বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ রোববার এই অবমাননা মামলার রায় দেওয়ার কথা থাকলেও এদিন তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালে জাফরুল্লাহর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার। প্রসিকিউটরদের মধ্যে ছিলেন তুরীন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল। বাদীপক্ষে ছিলেন খান মো. শামীম আজিজ ও মোরশেদ আহমেদ খান।
বিচারকদের নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য গত ৯ আগস্ট আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরদিন আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হয়।
ওইদিন শুনানি শুরু করার সময় জাফরুল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করে বাসেত মজুমদার বলেন, “তিনি (জাফরুল্লাহ) সম্পূর্ণভাবে আপনাদের নিকট আত্মসমর্পণ করেছেন।
“বিষয়টা শুরু হয়েছিল সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের মামলা থেকে। যেখানে দেশের উচ্চশিক্ষিত ৫০ জন নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে কেউ নাম প্রত্যাহার করেছেন, কেউ ক্ষমা চেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে আপনারা একজনকে দণ্ড দেওয়ায় তিনি একটু মানসিকভাবে ইয়ে হয়ে গেছেন।”
এ সময় আদালত বলেন, অন্যরা সবাই প্রথমবারের মতো অবমাননা করেছেন। আর জাফরুল্লাহর ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় ঘটনা বলেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
“নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা মানে কিন্তু ‘অ্যাডমিটেডলি গিল্টি’। অপরাধ করে ফেলেছি। ক্ষমা করে দিন।”
আদালত এরপর জাফরুল্লাহর সেই বক্তব্য বড় পর্দায় বাসেত মজুমদারকে দেখান।
পরে অভিযোগকারীদের আইনজীবী মোরসেদ আহমেদ খান বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করলে সেটা এক ধরনের অবমাননা। আর আদালতের কুৎসা করলে সেটা ফৌজদারি অবমাননা। জাফরুল্লাহ তা একাধিকবার করেছেন।
ওইদিন শুনানি শেষে বিচারক এ বিষয়ে আদেশের জন্য ৩০ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেন।
ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবমাননাকর বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহকে সাজা দিয়েছিল আদালত। শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তবে জাফরুল্লাহ নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে সতর্ক করে দিয়ে ওই দণ্ড মওকুফ করে দেয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন।পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সে সময় তিনি বলেন, “আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।
“যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট, কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণ্ন করা।”
আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, “যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।”
এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর ও নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী ও এফ এম শাহীন গত ৬ জুলাই আদালত অবমাননার এই অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রাথমিক শুনানি করে ট্রাইব্যুনাল জাফরুল্লাহকে আদালতে হাজির হয়ে নিজের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলে।
এর আগে টকশো’তে মন্তব্যের কারণে আরও একবার অবমাননার অভিযোগে জাফরুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে জবাব দিতে হয়েছিল।