জাপান থেকে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং উপলক্ষে জাপানে চার দিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2016, 05:15 PM
Updated : 30 May 2016, 11:06 AM

টোকিওর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হানেদা বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও জাপানের রাষ্ট্রাচার প্রধান কাওরু শিমাজাকি বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে বিদায় জানান।

বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।

শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাপানের নাগোয়ায় পৌঁছান। পরদিন সেখানে তিনি যোগ দেন জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের সম্মেলনের পরদিন ওই আউটরিচ মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব ‘স্পষ্ট হয়েছে’।

জি-সেভেনের সম্মেলনের পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জোটের বাইরে থেকে বিভিন্ন দেশকে আলাদা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একেই বলা হচ্ছে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং।

এবার বাংলাদেশের পাশাপাশি এশিয়া থেকে লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, পাপুয়া নিউ গিনি এবং আফ্রিকা থেকে শাদকে আউটরিচ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলেন আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ এর প্রধানরাও।

সেদিন বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ছাড়া যে দেশগুলেকে মিটিংয়ে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, তাদের সবাই কোনো না কোনো গ্রুপকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের যে উল্লেখযোগ্য অবদান, সেজন্য বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।”

আমন্ত্রিত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জি সেভেন জোটের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো,  ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিজে আউটরিচ মিটিংয়ে অংশ নেন।

বৈঠকের দুটি সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, জলবায়ু ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলেন।

আউটরিচ মিটিংয়ের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন, আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লগার্দসহ  অন্যান্য রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় শেখ হাসিনার।

আউটরিচ মিটিংয়ের ফাঁকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা বা না থাকার বিষয়ে ক্যামেরন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অভিমত জানতে চান।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কি না সে সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের জনগণই নেবে। তবে ভবিষ্যতের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকাই হয়তো তাদের উচিৎ হবে। 

শনিবার সকালে জাপানের নাগোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সাক্ষাৎ হয়।

একই দিনে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে শিনজো আবে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরলে শিনজো আবে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে তার দেশের সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, “এটা ছিল পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক। আলোচনা অত্যন্ত সফল হয়েছে; বিশেষ আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের খুব স্বতঃস্ফূর্ত সাপোর্ট এসেছে।”

শনিবার বিকালে টোকিওতে জাপানের নতুন দূতাবাস উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, “সার্বিক উন্নয়নে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে শিনজো আবে কথা দিয়েছেন। আমরাও উন্নয়নের আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছি।

“আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এই সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে।”

সফরের চতুর্থ দিন রোববার সকালে জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেখানে তিনি বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য জাপানিদের প্রতি আহ্বান জানান।

এরপর দুপুরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ‘বেছে বেছে হত্যার’ পথ বেছে নিয়েছে তারা।