আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি: ৬ জনের ফাঁসির রায়

সাভারের আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে ডাকাত দলের হানায় আটজন নিহতের ঘটনায় ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2016, 06:07 AM
Updated : 31 May 2016, 03:05 PM

এই মামলায় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিন বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়েছে দুজনের। ১১ আসামির মধ্যে খালাস পেয়েছেন দুজন।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বোরহান উদ্দিন, সাইফুল ওরফে আল আমিন, মাহফুজুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে জামিল, জসিমউদ্দিন, মিন্টু প্রধান ও পলাশ ওরফে সোহেল রানা। এদের মধ্যে শুধু পলাশ পলাতক আছেন।

মাহফুজুল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং তার নেতৃত্বে ব্যাংক ডাকাতির ওই ঘটনা ঘটে বলে গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে জানায় পুলিশ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যদের মধ্যে মিন্টু প্রধান বাদে বাকিরা জেএমবির সদস্য।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে উকিল হাসানের। তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছে।

এছাড়া আব্দুল বাতেন ও শাহজাহান জমাদারের তিন বছর কারাদণ্ড এবং তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে আরও এক মাস কারাভোগ করতে হবে তাদের। মামলায় খালাস পেয়েছেন বাবুল সরদার ও মোজাম্মেল হক।

গত বছর ২১ এপ্রিল দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে কমার্স ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে হানা দেয় ডাকাত দল। সেদিন গুলি করে ও বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহসহ সাতজনকে,আহত একজন পরে মারা যান।

জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য এ ডাকাতি বলে গ্রেপ্তারদের জবানবন্দিতে উঠে আসে। গ্রেপ্তার ১০ আসামির মধ্যে জেএমবি সাত সদস্য দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

রায় ঘোষণায় বিচারক বলেন, “এই ঘটনাটি শুধু প্রকাশ্য দিনের আলোয় ডাকতি ছিল না, বরং এটা ছিল সুপরিকল্পিতভাবে আটজন বেসামরিক নাগরিককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা। এর মধ্যে চারজনকে ব্যাংক কার্যালয়ের মধ্যেই কোনো প্রকার উস্কানি বা প্রতিরোধ ছাড়া হত্যা করা হয়।”

আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকের এই শাখায় ব্যবস্থাপকসহ সাতজনকে হত্যা করেছিল ডাকাত দল। পরে পিটুনিতে নিহত হন এক ডাকাত।

বিচার চলাকালে পলাশ ছাড়া অন্যদের কাঠগড়ায় দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি তাদের চেহারা, অভিব্যক্তিতে, আচরণে অনুশোচনার চিহ্ন দেখিনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা এই ঘটনা ঘটায়নি। সে কারণে সমস্ত সাক্ষী-সাবুদ ও পরিপাঠ্য বিবেচনা করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই উপযুক্ত মনে করছি।

“অমানবিক, নিষ্ঠুর ও ক্রুড় কায়দায় আটজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার জন্য একটি জরুরি নজির সৃষ্টি দরকার। অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনে এরকম শাস্তি জরুরি।”

ঘটনার এক বছরের মাথায় ২৮ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব দ্রুততম সময়ে এই মামলার রায় হল। অন্যান্য মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এরকম হওয়া উচিত।”
 
মামলার ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান।