মীর কাসেম: রিভিউয়ের যুক্তিতে ‘বিত্তের আলোচনা’

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর অর্থ যোগানদাতা হিসাবে পরিচিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর প্রাণদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানিতে তাকে খালাস দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে অর্থ বিত্তের কথাও তুলে ধরেছেন তার আইনজীবী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 12:57 PM
Updated : 28 August 2016, 12:57 PM

তবে আপিল বিভাগ শুনানিতে বলেছে, অর্থ বিত্তের পরিমাপ ‘অপরাধীর খালাসের’ পক্ষে যুক্তি হতে পারে না।

আর মীর কাসেম বিচার ঠেকাতে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগে লাখ লাখ ডলার খরচ করেছেন বলে যে মেমো রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেছিল, সে প্রসঙ্গ রিভিউ শুনানিতে তুলে ধরেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে রোববার মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ হয়। কাসেমের ভাগ‌্য বদলাবে কি না- সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে মঙ্গলবার।   

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস কাসেম রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে অত্যন্ত দ্রুততায় নিজের ও দলের উন্নতি ঘটান, পরিণত হন জামায়াতের আর্থিক মেরুদণ্ডে।

শুনানির এক পর্যায়ে মীর কাসেমের ‘জনসেবার’ নজির তুলে ধরতে গিয়ে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ইবনে সিনা ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে বলেন, “এগুলো তারই অবদান।”

দেশের অর্থনীতিতে ‘মীর কাসেমের ভূমিকার’ বিবরণ দিতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তার ‘অবদানের’ কথাও খন্দকার মাহবুব বলেন, যে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে।

শুনানির এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, অর্থনীতির জন‌্য কার কী অবদান তা অপরাধের বিচারে আদালতের বিবেচনার বিষয় নয়।

“একটা উদাহরণ দেব, দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই, যারা সারা পৃথিবীতে দেশকে পরিচিতি দিয়েছিল। তাদের চেয়ারম্যানের কিন্তু (দুর্নীতির দায়ে) তিন বছরের সাজা হয়। সুতরাং অর্থনীতির অবদান আমরা দেখব না।”

শুনানির পরে খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, “মীর কাসেম আলী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সেবার ক্ষেত্রে ইবনে সিনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতাল করেছেন।

“এইভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত থেকে তিনি টিভির কর্মকর্তা ছিলেন। তার সামাজিক কর্মকাণ্ড ছিল। এই আসামির মনে যদি বিন্দুমাত্র কোনো আশঙ্কা থাকত, তাহলে এই মামলার যখন তদন্ত চলছিল, উনি বিদেশে গিয়েছেন, বিদেশ থেকে ফিরেও এসেছেন।”

খন্দকার মাহবুব শুনানিতে মীর কাসেমকে একজন ‘ডিসেন্ট’, ‘সোবার’ ও ‘ভদ্রলোক’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং রিভিউ রায়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করতে আদালতের প্রতি অনুরোধ জানান।

মীর কাসেম আলী

মীর কাসেমের অর্থবিত্ত প্রসঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও।

“যাকে আজ ইনোসেন্ট বলা হচ্ছে, তিনি লবিংয়ের জন্য ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। আমি এ বিষয়ে আদালতে কাগজপত্র দিয়েছি।

এ সময় বিচারক বলেন, “যদিও আমরা সেটাকে (লবিংয়ে টাকা ব্যয়ের দলিল) প্রমাণ হিসাবে নিইনি, কিন্তু জামিনের আবেদনে দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামির যে ১৫-১৬টা কোম্পানির কথা বলা হয়েছে, তাতে আপনি যেটা বলেছেন, তাকে বাড়াবাড়ি হবে বলে মনে হয় না।”

মাহবুবে আলম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “তারা যেটা বলতে চায় যে, তিনি একজন দানশীল ব্যক্তি। আমি আদালতে বলেছি, তিনি ২৫ লাখ ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন, যা আসামিপক্ষ অস্বীকার করেনি। কোনো ব্যক্তি, যিনি বিচারকে বন্ধ করতে পন্থা অবলম্বন করতে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করতে পারেন, এই ধরনের ব্যক্তি কোনো রকম ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়।”

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এরপর ৮ মার্চ আপিল বিভাগের রায়েও একই সাজা বহাল থাকে।

রিভিউ আবেদনে রায়ের কোনো পরিবর্তন না হলে তার সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে। রিভিউ খারিজ হলে এবং তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।