ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2016, 07:49 AM
Updated : 27 July 2017, 09:39 AM

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন– এমন ১১ জনের একটি তালিকা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এই ১১ জনের অধিকাংশই সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা ছিলেন।

“উনি (ওসমান ফারুক) তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার ইকোনমি বিভাগের রিডার ছিলেন। ১১ জনের তালিকায় তার নামও রয়েছে।”

ওই তালিকা ধরে তদন্ত সংস্থা অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সানাউল হক।

এ বিষয়ে জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ওসমান ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য ওসমান গণির ছেলে ওসমান ফারুক ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।

বিএনপির অন্য নেতাদের মতো ওসমান ফারুকও এর আগে একাধিক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বিএনপিকে ‘ধ্বংসের ষড়যন্ত্র’ করছে।

ওসমান ফারুক বা বাকি দশজনের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা। তবে গতবছর অক্টোবরে ময়মনসিংহ-৭ আসনে জাতীয় পার্টির সাংসদ এম এ হান্নানকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারের সময় যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছিল, তাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ‘টর্চার সেলের’ কথাও আসে।

মংমনসিংহের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন ময়মনসিংহের আদালতে হান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করলে বিষয়টি গতবছর ট্রাইব্যুনালে আসে। রহিমার করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর আব্দুর রহমানকে ধরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনা ক্যাম্পে নেওয়া হয় এবং সেখানে নির্যাতন চালানোর পর তাকে গুলি করে হত্যা করেন হান্নান ও তার সহযোগীরা।  

স্থানীয় রাজাকার সদস্যরা সে সময় ময়মনসিংহ শহর থেকে নারীদের ধরে এনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যেত বলেও ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। 

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, একাত্তর সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সেখানে ক্যাম্প খোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথিশালায় বানানো হয় আঞ্চলিক কমান্ড হেড কোয়ার্টার। আর ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সংলগ্ন একটি বাড়িতে চালু হয় সেই নির্যাতন কেন্দ্র।

ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় ধরে আনা অসংখ্য নারী-পুরুষকে সেখানে হত্যার পর পাশেই নদের তীরে মাটিচাপা দেওয়া হয় সে সময়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই স্থানটিকে ‘বধ্যভূমি’ ঘোষণা করে।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর এ পর্যন্ত বিএনপির তিনজনের সাজা হয়েছে।

এর মধ্যে জিয়াউর রহমানের সময়ের মন্ত্রী আব্দুল আলীমের অপরাধ প্রমাণিত হলেও বয়স বিবেচনায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দণ্ড ভোগের মধ্যেই ২০১৪ সালের অগাস্টে হাসপাতালের প্রিজন সেলে তার মৃত্যু হয়।

যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গতবছর ২২ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের একই সাজার রায় হলেও তিনি মামলার শুরু থেকেই পলাতক।