ভোটার তালিকা হালনাগাদ: কম বয়সীদের অনাগ্রহে ইসিতে উদ্বেগ

ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষের দিকে এলেও কম বয়সী বিশেষ করে ১৫ ও ১৬ বছর বয়েসীদের অনাগ্রহে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2015, 08:33 AM
Updated : 19 Sept 2015, 08:33 AM

বয়স প্রকাশ করতে না চাওয়া, স্থানান্তর, নিবন্ধন সনদ না পাওয়াসহ নানা কারণে এই অনাগ্রহ হতে পারে বলে ইসি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভোটারযোগ্য হচ্ছেন, ১৭ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ তথ্য সংগ্রহ ‘আশানুরূপ’ হলেও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভোটারযোগ্যদের ক্ষেত্রে এ লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না বলে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নিয়ে আমরাও চিন্তিত।

“বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর, নিবন্ধন সনদ না থাকা, মহিলাদের অনাগ্রহ ও আইডি কার্ড পাওয়ার বিলম্বের কারণে একটি বড় অংশকে তথ্য সংগ্রহের আওতায় আনা যাচ্ছে না।”

একই মত জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক নারী-ই বয়স প্রকাশ করতে চান না। গ্রামে যেমন, শহরের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। মাঠ কর্মকর্তারাও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেন না, এজন্যে কম বয়সীদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হবে।”

তবে নিবন্ধন শেষ হওয়ার আগে এই সংক্রান্ত হিসাবটা দিতে পারছেন না ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান।

তথ্য নিলেও তাৎক্ষণিকভাবে আইডি কার্ড পাওয়া যাবে না জানাও কম বয়সীদের অনাগ্রহের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।

চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এ তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হচ্ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কমিশন সদস্যদের মতপার্থক্যের মধ্যেই এবারের হালনাগাদ কর্মসূচিতে কমবয়সী বিশেষ করে আগামী ৩ বছরে যারা ভোটার হবেন তাদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ২.৫ শতাংশ এবং ১৫ ও ১৬ বছর বয়সীদের জন্য ৫ শতাংশ করে তিন বছরের জন্য মোট ৭২ লাখ নাগরিককে নিবন্ধনের লক্ষ্য ঠিক করেছিল ইসি।

বাদপড়াদের নিয়ে ২০১৬ সালের ভোটারযোগ্য নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

নির্বাচন কমিশন

কিন্তু ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভোটার হবে এমন নাগরিকদের হালনাগাদ তথ্যের অবস্থা বেশ সঙ্গীন। এই দুই বছরের মিলিত সংখ্যা ২০১৬-র হালনাগাদের সংখ্যার চেয়েও কম হবে বলে তারা জানান। এ দুই বছরে ভোটার হবে এমন ৪৮ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ইসির।

২০১৬ সালে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী এমন এক লাখেরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ঢাকায়। এর মধ্যে ৮০ হাজারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান মিহির সারওয়ার।

তবে ১৫-১৬ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের সংখ্যা এর অর্ধেকেরও কম হবে জানিয়ে ইসির এ উপসচিব বাসায় বাসায় গিয়ে উপযুক্তদের পেতে ঝামেলার কথাও বলেন।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিইসি আবু হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও সময় রয়েছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পরেই এ নিয়ে তথ্য জানানো হবে।”

বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার অভিযোগ

এদিকে তথ্য দিতে আগ্রহী অনেকেরই অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদের কথা থাকলেও গত ১০ দিনে তারা মাঠ কর্মকর্তাদের দেখা পাননি।

পূর্ব রামপুরা, পশ্চিম মনিপুর, তোপখানা রোড় ও তেজতুরি পাড়াসহ ঢাকার অনেকে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীদের একজন ১৬ বছর বয়সী সামিরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্মকর্তারা বাসায় আসবে- এতদিন পর্যন্ত এমনটাই ভেবেছিলাম। উপায়ান্তর না দেখে এখন এলাকায় খোঁজখবর নিচ্ছি।”

এ বিষয়ে ইসির উপসচিব মিহির সারওয়ার বলেন, বাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেউ চাইলে নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়েও তথ্য দিয়ে আসতে পারবেন বলে জানান তিনি।