‘ইউপি ভোট প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও’

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সরকার না চাইলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2016, 11:55 AM
Updated : 28 April 2016, 12:25 PM

বুধবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ও স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি।

দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত প্রথম ইউপি নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, “ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড হয়েছে প্রায় হাফ সেঞ্চুরি। আহত হয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ। তাই এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও।”

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকারি দলের প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়ান অ্যান্ড হাফ। কাজেই স্থানীয় নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে বা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে, এদেশে নির্বাচনের ভবিষ্যত কী এটাই এখন বড় প্রশ্ন।”

গত ২৩ মার্চ ধরে শুরু হওয়া ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচন জুন পর্যন্ত চলবে। সহিংসতা ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগের মধ্যে তিন ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। 

ইউপি ভোটের নামে ‘প্রহসন’ চলছে বলে বিএনপির অভিযোগ। অন্যদিকে ভোটের চিত্রে সন্তুষ্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, অনিয়মের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব ‘স্বাধীন’ ইসির। 

সহিংসতার এই চিত্র প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরিশালের

সংবিধানে ইসির অনেক ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগের নজির দেখছেন না অধ্যাপক তোফায়ে।

“ইসি যতই শক্তিশালী করুন, সরকার সহায়তা না করলে, সদিচ্ছা না থাকলে ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, এককভাবে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করব না, সরকার না চাইলে এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।”

জাতীয় নির্বাচন যেমনই হোক, ইউপি নির্বাচন এবার আগের মতো উৎসবমুখর হয়নি বলেও তার পর্যবেক্ষণ।

অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অধ্যাপক তোফায়েলের অভিযোগ। রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে ইউপি ভোটেও ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“এভাবে চলতে থাকলে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের কোনো ভবিষ্য‍ৎ নেই। এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। তবে যমে যে বাড়ি চিনে গেল, সেটি মনে রাখতে হবে।”

ইসি আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে, সিসিটিভি সহায়তা বা মোবাইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার শুরু করলে তা সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলত বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “নির্বাচনী গেজেটে যে প্রতিশ্রুতি ছিল, কমিশন তা পালন করেনি। গত তিন ধাপের ইউপি নির্বাচনে বিধিমালার কোনো বিধিই পালন করা হয়নি।”

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, ভোট পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী প্রধান শারমিন মুরশিদ, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আব্দুল আলিম, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকারও বক্তব্য রাখেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়ক এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। 

সভাটির যৌথভাবে আয়োজন করে গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।