প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
Published : 27 Dec 2023, 10:41 AM
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৯
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫
সবশেষ ম্যাচে কেটেছে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে বাংলাদেশের ওয়ানডে জয়ের অপেক্ষা। এবার একই লক্ষ্য নিয়ে বিশ ওভারের সিরিজ খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল।
ওয়ানডে জেতা মাঠ নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কেই হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। ওই ম্যাচের একই উইকেটে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে শুরু খেলা।
অন্য দুই সংস্করণের মতো টি-টোয়েন্টিতেও নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান নাজুক। নিউ জিল্যান্ডে ১১টি টি-টোয়েন্টি খেলে কখনও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৯টি ম্যাচ ছিল স্বাগতিক দলের বিপক্ষে।
একই অবস্থা ছিল ওয়ানডেতেও। শান্তর নেতৃত্বে উজ্জীবিত দল সেই ইতিহাস বদলে জিতেছে তৃতীয় ম্যাচ। সেই জয় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এবার তাসমান পাড়ের দেশটিতে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয়ের অভিযানে বাংলাদেশ।
আবারও কয়েনভাগ্য পাশে পেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কোনোরকম সংশয় ছাড়াই টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
একই মাঠে জেতা তৃতীয় ওয়ানডেতেও টস জিতে আগে বোলিং করেছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও এবার একই পথে হাঁটল তারা।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দারুণ শুরুর পর এবার টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পেলেন তানজিম হাসান। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ৮৯তম ক্রিকেটার ২১ বছর বয়সী পেসার।
একই ম্যাচ দিয়ে প্রায় ১৬ মাস পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছেন শেখ মেহেদি হাসান। সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সংস্করণে খেলেছিলেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
তিন পেসারে সাজানো পেস বিভাগে তানজিম ছাড়াও আছেন শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। প্রয়োজনে বোলিং করতে পারবেন সৌম্য সরকারও। স্পিনে মেহেদির সঙ্গে নেওয়া হয়েছে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে। দলের প্রয়োজনে হাত ঘোরাতে পারেন আফিফ হোসেনও।
সাম্প্রতিক সময়ে তিন সংস্করণেই নিয়মিত মুখ হয়ে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজকে নেওয়া হয়নি এই ম্যাচে। তবে একাদশে আছেন তার কাছাকাছি ধরনের দুই ক্রিকেটার মেহেদি ও আফিফ।
বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, রনি তালুকদার, তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান।
বোলিং বিভাগে একগাদা বিকল্প নিয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে নিউ জিল্যান্ড। পাঁচ নিয়মিত বোলার মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিলন, টিম সাউদি, ইশ সোধি, বেন সিয়ার্স ছাড়াও একাদশে আছেন তিন অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপস, জেমস নিশাম, ড্যারিল মিচেল।
নিউ জিল্যান্ড একাদশ: টিম সাইফার্ট, ফিন অ্যালেন, ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, মার্ক চ্যাপম্যান, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিল্ন, টিম সাউদি, ইশ সোধি, বেন সিয়ার্স।
প্রায় ১৬ মাস পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ছাপ রাখতে একদমই সময় নিলেন না শেখ মেহেদি হাসান। ম্যাচের প্রথম ওভারেই তিনি ফেরালেন নিউ জিল্যান্ডের ওপেনার টিম সাইফার্টকে।
অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে লাইন ধরে ডেলিভারি ইনসাইড আউট খেলার চেষ্টা করেন সাইফার্ট। ব্যাটের ভেতরের কানা পরাস্ত করে বল আঘাত করে অফ স্টাম্পে। তিন বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি কিপার-ব্যাটসম্যান।
