ইডেনের নির্বাচনী প্রশ্নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা

ঢাকার একটি কলেজে মাস্টার্স শেষবর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষা যে প্রশ্নপত্রে হয়েছে, সেই প্রশ্নেই দুই দিন আগে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একটি পত্রের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2015, 12:24 PM
Updated : 27 August 2015, 01:07 PM

গত সোমবার সারাদেশে ‘আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব’ বিষয়ের এই পরীক্ষা হয়।ওই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে গত মার্চে ইডেন কলেজে নেওয়া নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নের ‘হুবহু’ মিল পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এ ঘটনায় বিস্মিত ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসনে আরা বলেছেন, নিজে একটি প্রশ্ন করার যোগ্যতা যে শিক্ষকের নেই, তার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটিতে বসারও অধিকার নেই। 

বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র একটি টিকা পরিবর্তন করে একটি কলেজের টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে দেবেন এবং কমিটিতে থেকে টাকা নিয়ে যাবেন- এমন শিক্ষককে আমি ধিক্কার দিই।”

আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ইডেন কলেজের কেউ পাঁচ সদস্যের পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন না। তারপরও কীভাবে দুই প্রশ্ন মিলে গেল তা তারা খতিয়ে দেখবেন।

দুটি প্রশ্নপত্রেই মোট ১০টির প্রশ্নের মধ্যে পাঁচটির উত্তর দিতে বলা হয়েছে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় সব প্রশ্নের মান সমান।

এর মধ্যে ১ থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত বর্ণনামূলক প্রশ্নের সবগুলোই মিলে গেছে দুটি প্রশ্নপত্রে।

দুটি প্রশ্নপত্রে কয়েকটি প্রশ্নে বাক্যগঠনে সামান্য তারতম্য থাকলেও প্রশ্ন একই। এমনকি ইডেনের নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে যে ক্রমিকে প্রশ্নগুলো সাজানো হয়েছে চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও সেগুলো এসেছে একই ক্রমিকে।

দশম প্রশ্নে চারটির মধ্যে দুটি টিকা লিখতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ইডেন কলেজের প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেছে। অন্য একটি টিকায় ‘জ্ঞানের সমাজতত্ত্ব’-এর পরিবর্তে চূড়ান্ত পরীক্ষায় রাখা হয়েছে ‘প্রাচ্যবাদ’। দুই প্রশ্নপত্রে পার্থক্য বলতে এটুকুই।

আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে বাংলার সঙ্গে প্রশ্নের ইংরেজি অনুবাদও দেওয়া হয়েছে, ইডেনের প্রশ্নপত্রে যা ছিল না।

সরকারি তিতুমীর কলেজের এক পরীক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীদের অনেকেই অন্য কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করে। এ পরীক্ষার প্রশ্ন মিলিয়ে দেখি সব একই রকম।… একটি-দুটি প্রশ্ন হয়তো মিলে যেতে পারে। তাই বলে সবগুলো মিলে গেল, এও কি সম্ভব!”

এটা কীভাবে সম্ভব হল তা খুঁজে বের করার দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।

ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বলেন, “যিনি প্রশ্ন করেছেন, তিনি তো ইডেন কলেজের টেস্টের প্রশ্ন হুবহু তুলে দিতে পারেন না। নিজের যদি যোগ্যতা না থাকে একটি প্রশ্ন করার, বিগত বছরের সাজেশন দেখে, তাইলে তো ওই কমিটিতে বসার রাইট নাই।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে একই কমিটিকে প্রশ্ন ‘মডারেশনের’ দায়িত্বে রাখায় এটা হয়েছে বলে মনে করেন অধ্যক্ষ।

“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ডিন সাহেবরা জনমের পর জনম ধরে একটি কমিটিকে রেখেছেন, উনারা যদি বদল হন তাহলে এই পরিস্থিতিও বদলাবে। আর শিক্ষকের নামে এইসব অশিক্ষকরাও চেইঞ্জ হবে।”

অধ্যাপক হোসনে আরা জানান, প্রশ্ন করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন করে পরীক্ষক ও একজন ‘মডারেটর’ থাকেন।

বিগত পাঁচ বছরের প্রশ্ন দেখে দুই শিক্ষক প্রথমে দু’টি প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। পরে ‘মডারেটর’সহ তিনজন মিলে সেখান থেকে বাছাই করে প্রশ্নপত্র ঠিক করেন।

“যিনি টেস্টের প্রশ্ন করেছেন, তিনি মডারেশনের কাজে বা প্রশ্নপত্র তৈরির কাজে ছিলেন না। উনারটা দেখে যদি কেউ প্রশ্ন করে সেখানে নিয়ে যান… সহজলভ্য… তাইলে তো যিনি টেস্ট প্রশ্ন করছেন তার দোষ নাই।”

প্রশ্ন মিলে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পরীক্ষার পরদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুটি প্রশ্ন কোনোভাবে মিলে যাওয়া সম্ভব নয়। দুইজন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রশ্ন নেওয়া হয়। সেখান থেকে একটি প্রশ্ন তৈরি করা হয়।”

হুবহু মিলে যাওয়া দুটি প্রশ্নপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আছে জানানো হলে তিনি বলেন, “আপনি আমাকে দেন, আমি মিলায়ে দেখব। আমার কাছে তো কেউ অভিযোগ করেনি।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সে সময় বলেন, “সাজেশন থেকে প্রশ্ন করার কারণে হয়তো কয়েকটি প্রশ্ন মিলে যেতে পারে। তাই বলে পুরো প্রশ্নপত্র একই রকম হবে না। ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলে দেখি; পরে আপনাকে জানাব।”

‘খতিয়ে দেখার’ পর কী জানা গেল- এমন প্রশ্নে বৃহস্পতিবার অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, “পরীক্ষা কমিটির সচেতনার অভাব থাকার বিষয়টি এখন স্পষ্ট। আমরা এ নিয়ে একটি কমিটি করব।”

কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

মাস্টার্সের ওই পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি-না জানতে চাইলে উপাচার্য শুধু বলেন- ‘না’।