ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ‌আদর্শবান হতে আহ্বান শেখ হাসিনার

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আদর্শবান নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 02:55 PM
Updated : 26 Oct 2016, 07:15 PM

বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিতে নিজের প্রচেষ্টা তুলে ধরে ভবিষ‌্যতে তা ধরে রাখার লক্ষ‌্যে দলের সহযোগী সংগঠনের প্রতি নিজের এই ভরসার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “উন্নত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে আমরা বাংলাদেশকে গড়তে চাই। কারণ আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলতে হবে।

“সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো নেতৃত্ব আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে আদর্শবান নেতা হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলবে।”

সেজন‌্য তৈরি হতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পড়াশোনার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একটু পড়াশোনা করতে হবে। ইতিহাস ভালোভাবে পড়তে হবে।”

মাদক থেকে দূরে থাকতে এবং তরুণ সমাজকে দূরে রাখতেও সংগঠনটির সদস‌্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সাংগঠনিক নেতার স্বীকৃতি দেয় ছাত্রলীগ। ২০০৯ সালে দল ক্ষমতায় যাওয়ার পর ছাত্রলীগের বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে সেই পদ ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। 

ত‌্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লেই জানবে, তিনি কী ভাবে ত্যাগ স্বীকার করে এই সংগঠন গড়ে তুলেছেন।

“মানুষ দল ছাড়ে মন্ত্রী হওয়ার জন্য। আর বঙ্গবন্ধু দল গঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন।”

ছাত্রলীগের কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যেন বিপথে না যায়, তা দেখতে হবে। অসৎ পথে চলার পথ আমাদের না। আমাদের চলতে হবে, একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে।”

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় তাকে সংবর্ধনা দিতে গণভবনে যান ছাত্রলীগ নেতারা। তার হাতে ফুল তুলে দেন সংগঠনটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন।

গণভবনের উন্মুক্ত লনে বসে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শোনার সময় একবার বৃষ্টি নেমেছিল। তার মধ‌্যে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করতে চাইলেও ছাত্রলীগ নেতারা অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত জানান। বৃষ্টির মধ‌্যে বসে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শোনেন তারা। 

অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির বক্তৃতা করেন। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছাত্রলীগের সক্রিয়তাও প্রত‌্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।

ছাত্রলীগ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গৃহহীন মানুষের তালিকা করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “যখন তোমরা বাড়িতে যাবে, কোথাও কোনো মানুষ গৃহহারা আছে কি না বা ভূমিহীন আছে কি না, কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে কি না, আমি তাদের নাম চাই, আমি তাদের হিসাব চাই।”

বিলাসিতায় গা না ভাসানোর পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “আমি রাজনীতিতে নেমে ফ্রেঞ্চ শিফন পরা শুরু করিনি। বিদেশি কাপড় পরতেই হবে, না হলে ইজ্জত থাকবে না- এই দুর্বলতায় আমি ভুগী না।

“আমার তাঁতিরা কিসে খুশি হবে, আমি সেই কথাটা বেশী চিন্তা করি। একটা ফেঞ্চ শিফন পরার থেকে আমার তাঁতির হাতে বোনা একটা শাড়ি পরতে আমি সব থেকে বেশি পছন্দ করি।”

‘সবাই বলে, আপনি কি ম‌্যাজিক জানেন?’

গত সাত বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে যেখানে যাই পৃথিবীর অনেক নেতার সাথে দেখা হয়। বলে বাংলাদেশ একটা বিস্ময়। আমাকে জিজ্ঞাস করে- আপনি কি ম্যাজিক জানেন? কীভাবে বাংলাদেশ এরকম অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে?

“আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক ১১ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ছিল, তখনও প্রবৃদ্ধি ছয় ভাগের ওপর ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।”

দরিদ্রতা নির্মূলের পথে সাফল‌্যের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমি এটুকু বলতে পারি, এক সময় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াত, হাত পাততো

“এখন আর বাংলাদেশকে হাত পাততে হবে না। আমরা আর এখন কাউকে দাতা বলি না, উন্নয়ন সহযোগী বলি। আমরা ঋণ নেই, সুদসহ শোধ দেই।”

“আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব না কেন? পারব না কেন? অবশ্যই পারব,” দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন শেখ হাসিনা।

পঁচাত্তরে বাবা-মা আর ভাইদের মৃত্যুর পর বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটানোর কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন‌্যা বলেন, “আমাদের ছয় বছর ফিরতে দেওয়া হয়নি। আমাদের কেউই ছিল না বলতে গেলে।

“তবে যেখানেই থাকি, কারও কাছে আমরা নত হইনি। যেভাবে চলার জীবন, সেভাবেই চালিয়েছি। সব সময় দেশের সম্মানের কথা চিন্তা করেছি।”

পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের উপর অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই অপবাদ….আমি আর আমার পরিবার বলে না, আমার দেশের জন্য অসম্মানের ছিল। আমি সেটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছিলাম। যে কথা বলেছিলাম, আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু বানাব। আমরা তা বানিয়েছি।”

সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো রকম সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। এটা আমরা ঘোষণা দিয়েছি। বাংলাদেশ হবে, দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ, শান্তিপূর্ণ দেশ।”

পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সবাইকে এখন থেকে তৎপর হতে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, অর্থ পাচারকারী ও এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীরা কোনোভাবেই যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তারা ক্ষমতায় এলে আবার এসব অপকর্ম ঘটাবে।”