তিন নম্বরে নেমেছেন ড্যারিল মিচেল। প্রথম ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১ রান।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে উড়ন্ত শুরু পেল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে শেখ মেহেদি হাসান উইকেট নেওয়ার পর জোড়া আঘাত করলেন শরিফুল ইসলাম। পরপর দুই বলে তিনি ফেরালেন ফিন অ্যালেন ও গ্লেন ফিলিপসকে।
অফ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকা ওভারের দ্বিতীয় বলে শরীরের বেশ দূর থেকে ড্রাইভের চেষ্টা করেন অ্যালেন। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে। দ্বিতীয় স্লিপে অনায়াস ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।
৩ বলে ১ রান করেন অ্যালেন।
চার নম্বরে নামা ফিলিপস প্রথম বলে মুখোমুখি হন লেগ স্টাম্পের ওপর ফুল লেংথ ধরনের ডেলিভারির। ব্যাট উঁচিয়ে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু হালকা ভেতরে ঢোকা বল আঘাত করে তার প্যাডে।
বাংলাদেশের জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কিছুক্ষণ ভেবে রিভিউ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল আঘাত করত স্টাম্পে। ফলে বদলে যায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।
সাইফার্টের মতো রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন ফিলিপস। এতে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ১ রানে ৩ উইকেট হারাল নিউ জিল্যান্ড।
২ ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২ রান। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল ও মার্ক চ্যাপম্যান।
ফেরার ম্যাচ রাঙিয়ে রাখার অভিযানে প্রথম দুই ওভারে দুই শিকার ধরলেন শেখ মেহেদি হাসান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয়বার বোলিংয়ে এসে তিনি বোল্ড করলেন ড্যারিল মিচেলকে।
অফ স্টাম্পের বাইরে হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া লেংথ ডেলিভারি টার্নের আশায় লফটেড স্ট্রেট ড্রাইভ খেলার চেষ্টা করেন মিচেল। লাইন ধরে রাখা বল মিচেলের ব্যাটের বাইরের কানা ঘেঁষে আঘাত করে অফ স্টাম্পে।
২ চারে ১৫ বলে ১৪ রান করে ফিরলেন মিচেল। পাঁচ ওভারের মধ্যে চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ে কঠিন বিপদে নিউ জিল্যান্ড।
পাঁচ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২২ রান। বিপর্যয় সামাল দেওয়ার অভিযানে ক্রিজে মার্ক চ্যাপম্যান ও জিমি নিশাম।
তানজিম হাসানের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত দিলেন মার্ক চ্যাপম্যান। দুই চার ও এক ছক্কায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিলেন ১৪ রান। এতে ম্যাচের প্রথমবার ছয়ে উঠল নিউ জিল্যান্ডের রান রেট।
ছয় ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৬ রান। চ্যাপম্যান ১৩ বলে ১৯ ও জিমি নিশাম ২ বলে ১ রানে খেলছেন।
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেওয়ার কারিগর শেখ মেহেদি হাসান ও শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভারেই টিম সাইফার্টকে ফেরান মেহেদি। পরের ওভারে শরিফুলের পরপর দুই বলের শিকার ফিন অ্যালেন ও গ্লেন ফিলিপস।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে ফিরে সাইফার্টের মতো ড্যারিল মিচেলকেও বোল্ড করেন মেহেদি।
দশম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই সাফল্য পেলেন রিশাদ হোসেন। মার্ক চ্যাপম্যানকে ফিরিয়ে তিনি ভাঙলেন ৩০ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
অফ স্টাম্পের বাইরে স্লাইডার ধরনের ডেলিভারি ইনসাইড আউট শট খেলেন চ্যাপম্যান। তবে ঠিকভাবে লাগেনি তার ব্যাটে। বল উঠে যায় আকাশে। ডিপ কভার পয়েন্টে ক্যাচ নেন তানজিম হাসান।
দুই চার ও এক ছক্কায় ১৯ বলে ১৯ রান করেছেন চ্যাপম্যান।
৯.২ ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৫০ রান। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান মিচেল স্যান্টনার। ১৫ বলে ১৪ রানে খেলছেন জিমি নিশাম।
শরিফুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরে করা ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি পুল করলেন মিচেল স্যান্টনার। ঠিকভাবে ব্যাটে-বলে হয়নি তার শট। শর্ট মিড উইকেটে থাকা সৌম্য সরকার সামনে ঝুঁকে বেশ নিচু হয়ে নিলেন দারুণ ক্যাচ।
মাঠের আম্পায়াররা নিশ্চিত ছিলেন না ক্যাচের ব্যাপারে। তাই সিদ্ধান্ত পাঠানো হয় টিভি আম্পায়ারের কাছে। অনেকবার রিপ্লে দেখে আউটের ঘোষণা দেন থার্ড আম্পায়ার।
স্যান্টনারের বিদায়ে ভাঙল ইনিংসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪১ রানের জুটি। ২ চারে ২২ বলে ২৩ রান করেছেন কিউই অধিনায়ক।
এর আগের ওভারেই অবশ্য ভাঙতে পারত জুটি। তানজিম হাসানের বাউন্সারে পুল করেন জিমি নিশাম। ডিপ স্কয়ার লেগে সীমানার অনেকটা ভেতরে ছিলেন আফিফ হোসেন। বল দেখে পেছনে যেতে যেতে আর নাগাল পাননি তিনি। ছক্কা পান নিশাম।
১৪.৩ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৯১ রান। ২৪ বলে ৩২ রানে খেলছেন নিশাম। নতুন ব্যাটসম্যান অ্যাডাম মিল্ন।
জিমি নিশামের ব্যাটে এগোচ্ছে নিউ জিল্যান্ড। একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের গতি বাড়ানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
রিশাদ হোসেনের করা ষোড়শ ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মেরেছেন নিশাম। এর সঙ্গে একশ পূর্ণ হয়েছে স্বাগতিকদের।
দশম ওভারের প্রথম বলে পঞ্চাশ রান করার পর একশতে যেতে সাত ওভারের কম লাগল কিউইদের।
১৬ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১০৩ রান। ২৭ বলে ৪২ রানে খেলছেন নিশাম। অ্যাডাম মিল্ন অপরাজিত ১ রানে।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জিমি নিশামকে আউট করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। সপ্তদশ ওভারে মুস্তাফিজের করা দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে স্টেডিয়ামের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন নিশাম।
পরের বলেই প্রতিশোধ মুস্তাফিজের। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল টসে আবারও বড় শটের চেষ্টায় সোজা ডিপ কভার পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দেন নিশাম।
ফেরার আগে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
১৭ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১১১ রান। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান অ্যাডাম মিল্ন ও টিম সাউদি।
প্রথম তিন বলে দারুণ বোলিং করা শরিফুল ইসলাম শেষ ওভারেও পেতে পারতেন সাফল্য। কিন্তু তার ওভারে তিন বলের মধ্যে হাতছাড়া হলো দুই সুযোগ।
ওভারের তৃতীয় বলে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি বড় শটের চেষ্টায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন টিম সাউদি। পয়েন্ট থেকে গালি অঞ্চলের দিকে দৌড়ে বলের কাছাকাছি গেলেও সেটির গতিপথ বুঝতে পারেননি রিশাদ হোসেন। বেঁচে যান সাউদি।
এক বল পর প্রায় একই ধরনের ডেলিভারি আবারও বড় শটের চেষ্টা করেন সাউদি। এবার ক্যাচ ওঠে শর্ট এক্সট্রা কভারের কাছাকাছি জায়গায়। পয়েন্টে থাকা রিশাদ ও এক্সট্রা কভারে থাকা রনি তালুকদার শুধুই তাকিয়ে দেখেন সেটি। বল পড়ে যায় মাটিতে।
দুইবার উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েও হতাশায় ডোবা শরিফুলের ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারেন অ্যাডাম মিল্ন।
১৮ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১২৪ রান।
শরিফুল ইসলামের বলে দুবার বাঁচলেও, পরের ওভারে আর রক্ষা হলো না টিম সাউদির। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিলেন তিনি।
১ চারে ১০ বলে ৮ রান করেছেন সাউদি। ওই ওভারে স্রেফ ১ রান দিয়েছেন মুস্তাফিজ। সব মিলিয়ে তার বোলিং বিশ্লেষণ ৪-০-১৫-২।
১৯ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১২৫ রান।
অভিষেকে নিজের শেষ ওভারে প্রথম উইকেট পেলেন তানজিম হাসান। বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হলেন ইশ সোধি। আম্পায়ার প্রথমে আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে তার বিদায় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
