কারাগার থেকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। জামিনে থাকা বাকি তিন আসামিও আদালতে হাজির হন।

রায়ের আলোচনায় মৌখিকভাবে বিচারক বলেন, “পুলিশ এ ঘটনার প্রকৃত রহস‌‌্য উন্মোচন করতে ব‌্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি হত‌্যা না আত্মহত‌্যা সেটা নিয়ে পুলিশ নিজেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। প্রশ্নের সুরাহা না করেই পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। যৌতুকের কারণে মারধরের ঘটনা এখানে প্রমাণিত হয়নি।”

রায়ের আগে বিচারক বলেন, “এটি একটি চাঞ্চল‌্যকর মামলা। বেশি গুরুত্ব দিয়েই পড়েছি। আমার কাছে যতটুকু মনে হয়েছে, যে মেধা আছে, সে অনুযায়ী এ রায় তৈরি করেছি।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্দশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন সিফাত। ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। ওই তরুণীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সিফাত ‘আত্মহত্যা করেছেন’ বলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রথমে দাবি করলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পান চিকিৎসক। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতের মৃত্যু হয়েছে আঘাতজনিত কারণে।

প্রথমে মামলাটির তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে থাকলেও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী সুপার আহমেদ আলী গতবছর ২৩ মার্চ চারজনকে আসামি করে রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে বলা হয়, আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যু হলেও তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া প্রথম ময়নাতদন্তের চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান ‘আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর’ বিষয়টি গোপন করে আত্মহত্যার ‘মিথ্যা প্রতিবেদন’ দেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ‘যৌতুকের দাবিতে হত্যার’ অভিযোগ আনা হয় অভিযোগপোত্র। বাদীপক্ষের আবেদনে গত ১২ জুলাই রাজশাহী থেকে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

এ ট্রাইব‌্যুনালের বিশেষ কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমান জানান, বিচারক রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জনের মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য শুনে এ মামলার রায় দিয়েছেন।