উগ্রবাদীদের কোনো ধর্ম নেই: জাপানে মাওলানা মাসঊদ

উগ্রবাদীদের কোনো ধর্ম থাকে না মন্তব্য করে জাপানে এক কর্মশালায় মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেছেন, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য ইসলামকে নিজের মতো ব্যাখ্যা করে ফায়দা লুটছে তারা।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 06:38 PM
Updated : 20 Jan 2017, 03:10 AM

এরা ‘স্রেফ সন্ত্রাসবাদে’ বুঁদ হয়ে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শোলাকিয়ার ইমাম।

এশিয়ার সাত দেশের প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘এশিয়ায় সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমন’ বিষয়ক কর্মশালায় বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।

জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড ‘ইসলামের জিহাদ’ হতে পারে না মন্তব্য করে জামায়াতুল উলামার সভাপতি মাওলানা মাসঊদ বলেন, “জিহাদ পবিত্র শব্দ। কুরআনে যে জিহাদের কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে উগ্রবাদীদের সম্পর্ক নেই। বরং গণমাধ্যমে তাদের জিহাদি উল্লেখ করে পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

“জিহাদ তাকে বলে, যা আল্লাহর দেওয়া কুরআনের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে নিজের নফসের (আত্মার) সাথে যুদ্ধ করে। খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।”

“কুরআনে সামান্য পিঁপড়া মারা কিংবা গাছের পাতা ছেঁড়া যদি নিষেধ করা হয়ে থাকে তাহলে এই উগ্রবাদীরা মানুষ মেরে কীসের জিহাদ করে?” প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জঙ্গিদের আদর্শ উগ্রবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আদর্শের সঙ্গে মিলে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলাম মানবতার কথা বলে, সেখানে পৃথিবীর কোনো সৃষ্টির বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করার কথা বলা হয়নি।

“ইসলামের সঠিক জ্ঞানের অভাবে জঙ্গিবাদের মতো বিষ বিশ্বব্যাপী ছড়াচ্ছে। ধর্মকে নিজের সম্পদ ভেবে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আর তার পিছনে রয়েছে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ।”

বুধবার টোকিওতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক জঙ্গি ও অপরাধ দমন বিভাগের আয়োজনে শুরু হওয়া এই কর্মশালায় বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স ও মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।

 

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ দমনে করণীয় ঠিক করতে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা বাংলাদেশ থেকে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়।

দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা অবধি চলা কর্মশালায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য দেন মাওলানা মাসউদ।

কর্মশালার শুরুতে তিনি গত বছর ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজনে জঙ্গি হামলায় নিহত সাত জাপানিসহ অন্যদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন।

মাওলানা মাসঊদ বলেন, “গুলশানে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে যে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে প্রায় উগ্রবাদীদের ডানা ছেটে ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে কোন উগ্রবাদী সুবিধা করতে না পেরে ত্রাস সৃষ্টিতে তৎপর হয়ে উঠেছে।”

জঙ্গি দমনে আলেম-ওলামাদের দেওয়া ‘ফতোয়া’ দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের দেওয়া ফতোয়া বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। শত শত ইসলামী চিন্তাবিদের করা এই ফতোয়া জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।”

 

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, “সন্ত্রাসের যে কোনো ধর্ম নেই তার প্রমাণ মিয়ানমার। সেখানে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর যে হামলা-নির্যাতন-বর্বরতা চলছে তা কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।”

বৌদ্ধ ধর্মকে শান্তির ধর্ম বিবেচনা করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শান্তির মৌলিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে মিয়ানমারে উগ্রবাদীরা মুসলমানদের ওপর যেভাবে চড়াও হয়েছে তা মানবতা রক্ষায় কখনও সমর্থনযোগ্য নয়।”

মিয়ানমারের ‘বন্ধু’ হওয়ায় জাপান সরকারের এই ধরনের সন্ত্রাস মোকাবেলায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত বছর সেপ্টেম্বরে এশিয়ান সম্মেলনে এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য সন্ত্রাস দমনে ৪৫ বিলিয়ন ইয়েনের একটি তহবিল ঘোষণা করে জাপান সরকার। আগামী তিন বছরে এই অর্থ দিয়ে এশিয়ার সাতটি দেশে প্রায় ২২ হাজার কর্মী জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করবে।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক জঙ্গি ও অপরাধ দমন বিভাগের প্রতিনিধি ইউজি কুমামামরুর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া এই কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে শরীফ হেদায়েত উল্লাহ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামহারী, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও নিরাপত্তা সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালক রুপালি জেসওয়াল, মিয়ানমার পুলিশের বিশেষ শাখার ও নাংও, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মুহাম্মাদ রুমাইজ বিন উয়ান, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি আবু হেনা মোস্তফা জামান, সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নুলিয়ানা বিনতে সাইরি, ফিলিপিন্সের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সহকারী পরিচালক রুফিনো লোপেজ, ইউএনডিপির ডলগর সোলানগো, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক শিনগো মিয়ামতো ও দেশটির জাতীয় পুলিশ সংস্থার প্রতিনিধি দাইসুকে নাগানো উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ জঙ্গিবাদ দমনে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।