শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সর্বশেষ ছয়টি প্রিজন ভ্যানে ১৮৪জন কয়েদিকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ঘটনাবহুল নাজিমউদ্দিন রোডের এই কারাগারের ইতি টানা হল।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দিনে ৬ হাজার ৫১১ জন কারাবন্দিকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হল।”
“দুদিনে নেওয়ার কথা ছিল বন্দিদের। তবে আমাদের কাজের অগ্রগতি বেশি হওয়ায় আজকের মধ্যেই স্থানান্তর কাজ শেষ করে ফেললাম।”
কারা-মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সকালে সংবাদ সম্মেলনে জানান, কারাগারে রান্নার কাজের জন্য বৃহস্পতিবার ৫০ জন বন্দিকে স্থানান্তর করা হয়।
“কেরাণীগঞ্জের নতুন কারাগারে খোলামেলা জায়গা পেয়ে বন্দিরা উৎফুল্ল। আজও যারা গেছেন তাদেরও শারীরিক ভাষায় আনন্দের আভাস দেখা গেছে।”
নতুন কারাগারে কিছু নির্মাণ ত্রুটি দেখা গেলেও একটি কমিটি করে চার মাসে সেসব ত্রুটি সারানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
কারা-মহাপরিদর্শক বলেন, জেল সুপার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের কিছু আবাসন সমস্যা ছাড়া ওই এলাকায় আর কোনো সমস্যা নেই। কারাগারের আশপাশে কোনো স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না।
কারা কর্মকর্তারা জানান, নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় আট হাজার বন্দি ছিলেন এতোদিন।
তাদের মধ্যে নারী বন্দি এবং জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দিদের আগেই কাশিমপুর কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে ইফতেখার উদ্দিন জানান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরে আশির দশকে আলোচনা শুরু হলেও তার তিন দশক পর ২০০৬ সালে বিষয়টি একনেকে পাসের পর শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ। পরের বছর সেপ্টেম্বরে ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
>> অবস্থান: তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে
>> ব্যয়: ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা
>> আয়তন: ৩১ একর
>> ধারণ ক্ষমতা: চার হাজার ৫৯০ জন
>> নির্মাণ শুরু ২০০৭ সালে
ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাংলাদেশের পুরনো কারাগারগুলোর মতো কেরাণীগঞ্জ কারাগারের দেওয়াল লাল নয়। তুলনামূলকভাবে খোলামেলা এ কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অন্যগুলোর তুলনায় আধুনিক।
ঢাকা কারাগার বদলে যা হবে
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা দুইশ বছরের পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিনোদনকেন্দ্রে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কারা-মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, “এখানে অনেক কিছুই হবে। ভেতরে দুটি মিউজিয়াম এবং নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। সেই ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ করার পাশাপাশি একটি নতুন নকশায় বিনোদনের স্থান তৈরি করা হবে।”
এর বাইরে কনভেনশন সেন্টার, কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং কিছু উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ করা হবে। শিশুদের খেলাধুলার, হাঁটাচলার জন্য খোলামেলা জায়গা থাকবে।