এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল হতাশার। সুপার টুয়েলভে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে তারা ছিটকে পড়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে নাটকীয়ভাবে জায়গা করে নেয় সেমি-ফাইনালে।
পাকিস্তানের পারফরম্যান্স আসর জুড়ে যেমনই থাকুক, এই দল যে ভয়ঙ্কর ভালো করেই জানা নিউ জিল্যান্ডের। তাই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে সতর্ক থেকে মাঠের লড়াইয়ে নামবে তাসমান সাগর পাড়ের দলটি।
নিউ জিল্যান্ড বিশ্বকাপ শুরু করে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে। সবার আগে তারা নিশ্চিত করে সেমি-ফাইনাল। ছন্দে থাকা দলটির বিপক্ষে মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে একদমই ভাবছে না পাকিস্তান। নিজেদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছে ২০০৯ আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর পাকিস্তান দলের মেন্টর ম্যাথু হেইডেন বলেছিলেন, এখন তাদের মুখোমুখি হতে ভয়ে থাকবে অন্যরা। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান তারকা ব্যাটসম্যান বলেন, তাদের এবারের ‘রোলার কোস্টার’ যাত্রা বেশ উপভোগ্য।
আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে আরও একবার প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠের লড়াইয়ে নামছে নিউ জিল্যান্ড ও পাকিস্তান। শেষ চারে দুই দলের বিগত দেখায় এগিয়ে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়া আসরে সমতা টানার সুযোগ নিউ জিল্যান্ডের সামনে।
সিডনিতে বুধবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের প্রথম সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি নিউ জিল্যান্ড ও পাকিস্তান। ফাইনালে ওঠা লড়াই শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে এখন পর্যন্ত পাঁচবার দেখা হয়েছে এই দুই দলের। যেখানে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে আছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে শেষ চারে তিনবারের দেখায় প্রতিবারই জয় এশিয়ার দলটির।
সবশেষ ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে দেখা হয় তাদের। যেখানে ৫ উইকেটে জেতে নিউ জিল্যান্ড। শেষ চারে দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে। কিউইদের ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় পাকিস্তান। পরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে জিতে শিরোপা উল্লাস করে ইমরান খানের দল।
১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালেও নিউ জিল্যান্ডকে হারায় পাকিস্তান, ৯ উইকেটে। কিউইরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জেতে ২০০০ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফিতে, ৪ উইকেটে। পরে ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ চারের লড়াইয়ে নিউ জিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দেয় পাকিস্তান।
ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে টস জিতলেন কেন উইলিয়ামসন। অনুমিতভাবে নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক নিলেন ব্যাটিং। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম বললেন, টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন তিনিও।
সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিল নিউ জিল্যান্ড। পাকিস্তান লড়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। দুই দলই সেমি-ফাইনালে মাঠের লড়াইয়ে নামছে আগের ম্যাচের অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে।
নিউ জিল্যান্ড একাদশ: ফিন অ্যালেন, ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), গ্লেন ফিলিপস, ড্যারিল মিচেল, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, ইশ সোধি, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট।
