সমৃদ্ধি অর্জনে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছাড়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

সব ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সব নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2016, 01:31 PM
Updated : 28 Oct 2016, 01:31 PM

শুকরবার বিকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসবোত্তর বিজয়া সম্মিলন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এই আহ্বান জানান।

সংবিধানে সব ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করার ব্ষিয়টি স্মরণ করিয়ে আবদুল হামিদ বলেছেন, “ধর্ম-বর্ণ, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। আমাদের সবার অধিকার সমান।

“ধর্মভিত্তিক বা সামাজিক বিভাজনের অশুভ রাহুগ্রাস থেকে জাতিকে মুক্ত রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় বা আদর্শিক জঙ্গিবাদ, অসহনশীলতা ও গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের কর্তব্য।”

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে ওই বিজয়া সম্মিলনীতে সব ধর্মের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সব ধর্মের অহিংস বাণী তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সকল ধর্মই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মানবজাতির জয় ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন ধর্মের আচরণে বা চর্চায় পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু মূল সূর ধ্বনিত হয় একই চেতনায়।

“ধর্মে-ধর্মে কোনো বৈষম্য নেই, সংঘাত নেই। যারা এই অন্তর্নিহিত সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ, তাদের কারণেই ধর্মের গ্লানি দেখা দেয়। এর মূল্য দিতে হয় মানবজাতিকে।”

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে হিংসা, বিদ্বেষ আর ধ্বংস এক ভয়াবহ অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, “এ হত্যা আর ধ্বংস প্রতিরোধে আমাদেরকে ধর্মের অহিংস ও শান্তির অমিয় বাণী বিশ্ব জনতার কাছে তুলে ধরতে হবে। হিংসা নয়, মৈত্রী হোক আমাদের এগিয়ে চলার পাথেয়।”

সব ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী আয়োজনের প্রশংসা করে করেন রাষ্ট্রপতি।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতাও এসেছে।”

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বে প্রশংসিত হওয়া বাংলাদেশের লড়াই ও অর্জন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। দেশকে একটি মজবুত ও স্থায়ী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

“এসব কর্মপরিকল্পনার সুফল দেশবাসী ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।”

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করে এ-জন্য দেশপ্রেম, জাতীয় ঐক্য ও সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব দেন রাষ্ট্রপতি।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বুদ্ধ প্রিয় মহাথের, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বক্তব্য রাখেন।