‘জঙ্গিবাদের দর্শনকে মোকাবেলা করতে হবে সবার আগে’

জঙ্গি হামলা ঠেকাতে বিষয়টির মূলে গিয়ে প্রথমেই জঙ্গিবাদের দর্শন মোকাবেলায় সুপরিকল্পিত কর্মসূচি নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2016, 06:22 PM
Updated : 30 July 2016, 06:22 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লুভিএ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ৮০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্রের প্রকাশনা ও আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন।

‘একাত্তুরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির’ এই সভা এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

শ্বেতপত্রে ২০১৩ সালের ১ লা নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮০০ দিনে দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গি, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক হামলা ও কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে।

এই শ্বেতপত্র প্রকাশে ওই ৮০০ দিনের জঙ্গি, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ২১টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পাশাপাশি এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের নেতাদের বক্তব্য এবং মাঠ পর্যায়ে সংগঠনটির পক্ষে অনুসন্ধান চালানো হয়। 

শ্বেতপত্র প্রকাশের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, যিনি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্ত গণকমিশন নামের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

সৈয়দ আমিরুল ইসলাম

সৈয়দ আমির বলেন, “জঙ্গিবাদের দর্শনকে যদি মোকাবেলা করতে না পারি, তাদের কার্যক্রমকে যদি মোকাবেলা না করতে পারি- তাহলে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি দিয়ে আমরা মৌলবাদী যে চেতনা, যে জঙ্গিবাদ… সেটা মোকাবেলা করতে পারব না, কোনোদেশই পারে না। আমাদের মূলে যেতে হবে।”

জঙ্গিবাদ মোকবেলা সরকার কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করে তার পরামর্শ, “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সুপরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

“সেখানে একটি কনভেনশন হবে, আলোচনা হবে এবং একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”

‘মুক্তিযুদ্ধের সরকার যে ক্ষমতায় আছে, তাদের কার্যকলাপে তা দেখছি না।’ বলে বক্তব্যের শুরুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই বিচারপতি।

“জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকজনের মধ্যে একটা পলায়ন বৃত্তি কাজ করে। দেখেও না দেখার ভান করি। এটা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে না।”

সৈয়দ আমির বলেন, “দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দেশের চিত্রপট পাল্টে গিয়েছিল। যারা সরকারে আসলো, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিল। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে এবং মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

“‘আমরা যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের শক্তি বলি, বিশ্বাস করি, তাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে… স্বাধীনতা উত্তর কালে, আমরা একাত্তুরে যেভাবে সংগ্রাম করেছি, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমরা কি সেই চেতনা পুনর্জাগরিত করার জন্য, বাস্তবায়িত করার জন্য, আমাদের মধ্যে সেই চেতনা ছিল।”

সভায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ চেতনাকে ধারণ করে।

অজয় রায়

“…‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, সেই ঠিকানা হারিয়ে ফেললে ওহাবীরা যা বলছে- সৌদি আরব আমাদের ঠিকানা হবে, পাকিস্তান আমাদের ঠিকানা হবে; ওহাবীবাদ আমাদের ঠিকানা হবে।”

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‍“ব্লগার হত্যায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বলেছে যাদের তারা হত্যা করেছে তাদের তারা চিনতো না; লেখা পড়েনি। তাদের ছবি দেখিয়ে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে এই লোক আল্লার বিরুদ্ধে, রসূলের বিরুদ্ধে লিখেছে বলে।

“ওহাবীবাদ তরুণদের মধ্যে একটা অন্ধকার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। এই তরুণদের কোনো ঠিকানা নেই, এদের আত্নপরিচয় বলে কিছু নেই। পরিবারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।”

জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ করলেও তার বইয়ের লক্ষ লক্ষ কপি বাজারে রয়েছে অভিযোগ করে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির এই নেতা বলেন, “তার পিস স্কুলগুলো বহাল তবিয়তে আছে। তুরস্কের সঙ্গে এত সম্পর্কের টানাপোড়ন তাদের পরিচালিত স্কুলগুলোও চলছে।”

তথ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষকের মধ্যে ৩০০ শিক্ষক জামায়াতে ইসলামীর। নর্থ সাউথের ১০ জন পেয়েছি, যারা জামায়াত-হিজবুত-তওহীদ করেন।”

সভায় শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক অজয় রায়, নির্মূল কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক সাংবাদিক শামীমা আখতার, আইনজীবী জেড আই খান পান্নাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।