পাকিস্তান একাদশ: মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ হারিস, শান মাসুদ, ইফতিখার আহমেদ, শাদাব খান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাহিন শাহ আফ্রিদি।
শুরু থেকেই উত্তেজনা ছড়াল সেমি-ফাইনালে। প্রথম বলে চার মেরে শুরু করলেন ফিন অ্যালেন। পরের বলে এলবিডব্লিউর থেকে বাঁচলেন রিভিউ নিয়ে। কিন্তু তৃতীয় বলে আর টিকতে পারলেন নিউ জিল্যান্ড ওপেনার। ফিরলেন সেই এলবিডব্লিউ হয়েই।
শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ম্যাচের প্রথম বলটি ছিল ফুল লেংথ। লং-অন দিয়ে চার মারেন অ্যালেন। পরের বল লাগে প্যাডে, অনেকটা সময় অপেক্ষার পর পাকিস্তানের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন অ্যালেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগেছিল তার ব্যাটে।
পরের বলটিও প্রায় একই লাইনে করেন আফ্রিদি। এবার আর ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি অ্যালেন। আবারও পাকিস্তানের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। এবারও রিভিউ নেন কিউই ওপেনার, কিন্তু সফল হননি। রিভিউ হারায় নিউ জিল্যান্ড।
১ চারে ৩ বলে ৪ রান নিয়ে ফেরেন ডানহাতি বিস্ফোরক ওপেনার অ্যালেন।
প্রথম ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৬। ডেভন কনওয়ের সঙ্গে উইকেটে কেন উইলিয়ামসন।
ম্যাচের তৃতীয় বলেই ফিন অ্যালেনের বিদায়। শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে পথে ফেরানোর চেষ্টায় ছিলেন কেন উইলিয়ামসন ও ডেভন কনওয়ে। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ বলে রান আউটে কনওয়ের বিদায়ে আরও চাপে পড়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।
হারিস রউফের ওভারের শেষ বলটি মিড-অফে ঠেলে সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দেন কনওয়ে। দারুণ ক্ষিপ্রতায় বল প্রথমবারে ধরেই নন-স্ট্রাইক প্রান্তে সরাসরি থ্রো করেন শাদাব খান। বল যখন স্টাম্প ভাঙে, তখনও দাগের বাইরে ছিলেন কনওয়ে।
৩ চারে ২০ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফিরলেন নিউ জিল্যান্ডের এই ওপেনার। ভাঙে উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার ৩৪ রানের জুটি।
প্রথম ৬ ওভার দারুণ কেটেছে পাকিস্তানের। দুই উইকেট তুলে নিয়ে তারা দিয়েছে কেবল ৩৮ রান।
১৩ বলে ১৩ রানে খেলছেন উইলিয়ামসন। ক্রিজে তার সঙ্গী গ্লেন ফিলিপস।
নিজের প্রথম ওভারেই দলকে জোড়া উইকেট এনে দিতে পারতেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। কেন উইলিয়ামসনকে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করা এই স্পিনার অবশ্য বিদায় করেছেন গ্লেন ফিলিপসকে।
অষ্টম ওভারে আক্রমণে আসা নাওয়াজের করা দ্বিতীয় বলটি সোজা বোলারের হাতে মারেন ফিলিপস। বল ধরে নন-স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেটে ভেঙে দিলেই আউট হয়ে যেতেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তা করেননি নাওয়াজ, পরে পোড়েন আক্ষেপে। ১৫ রানে বেঁচে যান নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক।
সেই হতাশা অবশ্য কেটে যায় তিন বল পরই। দলকে এনে দেন তিনি ফিলিপসের উইকেট। এবার বোলারকে সহজ ক্যাচ দেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
১ চারে ৮ বলে ৬ রান করে ফেরেন ফিলিপস।
৮ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯। ক্রিজে উইলিয়ামসনের সঙ্গী ড্যারিল মিচেল।
দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে চেপে ধরেছে পাকিস্তান। প্রথম ভাগে নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই আছে।
১০ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৫৯। ২৪ বলে ২৩ রানে খেলছেন কেন উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেলের রান ৫ বলে ৫।
ঘটনাবহুল প্রথম ওভারেই পাকিস্তানকে সাফল্য এনে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এই পেসার ফিরিয়ে দেন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেনকে। পাওয়ার প্লের শেষ বলে রান আউট হন ডেভন কনওয়ে।
