এক যুগ পর বাজেট সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক

বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর মাধ্যমে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানোর আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হল বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের তিন দিনের বার্ষিক সভা।

আবদুর রহিম হারমাছি ওয়াশিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2014, 05:44 AM
Updated : 11 Oct 2014, 05:44 AM

এবারের বার্ষিক সভাকে সামনে রেখে প্রায় এক যুগ পর বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ‍অন্যান্য ঋণ-সহায়তার পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার (৫০০ মিলিয়ন ডলার) বাজেট সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে।

২০০৩ সালের পর বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো বাজেট সহায়তা পায়নি বাংলাদেশ।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ডার কনস্টিটিউশন হলে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বার্ষিক সভার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের চেয়ারম্যান পেট্রিক প্রুয়াইচের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এবং আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগার্দ বক্তব্য রাখেন।

জিম ইয়ং কিম বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতি যাতে কেবল সৌভাগ্যবানদের উন্নতি না ঘটিয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

“সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব সাহারা অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে উল্লেখ করে এই দুই অঞ্চলের অসহায় মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রম বাড়ানোর ঘোষণা দেন এই আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার প্রধান।

অনুষ্ঠানে ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড বলেন, “পৃথিবীতে বেকারত্ব হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। পৃথিবীর সব বেকার মানুষকে যদি এক জায়গায় করা হয় তাহলে তা পৃথিবীর ষষ্ঠ জনবহুল দেশে পরিণত হবে। এই সমস্যা দূর করতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে তিন ধরনের বিকল্প আছে। একটি হচ্ছে- প্রবৃদ্ধি নাকি স্থবিরতা, স্থিতিশীলতা নাকি ভঙ্গুর অবস্থা এবং শেষটি হলো- সৌহার্দ্য নিয়ে সবাই একসঙ্গে চলবেন নাকি একা চলবেন।”

পৃথিবীতে প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে সাত জনই বৈষমের স্বীকার, যা গত তিন দশক ধরে বেড়ে চলেছে বলে জানান আইএমএফ প্রধান।

ল্যাগার্ড বলেন, “এই বৈষম্য কমাতে গেলে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বিশ্বের ৮৬ কোটি ৫০ লাখ মহিলা কাজ করতে পারেন। কিন্তু তারা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। কাজের সুযোগ পেলে তারা অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারতো।”

এদের নিয়ে বিশ্ব নেতাদের নতুন করে চিন্তা করার পরামর্শ দেন আইএমএফের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

সত্তর বছরের পুরনো দুই প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেন ল্যাগার্দ।

তিনি বলেন, “বৈষম্য কমানোর যে লক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান দুটির জন্ম হয়েছিল আদৌ কী সে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে?”

সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুঠানের পর এই দুই সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেন উপস্থিত প্রতিনিধিরা।

দুই উন্নয়ন সংস্থার ৭০তম বার্ষিক সভায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের ১৮৮টি সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

আগামী বার্ষিক সভা পেরুর রাজধানী লিমায় অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন প্যাট্রিক প্রুয়াইচ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে অতৃপ্ত মুহিত

তবে দুই সংস্থার বার্ষিক এই সভার ‘সংক্ষিপ্ত’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে অতৃপ্তি প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

উদ্বোধনী পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের আগের বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলোর উদ্বোধনী বেশ জমজমাট ছিল। এবার মাত্র তিন জন বক্তৃতা দিয়েই অনুষ্ঠান শেষ করেছে।

“আগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমেরিকার সরকারের প্রধানরা উপস্থিত থাকতেন। অনেক দেশের প্রতিনিধিরা সরাসরি বক্তৃতা দিতেন। এবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ বক্তৃতা দেননি। অন্য কোনো দেশের কোনো প্রতিনিধিও বক্তৃতা দেননি। প্রতিনিধিদের বক্তৃতা পাঠানো হয়েছে ভিডিও’র মাধ্যমে।

“আমি আমার বক্তৃতাও পাঠিয়েছি ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে।”

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “এবারের সভায় আমরা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে আগামী অর্থবছরের (২০১৫-১৬) জন্য বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছি। এবিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ্পে এইচ লি হোয়েরুর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

“আশা করছি আগামী অর্থবছরে আমরা বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে অন্যান্য ঋণ-সহায়তার পাশাপাশি অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে এই বাজেট সহায়তা পাব।”  

বাজেট সহায়তার ভালো দিক ব্যাখ্যা করে মুহিত বলেন, “এ সাপোর্টের তেমন কোনো শর্ত থাকে না। আমরা আমাদের বাজেটের মাধ্যমে যে কোনো খাতে এই অর্থ খরচ করতে পারি।”

‘বিশ্ব ব্যাংক আমাদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেয়’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “তারা যেমন ভালো পরামর্শ দেয়। তেমনি আমাদের কাছ থেকে সামাজিক সুরক্ষাসহ যে সব ক্ষেত্রে আমরা ভালো করেছি সে সব বিষয়ে আমাদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেয়।”

তিন দিনের এই সম্মেলনে আগামী এক বছরের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ-সহায়তার পরিমাণও ঠিক করবে আর্থিক খাতের মোড়ল এ দুই সংস্থা।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলনে ১৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুহিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দীনও এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।

এছাড়াও প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশের চার সাংবাদিক রয়েছেন।