জঙ্গিবাদ: শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান

শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের দিকে নজর দিতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি সম্মেলন থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2016, 03:35 PM
Updated : 31 August 2016, 03:46 PM

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের আয়োজনে ‘আলোকিত মানুষ হোন, জঙ্গিবাদ প্রতিহত করুণ’ শ্লোগান নিয়ে বুধবার জাতীয় যাদুঘরের মূল মিলনায়তনে এই কনভেনশন হয়।

ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান বক্তব্য দেন।

জঙ্গিবাদবিরোধী এই জাতীয় শিক্ষা কনভেনশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন,  “নামে-বেনামে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিই জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। সব কিছু আমলে নিয়েই দেশ থেকে জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটন করব।”

তিনি বলেন, “কোনো ধর্ম মানুষ হত্যা সমর্থন করে না, যারা ইসলামের নাম করে মানুষ হত্যা করছে তারা মূলত পবিত্র ধর্ম ইসলামকেই বিতর্কিত করছে।”

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শিক্ষকদের ভূমিকা প্রত্যাশা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। তাদের নিবৃত্ত করতে অর্থাৎ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শিক্ষক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

শিক্ষক-অভিভাবকরাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, “আজ আমরা কেউ নিরাপদ নই। আমাদের নিজ ঘরে জঙ্গি তৈরি হয়েছে, গুলশান হামলা তার প্রমাণ। এক সময় সবাই বলত, মাদ্রাসা হচ্ছে জঙ্গি তৈরির কারখানা।

“আমি বরাবরই এই কথার প্রতিবাদ করেছি। আজ আমার কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নয়, আজ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরাও ভয়ঙ্কর জঙ্গি হয়ে উঠছে।”

জঙ্গিবিরোধী আন্দোলনে সফলতার জন্য শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন নাহিদ।

“শিক্ষক-অভিভাবকরাই পারেন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে,” বলেন তিনি।

ফাইল ছবি

শিক্ষকদের প্রতি নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। একইসঙ্গে তরুণদের প্রতি অভিভাবকদের নজর বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “এই জঙ্গিবাদের পেছনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারীরা- তারা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও জড়িত।”

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জাতি আজ একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষক ও অভিভাকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “জঙ্গিবাদে তরুণ শিক্ষার্থীরাই যেহেতু জড়িয়ে যাচ্ছে, সেহেতু শিক্ষার্থীদের দিকেই অধিক নজর দিতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে শিক্ষকদের।”

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কে কনভেনশনে ছয় দফার একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন কনভেনশন আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব মাকসুদ কামাল।

এগুলো হলো- প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণ, লালন, অনুশীলন ও চর্চা অব্যাহত রেখে এ বিষয়ক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে কোনো ধরনের উগ্র ধর্মীয় মতবাদ লালন ও প্রচার থেকে বিরত থাকা; ধর্মের নামে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় না দেওয়া; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত সমাবেশ, খেলাধুলা, বিতর্ক চর্চা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্ম প্রক্রিয়া, স্কাউটসহ সহপাঠ্যক্রম কর্মসূচি জোরদার করা; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করা এবং শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, শিক্ষার্থীদের মানবীয় বোধে উজ্জীবিতকরণ ও অভিভাবকদের সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।