তিনি বলেন, “পাকিস্তানে যারা যাতায়াত করছেন, তাদের বিষয়ে সরকারের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত।”
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিক্রিয়া নিয়ে শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
‘জাতীয় দায়বদ্ধতা এবং তুরস্ক ও পাকিস্তানের অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ওই দুই দেশের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের চেতনা ও অস্তিত্ব বিরোধী আখ্যা দিয়ে তার তীব্র প্রতিবাদ জানায় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
এই আলোচনায় অংশ নিয়ে আশরাফুল দৌলা ছাড়াও আরও কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত পাকিস্তান ও তুরস্কের এই অবস্থান কঠোর সমালোচনা করেন।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এটিএম নজরুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তুরস্কের এরদোয়ান সরকারের ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরেন।
“বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে মুজাহিদ, নিজামী, সাকা চৌধুরীরা সফরে গেলে তার অনেক কিছুই আমাকে জানানো হত না।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফারুক বলেন, “পাকিস্তান ও তুরস্ক তাদের বাংলাদেশি দোসরদের হারিয়ে এখন মায়াকান্না কাঁদছে। মরিয়া হয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভ্রান্তিকর সব তথ্য ছড়াচ্ছে।”
কূটনৈতিক প্রক্রিয়া আরও জোরদার করে বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির ইতিহাস সঠিকভাবে প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন পাকিস্তানকে ‘পশ্চাৎপদ’ ও ‘অকার্যকর’ রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, “তাদের গর্ব ছিল, তাদের সেনাবাহিনীকে নিয়ে। মুসলিম বিশ্বের একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী যখন পরাজিত হল, তখন গর্ব ভেঙে চুরমার হল। সে পরাজয়ের শোধ নিতেই মরিয়া তারা কখনো বাংলাদেশের উন্নয়নকে মেনে নিতে পারেনি।”
বৈঠকের শুরুতে মূল প্রবন্ধে সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবীব বলেন, “এসব অবাঞ্ছিতভাবে আলোচনা-সমালোচনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা, আইনের সীমাবদ্ধতাসহ বিচারিক মানের প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের জাতীয় দায়বদ্ধতার বিষয়টিকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করার চেষ্টা হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতাবিরোধীদের ‘শহীদ’ ও ‘সাচ্চা দেশপ্রেমিক’ অভিহিত করায় পাকিস্তানের সরকার, মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
“এসব প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান আসলে কী প্রমাণ করতে চায়? প্রথমত, দেশটি মনে করে ৪৫ বছর পরেও বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তানই আছে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান কি বাংলাদেশের মাটিতে তাদের ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের শোধ নিতে চায়? তৃতীয়ত, দেশটি কি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? চতুর্থত, দেশটি কি গোপনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে সমর্থন দিয়ে চলেছে? আমাদের এখন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমালোচনায় পাকিস্তান ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ‘অপব্যাখ্যা’ চালিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন হারুন হাবীব।
তিনি বলেন, যুদ্ধ পরবর্তীকালে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির কোনো শর্তই পাকিস্তান মানেনি।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, “ন্যুরেমবার্গ ট্রাইবুন্যালে যুদ্ধাপরাধীদের রিভিউ, প্রাণভিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। অথচ আমাদের ট্রাইব্যুনাল সে সুযোগ দিয়েছে। এতে আসলে লাভই হয়েছে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সব অপপ্রচার ধোপে টিকল না, সারা দেশেও ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।”
সার্ক সম্মেলন পণ্ড হওয়ার পর ভারত, মিয়ানমার, চীন, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে আলাদা একটি সংঘ গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালে সৌদি আরব ও চীনের ভূমিকায় সমালোচনা করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উপদেষ্টা মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “চীন পাকিস্তানকে অস্ত্র জুগিয়েছিল, সীমান্তে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছিল। বঙ্গবন্ধু সৌদি সফরে গিয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। সেই সৌদি আরব ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পরের দিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল। সেই ভূমিকার কথা তো জাতি ভুলে যাবে না।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদ চৌধুরী ও এস এম চাকমা।