এক সচিবকে সংবর্ধনা দিতে পটুয়াখালী শহরজুড়ে গত এক সপ্তাহের বেশি ধরে চলেছে এলাহিকাণ্ড।
তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল মালেক। তাকে বরণ করে নেওয়ার এই আয়োজন দেখে কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, কোনো মন্ত্রীর সফরেও এর কাছাকাছি আয়োজনও তারা দেখেননি।
শনি ও রোববার পটুয়াখালীতে দুই দিনের সফরসূচি রয়েছে এই সচিবের।
শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সচিবকে বরণ করে নিতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, আব্দুল করিম মৃধা কলেজ, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রীতিমতো ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লেবুখালী ফেরিঘাট থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে মালেকের ছবি সংবলিত অন্তত ২৭টি তোরণ। শহরের প্রবেশদ্বার চৌরাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কের দুপাশে স্থাপন করা হয়েছে শত শত ব্যানার, ফেস্টুন, ফ্ল্যাগ ও প্ল্যাকার্ড। আর এসবে ছিল সচিব মালেক ও পৌর মেয়রের ছবি।
গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলোকসজ্জিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা, দেয়াল, বিভিন্ন খুঁটি নানা রংয়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে সাজানো হয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, পটুয়াখালীর বাউফলের সন্তান আব্দুল মালেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর পটুয়াখালীতে তার দ্বিতীয় সফর।
অবশ্য সচিবের এই সফরে কত টাকা ব্যয় হবে সে বিষয়ে আয়োজকদের কেউ মুখ খুলতে চাননি।
এই আয়োজনের অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে গেলে সেটি অন্যায় হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, সচিবকে আয়োজন করে কেন সংবর্ধনা দিতে হবে তা তার বোধগম্য নয়। এমন আয়োজনও তিনি দেখেননি বলে জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই আয়োজনের পেছনে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্য রয়েছে। না হলে এরকম বড় আয়োজন করা সম্ভব নয়।”
শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ফেরিঘাটে পৌঁছান সচিব আব্দুল মালেক। সেখানে ফুলেল শুভেচ্ছায় তাকে বরণ করেন দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সকাল সোয়া ৯টায় লেবুখালী ফেরিঘাট সংলগ্ন পাগলার মোড়ে জেলা পরিষদ নির্মিত জেলা গেইট উদ্বোধন করেন তিনি। সেখান থেকে রওনা হয়ে সকাল পৌনে ১০টায় পটুয়াখালীতে এসে পৌঁছায় সচিবের গাড়িবহর।
পটুয়াখালী পৌঁছে প্রথমে সার্কিট হাউজ সড়কে পৌরসভার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর ১০ মিনিটের ব্যবধানে শহরের শহীদ স্মৃতিসৌধ পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে পটুয়াখালী পৌরসভায় যান তিনি।
এরপর সচিব মালেক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পৌরসভার পৌর অডিটরিয়ামের। পরে পৌরসভার আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে মতবিনিময় সভায় তিনি যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারফ হোসেন, পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান, ভোলা ও বরগুনাসহ পটুয়াখালীর বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
উপস্থিত শ্রমিকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও একতালে দিচ্ছিলেন স্লোগান। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘মালেক ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’- এমন স্লোগান শোনা গেছে সচিবকে ঘিরে।
ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় সভা শেষে পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি।
বিকেল ৩টায় সচিব মালেক সদর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামেমেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
শনিবারের এমন আয়োজনের পর রোববার সকালে দুমকি উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে স্থানীয় প্রশাসনের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় তার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া সকাল ৯টায় শহরের প্রবেশদ্বার চৌরাস্তায় ফুটওভার ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা তার সফর সূচিতে উল্লেখ রয়েছে।
একই দিন কালিকাপুর যুব সংসদের কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় অ্যাডভোকেট কাজী আবুল কাসেম স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।