এই উইকেট ছাড়া অভিষেক ইনিংস খুব একটা ভালো কাটেনি তানজিমের। শেষ ওভারের শেষ বলে ছক্কাসহ ৪ ওভারে মোট ৪৫ রান দিয়েছেন তরুণ পেসার। যা ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে।
ইনিংসের শেষ বলের ছক্কায় নিউ জিল্যান্ড থেমেছে ৯ উইকেটে ১৩৪ রানে। তাসমান পাড়ের দেশটিতে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয়ের খোঁজে 'ছোট' লক্ষ্যই পেয়েছে বাংলাদেশ।
শেখ মেহেদি হাসান ও শরিফুল ইসলামের দারুণ শুরুর পর মুস্তাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ডকে বেশি দূর যেতে দিল না বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ১৩৪ রান।
নিউ জিল্যান্ডের মাঠে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের জন্য তাই তুলনামূলক ছোট লক্ষ্যই পেল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে কখনও আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩৫ রানের কম করে ম্যাচ জিততে পারেনি কিউইরা।
১৬ মাস পর একাদশে ফিরে প্রথম ওভারেই আঘাত করেন মেহেদি। পরের ওভারে জোড়া শিকার ধরেন শরিফুল। স্রেফ ১ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। এর আগে কখনও এত কম রানে ৩ উইকেট হারায়নি তারা।
পাওয়ার প্লেতে আরও একবার উইকেট উৎসবে শামিল হন মেহেদি। স্রেফ ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় কিউইরা। সেখান থেকে জিমি নিশামের ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে একশ পার করে তারা।
মাঝের ওভারে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মুস্তাফিজ। নিশামের পর টিম সাউদির উইকেট নেন তিনি।
শরিফুল নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। মেহেদি ও মুস্তাফিজ ধরেন ২টি করে শিকার। ৪ ওভারে মেহেদি ১৪ ও মুস্তাফিজ দেন ১৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (অ্যালেন ১, সাইফার্ট ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিল্ন ১৬*, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১*; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, তানজিম ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)
টিম সাউদির করা প্রথম ওভারে দারুণ শটে এক্সট্রা কভার দিয়ে ছক্কা মারলেন রনি তালুকদার। পরের ওভারে অ্যাডাম মিল্নের বলে ছক্কার চেষ্টায় উইকেট দিয়ে এলেন তিনি।
অফ স্টাম্পের বাইরে গতিময় ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে পুল খেলার চেষ্টা করেন রনি। ব্যাটের ওপরের দিক বল উঠে যায় আকাশে। মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন সাউদি।
৭ বলে ১০ রান করেছেন রনি। তিন নম্বরে নেমেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় বলে নিয়ন্ত্রিত পুল শটে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খুলেছেন তিনি।
২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৭ রান।
জেমস নিশামের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল, মারার মতোই ছিল। নাজমুল হোসেন শান্ত মেরেছিলেনও সজোরে। কিন্তু পাঠাতে পারেননি গ্যাপে, আবার তুলতে পারেননি যথেষ্ট উচ্চতায়। ক্যাচ নেন মিচেল স্যান্টনার।
শান্তর বিদায়ে ভাঙল ২০ বল স্থায়ী ২৫ রানের জুটি।
চারটি চারে বাংলাদেশ অধিনায়ক ১৪ বলে করেন ১৯ রান।
৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩৮। ৯ বলে ৭ রানে খেলছেন লিটন দাস। ক্রিজে তার সঙ্গী সৌম্য সরকার।
দুই উইকেট হারালেও প্রথম ছয় ওভারে রানের চাহিদা পূরণ করেছে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে তাদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪২ রান। বাকি ৮৪ বলে করতে হবে আর ৯৩ রান।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন রনি তালুকদার। ঝড়ো শুরুর আভাস দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি ইনিংস বড় করতে। ক্রিজে এখন লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকার।