অষ্টম ওভারে কেন উইলিয়ামসনকে রান আউটেরর সুযোগ হাতছাড়া করলেও পরে গ্লেপ ফিলিপসকে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন মোহাম্মদ নাওয়াজ।
এক প্রান্তে উইকেট পড়লেও কেন উইলিয়ামসন ধরে রেখেছেন আরেক প্রান্ত। তাকে ফেরানোর চেষ্টায় একটি রিভিউ হারাল পাকিস্তান।
ওভারের প্রথম বলটি পুল শটে ছক্কায় উড়িয়ে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে স্বাগত জানান উইলিয়ামসন। পরের বলটি লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে খেলতে পারেননি। এলবিডব্লিউর আবেদন করে পাকিস্তান। বলের উচ্চতা বিবেচনায় নিয়ে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
শেষ মুহূর্তে এসে রিভিউ নেয় পাকিস্তান। রিপ্লেতে দেখে যায় বল লেগেছে উইলিয়ামসনের উরুতে। যা চলে যেত স্টাম্পের অনেক উপর দিয়ে। রিভিউ হারায় পাকিস্তান।
১৩ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৯০। ১ ছক্কায় ৩৩ বলে ৩৬ রানে খেলছেন উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেলের রান ২ চারে ১৪ বলে ২২।
চতুর্দশ ওভারের পঞ্চম শাদাব খানকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ালেন ড্যারিল মিচেল। তাতে দলীয় শতরানে পা রাখল নিউ জিল্যান্ড। সঙ্গে পঞ্চাশ স্পর্শ করল কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার জুটির রান।
৩৫ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিতে অগ্রণী মিচেল। তার অবদান ৩০, উইলিয়ামসনের ১৯।
শুরু থেকে চাপে পড়া দলকে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে পথে ফেরান কেন উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে গড়েন পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি। যখন দ্রুত রান তোলের সময় তখনই তাকে বিদায় করে দিয়ে এই জুটির প্রতিরোধ ভাঙলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
নিজের কোটার শেষ ওভারটি করতে সপ্তদশ ওভারে আসেন আফ্রিদি। বাঁহাতি এই পেসারের দ্বিতীয় বলটি স্টাম্প ছেড়ে স্কুপ শট খেলার চেষ্টা করেন উইলিয়ামসন। চতুরতার সঙ্গে বলটি স্লোয়ার করেন আফ্রিদি। তাতে ব্যাটেই বল লাগাতে পারেননি কিউই অধিনায়ক। বল ছোবল দেয় স্টাম্পে।
একটি করে ছক্কা-চারে ৪২ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন উইলিয়ামসন। ভাঙে মিচেলের সঙ্গে তার ৬৮ রানের জুটি।
১৭ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ১২৩। মিচেল খেলছেন ৩৮ রানে। ক্রিজে তার সঙ্গী জেমস নিশাম।
হারিস রউফের ফুলটসটি লেগ সাইডে খেলেই দুই রান নিলেন ড্যারিল মিচেল। তাতে ফিফটিতে পা রাখলেন নিউ জিল্যান্ডের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৩২ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পথে তিনি মারেন একটি ছক্কা ও ৩ চার।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে এটি মিচেলের তৃতীয় ফিফটি। দুটিই এলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আসরে ইংল্যান্ডকে হারানোর পথে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
শুরুতেই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে লড়ার মতো পুঁজি এনে দিলেন কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। দুইজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে দেড়শ পার করেছে নিউ জিল্যান্ডের রান।
২০ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ১৫২।
এক ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ বলে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মিচেল। একটি করে ছক্কা-চারে উইলিয়ামসন করেন ৪২ বলে ৪৬। তাদের দুইজনের জুটিতে আসে ৫০ বলে ৬৮ রান।
ম্যাচের তৃতীয় ওভারে ফিন অ্যালেনের উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে চেপে ধরেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পরে এই পেসার ফেরান উইলিয়ামসনকেও। ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তার শিকার ওই দুই উইকেটই।
