‘অভিজিৎদের রক্ত ঝরালেই বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র হবে না’

অভিজিৎ রায়সহ মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করা যাবে না বলে উগ্রবাদী ধর্মান্ধ শক্তির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2015, 03:46 PM
Updated : 31 July 2015, 04:07 PM

শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, “একজন অভিজিৎকে হত্যা করলে, একজন অনন্ত বিজয়ের রক্ত ঝরালে এবং একজন ওয়াশিকুরকে খুন করলেই বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যাবে না। যারা এটা হয়ে যাবে বলে স্বপ্ন দেখছেন, তাদের স্বপ্ন কখনও বাস্তবায়ন হবে না।

“কারণ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। এর পেছনে বিপ্লবীদের রক্ত রয়েছে। আমাদের রক্তে মিশে আছে অসামম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তবুদ্ধির চেতনা। তাদের হত্যা মুক্তিবুদ্ধির চর্চার ওপর সাময়িক আঘাত; কিন্তু তার মানে এই নয় বাংলাদেশ মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে গেছে।”

অসাম্প্রদায়িক চেতনা চর্চার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে অভিজিৎ আর ওয়াশিকুরদের জায়গায় অসংখ্য মুক্ত চিন্তকের জন্ম হবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইউজিসি অধ্যাপক।

ছেলেকে হারালেও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে নিজেকে দৃঢ় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এই লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে চাপাতির আঘাতে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ মাসেও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “আইনি অগ্রগতির বিষয়ে ডিবি পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তারা সঠিক কোনো উত্তর দেয় না। শুধু সাতজনকে চিহ্নিত করার বিষয় জানায়। তাদের গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে কোনো উত্তর তাদের কাছে নেই।

“এক কথায় বলতে গেলে, দৃশ্যমন কোনো অগ্রগতি পুলিশের কাছে নেই।”

মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তচিন্তার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সকলকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা রাজপথে থাকলে জামায়াত-শিবির পালানোর পথ পাবে না, যেভাবে পালানোর পথ পায়নি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে।”

কর্নেল আবু তাহেরের ৩৯তম ফাঁসির বার্ষিকী উপলক্ষে টিএসসি মিলনায়তনে ‘মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির উপর আঘাত’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে কর্নেল তাহের সংসদ।

আলোচনা সভায় সরকারের দুই মন্ত্রীসহ প্রায় সব বক্তাই অধ্যাপক অজয় রায়ের বক্তব্যের সমর্থনে কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিমান পরিবহন ও পর‌্যটনমন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, রাজীব হায়দারকে হত্যার পর প্রধানমন্ত্রীকে যেমন সক্রিয় দেখা গিয়েছিল পরে অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত এই সংক্রান্ত একটি কমিটিও ব্লগে কারা আস্তিক আর কারা নাস্তিক তা খুঁজতে নেমে পড়ল। খুনীদের বিষয়ে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা গেছে।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে এই ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকেই যাবে। কারণ ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম রেখে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে টিকে থাকার সুযোগ করে দিয়েছি।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কর্নেল তাহের সংসদ সভাপতি সিপিবি নেতা হায়দার আকবর খান রনো বলেন, আক্রমণ চালিয়ে মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী-তালেবানী চেতনাধারীরা সাময়িক সময়ের জন্য তাদের বার্তা দিতে পারলেও বাংলাদেশকে তারা অতীতে যেভাবে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জিয়াউর রহমানসহ সকল সামরিক শাসকেরা মুক্তবুদ্ধি ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হেনে থাকে। অন্যদিকে, তারা প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। যেভাবে জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করেছেন।

“খালেদা জিয়াও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তবে অনেকগুলো প্রাণ গিয়েছে।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, তাহের সংসদের সহ-সভাপতি ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা।

তাহের সংসদের সাধারণ সম্পাদক ড. বীণা শিকদার আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন।

১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই বিতর্কিত সামরিক আদালতের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা তাহের বীর উত্তমকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

ঈদের ছুটি থাকায় ফাঁসি ঝোলানোর বার্ষিকীতে আলোচনা সভা হয়নি বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।