পাওয়ার প্লে শেষ হতেই ছক্কা মেরে ইশ সোধিকে বোলিংয়ে স্বাগত জানালেন সৌম্য সরকার। পরের বলে চার মেরে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পূর্ণ করলেন বাংলাদেশের পঞ্চাশ রান।
নিজের ওভারের প্রথম বলটি ওয়াইড করেন সোধি। পরের বলে দারুণ সুইপ শটে বড় ছক্কা মারেন সৌম্য। অফ স্টাম্পের ওপর করা পরের ডেলিভারি তিনি বাউন্ডারি মারেন রিভার্স সুইপে।
সাত ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫৬ রান। জয়ের জন্য ৭৮ বলে প্রয়োজন ৭৯ রান। সৌম্য ৯ বলে ১৪, লিটন কুমার দাস ১২ বলে ১০ রানে অপরাজিত।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চেষ্টায় নিজের উইকেট হারালেন সৌম্য সরকার। বেন সিয়ার্সের স্টাম্পের ওপর করা গতিময় ডেলিভারি ক্রস ব্যাটে খেলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে লাগাতে পারেননি। স্টাম্প ভাঙতেই উল্লাসে মাতেন সিয়ার্স।
২ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান করেছেন সৌম্য সরকার। পাঁচ নম্বরে নেমেছেন তাওহিদ হৃদয়।
১০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৭৩ রান। বাকি দশ ওভারে করতে হবে আর ৬২ রান। লিটন কুমার দাস অপরাজিত ২০ বলে ১৬ রানে।
ধীরে ধীরে জয়ের পথে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। হুট করেই যেন এতে বাধ সাধলেন তাওহিদ হৃদয়। অনেকটা ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে তিনি ধরলেন ড্রেসিং রুমের পথ।
মিচেল স্যান্টনারের অফ স্টাম্পের বাইরে কিছুটা টেনে দেওয়া ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আলতো ব্যাটে সোজা শর্ট এক্সট্রা কভারে দাঁড়ানো টিম সাউদি বরাবর খেলেন হৃদয়। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি ফিল্ডার।
১ ছক্কায় ১৮ বলে ১৯ রান করেছেন হৃদয়। ছয় নম্বরে নেমেছেন আফিফ হোসেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে ২৭ বলে ২২ রানে খেলছেন ওপেনার লিটন কুমার দাস।
১৪ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৯৭ রান। শেষ ৬ ওভারে করতে হবে আর ৩৮ রান।
অল্পেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরলেন আফিফ হোসেন। টিম সাউদির শর্ট বলে পুল করার চেষ্টায় বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন আফিফ। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ নেন জিমি নিশাম।
৬ বলে স্রেফ ১ রান করেছেন আফিফ। সাত নম্বরে নেমেছেন শেখ মেহেদি হাসান। অন্য প্রান্তে ২৭ বলে ২২ রানে খেলছেন লিটন কুমার দাস।
১৪.৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৯৭ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৩ বলে ৩৮ রান।
টিম সাউদির ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় পরাস্ত লিটন কুমার দাস। বল তার প্যাডে লাগতেই নিউ জিল্যান্ডের জোরাল আবেদন। কিছুক্ষণ ভেবে আউটের সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার।
রিভিউ নিতে খুব একটা সময় নেননি লিটন। রিপ্লেতে দেখা যায়, বলের 'পিচিং' ও 'ইমপ্যাক্ট' ঠিক থাকলেও 'উইকেট' এর ক্ষেত্রে বল চলে যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। তাই বদলে যায় মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। তখন ২২ রানে ছিলেন লিটন।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৯৮ রান। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন আর ৩৭ রান।
অ্যাডাম মিল্নের বলে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের একশ রান পূর্ণ করলেন লিটন কুমার দাস। সপ্তম ওভারে পঞ্চাশ করার পর একশতে যেতে প্রায় নয় ওভার লাগল বাংলাদেশের।
১৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১০৭ রান। জয়ের জন্য বাকি ২৪ বলে প্রয়োজন ২৮ রান।
লিটন ৩১ বলে ২৮ ও শেখ মেহেদি হাসান ৫ বলে ৪ রানে খেলছেন।
বেন সিয়ার্সের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি স্কুপ করলেন লিটন কুমার দাস। ফাইন লেগ ঠিক সীমানায় দাঁড়ানো ছিলেন ইশ সোধি। বলের উচ্চতা বুঝে যথাযথ জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচও নিলেন তিনি।
কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে তিনি পা দিয়ে বসেন সীমানার কুশনে। ফলে বিফলে যায় সোধির ক্যাচ। ছক্কা পেয়ে যান লিটন। এর আগের বলে লং অফ দিয়ে দারুণ শটে বাউন্ডারি মারেন বাংলাদেশের কিপার-ব্যাটসম্যান।
এই দুই বাউন্ডারিতে রানের চাহিদা আবার চলে এসেছে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে।
১৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১২৫ রান। শেষ দুই ওভারে করতে হবে আর ১০ রান। লিটন ৩৬ বলে ৪২, শেখ মেহেদি হাসান ১২ বলে ৭ রানে অপরাজিত।
দারুণ বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ডকে অল্পে আটকে রাখার পর লিটন কুমার দাসের দায়িত্বশীল ইনিংসে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। এই সংস্করণে নিউ জিল্যান্ডের মাঠে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দশম ও সব মিলিয়ে দ্বাদশ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি।
রান তাড়ায় সফরকারীরা কিছুটা গড়বড় করলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত দলের জয় নিশ্চিত করেন লিটন। উনবিংশ ওভারে অ্যাডাম মিল্নের তিন বলে ছক্কা ও চারে ১২ রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন বল হাতে দুর্দান্ত দিন কাটানো শেখ মেহেদি হাসান।
নিউ জিল্যান্ডের করা ১৩৪ রান ৫ উইকেট হারিয়ে ৮ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থেকেছেন লিটন। মেহেদি করেছেন ১টি করে চার-ছক্কায় ১৬ বলে ১৯ রান।
টস জয় থেকে শুরু করে ম্যাচের বাকি অংশে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখে বাংলাদেশ। নতুন বলে মেহেদি, শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্রেফ ২০ রানে ৪ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড।
পরে জিমি নিশাম ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেললেও খুব একটা বড় হয়নি নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ। মার্ক চ্যাপম্যান, মিচেল স্যান্টনাররা চেষ্টা করলেও উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
শরিফুল নেন ৩ উইকেট। মেহেদি ও মুস্তাফিজুর রহমান ধরেন ২টি করে শিকার।
রান তাড়ায় রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্তরা ফেরেন পাওয়ার প্লের ভেতরেই। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানের চাহিদা বলের নিচে নামান সৌম্য সরকার। তবে তিনি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
একপ্রান্তে অবিচল থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেন লিটন। একপর্যায়ে ২৮ বলে স্রেফ ২২ রানে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে পরের ৮ বলে নেন ২০ রান।
ফেরার ম্যাচ নায়ক মেহেদি। কিপটে বোলিংয়ে ১৪ রানে ২ উইকেটের পর অপরাজিত ১৯ রানের ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (অ্যালেন ১, সাইফার্ট ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিল্ন ১৬*, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১*; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, তানজিম ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫ (লিটন ৪২*, রনি ১০, শান্ত ১৯, সৌম্য ২২, হৃদয় ১৯, আফিফ ১, মেহেদি ১৯*; সাউদি ৪-০-১৬-১, মিল্ন ৩.৪-০-৩৯-১, নিশাম ১-০-৭-১, সিয়ার্স ৪-০-৩৬-১, সোধি ২-০-২০-০, স্যান্টনার ৪-০-১৬-১)
গত বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে প্রথম টেস্ট জেতে বাংলাদেশ। তখনও অধরা ছিল তাসমান পাড়ের দেশটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জয়। চলতি বছরের শেষভাগে এসে সেটিও পেল বাংলাদেশ।
সাদা বলের দুই সিরিজ খেলতে নিউ জিল্যান্ড যাওয়ার আগে জয়ের অপেক্ষা ঘোচানোর প্রত্যয় জানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের পর এবার টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচেই যেন সেই লক্ষ্য পূরণ করেছেন তিনি।
সবশেষ এই জয়ে এখন তিন সংস্করণেই নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। পূর্ণ করল তিন সংস্করণেই জয়ের চক্র।