বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধিদের সামনে তিনি আবারও সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোতে আইএসের সম্পৃক্ততার খবর নাকচ করেন।
মন্ত্রী বলেন, “মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, আর নাম দেওয়া হচ্ছে আইএসের। আরে বাবা, আইএসটা কোথায়?
“আমাদের এই আলেম-ওলেমারা বসে আছেন, একজনও বলেন না যে তারা আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা তো একজন আলেম-ওলেমা... একটা মাদ্রাসা একটা মসজিদে আমরা আইএসের অস্তিত্বের কথা শুনিনি।”
জঙ্গিবাদ দমনে সচেতনতা তৈরির জন্য পুলিশের সাম্প্রতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে এই সম্প্রীতি সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
গত শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী নিজের বাড়ির কাছে খুন হওয়ার পর সোমবার ঢাকার কলাবাগানে হত্যা করা হয় সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি দল আইএস রেজাউল হত্যা এবং আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা বাকি দুটি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দিয়েছে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী একটি ওয়েবসাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বুধবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে আইএস এর তৎপরতা নিয়ে কথা বলেন।
তবে সরকারের আগের ভাষ্যের ধারাবাহিকতায় সম্প্রীতি সম্মলনেও এ দেশে আইএস এর মতো জঙ্গি দলের তৎপরতার কথা নাকচ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে কী আছে? আমাদের এখানে কিছু ‘হোমগ্রোন’ জঙ্গি রয়েছে। তারা নানান ধরণের প্রচেষ্টা নানানভাবে চালিয়েছে। এখনও মাঝে মাঝে চালায়।”
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার পরও এ দেশের মানুষের নতি স্বীকার না করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কামাল বলেন, “এখন দু’একটা মানুষ হত্যা করে, তাদের আইএস মতামত এখানে প্রতিষ্ঠিত করবে- কোন দিনও সম্ভব নয়।
কাজেই যারা এ কুকর্মে নিয়োজিত আছেন, তাদের বলব- এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে সঠিক পথে আসেন।”
পঞ্চগড়ের মন্দিরে হামলা চালিয়ে পুরোহিত হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গিরা তাদের ‘ভুল বুঝতে পেরেছে’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “আগে মানুষ পুড়িয়ে, বাস পুড়িয়ে, শ্রমিক মেরে একটা প্রচেষ্টা চলছিল। এখন হঠাৎ করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের অগ্রযাত্রাকে থমকে দেওয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা।”
পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, “যারা শুধু দেশ নয়, বিশ্ব নিয়ে চিন্তা করেন, তাদের বলব, এখানে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে।... মায়ের চেয়ে মাসির কান্না, মাসির মায়া বেশি- সেটাও আমরা দেখেছি।”
জুলহাজ মান্নান হত্যার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার আগ্রহের বিষয়ে ইংগিত করে পুলিশ প্রধান বলেন, বাংলাদেশে সরকার, পুলিশ, প্রশাসন থাকার পরও অনেক দেশ ‘মায়া কান্না’ দেখিয়ে ‘কাছে আসতে’ চায়, যেমনটা সিরিয়া, ইরাকের মতো দেশে ঘটেছিল।
শহীদুল হক বলেন, “আমরা যে দেশে বসবাস করি, আমার দেশের ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিৎ। যারা এই দেশে বসবাস করে, তাদেরও সেই শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিৎ।
“যে সমাজ যে জিনিস সমর্থন করে না, পছন্দ করে না, সেখানে যদি কৌশলে বহিঃশক্তি দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।”
এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, “আমি কী বলতে চেয়েছি- তা আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন।”
বাংলাদেশে গত দুই-আড়াই বছরে যতগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ তার ‘৮০ শতাংশ’ উদ্ঘাটন করে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে বলে পুলিশ প্রধান দাবি করেন।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ছয়জন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আরও ২৩ জন জঙ্গি ফাঁসির রায় হয়েছে, যেগুলো উচ্চ আদালতে আপিলে রয়েছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা এবং তাতে জামায়াত-শিবিরের জড়িত থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ধর্মীয় নেতাদের সামনে তিনি বলেন, এসব ঘটানোর উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারকে ‘বেকায়দায় ফেলা’।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ইদানিং বিশ্বে রাজনৈতিক ও গোষ্ঠিগত ফায়দা হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যবহার হচ্ছে, যা হিংসা, বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা ও উগ্রবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে।
“এই উগ্রবাদের কারণে সারা বিশ্ব বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। আর বিশ্বয়ানের আবহে বাংলাদেশের মাটিতেও উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
উগ্রবাদের কারণে মনুষত্ববোধ যাতে বিপন্ন না হয়, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, উদারতা ও আস্থার পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়- সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেন তিনি।
শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। তাই এক লাখ মাওলানার স্বাক্ষর নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার মাওলানা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সই করেছেন বলে জানান তিনি।
অন্যদের মধ্যে আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও, রামকৃঞ্চ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহারাজ, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।