মিলন হত্যা: রেকর্ড চেয়েছে আদালত

নোয়াখালীর কিশোর মিলন হত্যা মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর এ সংক্রন্ত সকল নথি তলব করেছে আদালত।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 11:03 AM
Updated : 29 July 2015, 11:03 AM

বুধবার এ মামলার ধার্য তারিখে কোম্পানীগঞ্জ আমলী আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সমরেশ শীল এই আদেশ দেন।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এটিএম মহিব উল্লাহ জানান, আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থানের পর বিচারক পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর।

“ওই তারিখে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্ত চলাকালে রেকর্ডকৃত সকল কাগজপত্র (সিডি) উপস্থাপন করার আদেশ দেওয়া হয়।”

এছাড়া ওই তারিখে মামলার বাদী নিহত মিলনের মা কোহিনূর বেগমকে হাজির হওয়ার আদেশ দেওয়া হয় বলে জানান মহিব উল্লাহ।

২০১১ সালের ২৭ জুলাই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর কিশোর শামসুদ্দিন মিলকে ‘ডাকাত অভিযোগ তুলে’ পিটিয়ে হত্যা করে জনতা।  

মিলন হত্যাকে ঘিরে নানা ঘটনা

কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া ইউনিয়নে ২০১১ সালের ২৭ জুলাই ছয় ডাকাতকে পিটিয়ে হত্যা করে জনতা।

ওই ঘটনায় পুলিশ ও মিলনের মা কোহিনূর বেগম পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।  

কিশোর মিলন ওইদিন সকালে চর ফকিরা গ্রামের বাড়ি থেকে উপজেলা সদর বসুরহাট যাচ্ছিল।

পথে চর কাঁকড়া একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা থেকে একদল লোক তাকে ‘ডাকাত অভিযোগে’ আটক করে টহল পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়।

সেখান থেকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় টেকের বাজারে উত্তেজিত জনতা মিলনকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

ওই ঘটনার কয়েকদিন পর মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে এই হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

এরপর দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি রফিক উল্লাহ, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম শেখ, দুই কনস্টেবল আবদুর রহিম ও হেমারঞ্জন চাকমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

তবে, পরে সবাই আবার স্বীয়পদে বহাল হন।

এদের মধ্যে ওসি রফিক উল্লাহ বর্তমানে বান্দরবান, এসআই মো. আকরাম শেখ খুলনার বাগেরহাট, কনস্টেবল আবদুর রহিম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ও হেমারঞ্জন চাকমা হাতিয়া থানায় কর্মরত রয়েছেন।

মামলা দায়েরর পর গণপিটুনিতে অংগ্রহণকারীদের মধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তকৃত যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা সাবাই জামিনে বেরিয়ে আসেন।

কোম্পানীগজ্ঞ থানার ওসি সাজেদুর রহমান সাজিদ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গণপিটুনিতে ছয় ডাকাতের মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েকশ লোককে আসামি করে পুলিশের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে আদালতে।

এছাড়া মিলনের মায়ের মায়ের দায়ের করা মাললাটি ডিবি পুলিশে স্থানান্তর করা হয় বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আতাউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মিলন হত্যা মামলার তদন্তে সাক্ষ্য প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

তবে, পরবর্তীতে নতুন কোনো ক্লু পাওয়া গেলে মামলাটি আবার পুনজ্জীবিত করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে পিপি এটিএম মহিব উল্লাহ জানান, আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। অন্যদিকে বাদীও অভিযোগ প্রতাহারের আবেদন জমা দিয়েছেন আদালতে।

“বাদী তার মামলা চালাতে না চাইলে রাস্ট্র পক্ষের তেমন কিছু করার থাকে না, যার কারণে মামলাটির ভবিষ্যত দেখছি না।”

মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পরিবারটি।

মামলার বাদী নিহত মিলনের মা কোহিনূর বেগম বলেন, “ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের আশায় গত চার বছরের বার বার পুলিশ ও আদালতের বারান্দায় ঘুরেছি। এজন্য অনেক টাকাও খরচ করেছি।

“এক পর্যায়ে গণ্যমান্য লোকজনের পরামর্শে মিলনের বাবা মামলা তুলে নিতে রাজি হন।

“তার (মিলনের বাবা) কথা অনুযায়ী বাদী হিসেবে আমি আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন দাখিল করি।”