একটি উইকেট নেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। নিজের প্রথম ওভারে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন তিনি গ্লেপ ফিলিপসকে। ওই ওভারে ১৫ রানে থাকা উইলিয়ামসনকে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।
তবে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেছে পাকিস্তান। বাঁচিয়েছে বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি। মিড-অফ থেকে দুর্দান্ত এক সরাসরি থ্রোয়ে ২১ রান করা ডেভন কনওয়েকে ফেরান শাদাব খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫২/৪ (অ্যালেন ৪, কনওয়ে ২১, উইলিয়ামসন ৪৬, ফিলিপস ৫, মিচেল ৫৩*, নিশাম ১৬*; আফ্রিদি ৪-০-২৪-২, নাসিম ৪-০-৩০-০, রউফ ৪-০-৩২-০, ওয়াসিম ২-০-১৫-০, শাহাব ৪-০-৩৩-০, নাওয়াজ ২-০-১২-১)
নিউ জিল্যান্ডের মতো প্রথম ওভারেই উইকেট হারাতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু বাবর আজমের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি ডেভন কনওয়ে।
ট্রেন্ট বোল্টের করা ওভারের চতুর্থ বলটি সোজা খেলেন বাবর। হালকা সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলটি ব্যাটের কানা নিয়ে যায় উইকেটের পেছনে। ডানদিকে ঝাপিয়েও বল গ্লাভসে নিতে পারেননি কনওয়ে।
শূন্য রানে জীবন পান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর।
কিউইদের মতো পাকিস্তানের ইনিংসও শুরু হয়েছে প্রথম বলে চার দিয়ে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওই বাউন্ডারিতে প্রথম ওভার শেষে তাদের রান ৭।
রান তাড়ায় দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন শূন্য রানে জীবন পাওয়া বাবর আজম। তাদের দুইজনের ব্যাটে ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৩২ রান তুলে ফেলেছে পাকিস্তান।
৩ চারে ১১ বলে ১৮ রানে খেলছেন রিজওয়ান। তার তিন চারের দুটিই এসেছে ট্রেন্ট বোল্টের করা তৃতীয় ওভারে। ওই ওভারে আরেকটি চার মারেন বাবর। পাকিস্তান অধিনায়ক খেলছেন ২ চারে ১৪ রানে।
পাওয়ার প্লের সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। দুই ওপেনারের ব্যাটে রান তাড়ায় দুর্দান্ত শুরু পেয়েছে পাকিস্তান।
প্রথম ৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৫। ৫ চারে ১৭ বলে রিজওয়ান খেলছেন ২৮ রানে। শূন্য রানে জীবন পাওয়া বাবরের রান চারটি চারে ১৯ বলে ২৫।
বাবর ও রিজওয়ানের উদ্বোধনী জুটি পঞ্চাশ ছুঁয়েছে ৩৪ বলে। যেখানে রিজওয়ানের অবদান ২৭ রান এবং বাবরের ২৪।
মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে মরিয়া নিউ জিল্যান্ড রিভিউ নিয়েও সফল হলো না। নষ্ট হলো তাদের একটি রিভিউ।
সপ্তম ওভারের শেষ বলটি ব্যাটে খেলতে ব্যর্থ হন বাবর। বল প্যাডে লাগলে আবেদন করে নিউ জিল্যান্ড। আম্পায়ার সাড়া না দিলে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন কেন উইলিয়ামসন। রিপ্লেতে দেখে যায়, বল ব্যাটে লাগেনি ঠিকই, কিন্তু বল চলে যেত মিডল স্টাম্পের ওপর দিয়ে।
৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৩।
ইনিংসের চতুর্থ বলেই বিদায় নিতে পারতেন বাবর আজম। শূন্য রানে জীবন পেয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন অধিনায়ক। সঙ্গে মোহাম্মদ রিজওয়ানও ছড়াচ্ছেন আলো। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের দৃঢ় ভিত পেয়ে গেছে পাকিস্তান।
১০ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৭ রান। ৫ চারে ২৬ বলে ৪১ রানে খেলছেন রিজওয়ান। ৩৪ বলে ৪৩ রানে থাকা বাবরের চার ৬টি।
জয়ের জন্য শেষ ৬০ বলে পাকিস্তানের চাই আর ৬৬ রান।
ছন্দে ছিলেন না বাবর আজম। তার ফর্ম নিয়ে চলছিল আলোচনা। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে নিজেকে মেলে ধরে পাকিস্তান অধিনায়ক উপহার দিলেন ফিফটি।
শূন্য রানে অবশ্য ফিরতে পারতেন বাবর। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩৮ বলে ৮ চারে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩০তম পঞ্চাশ করলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি বাবরের পঞ্চম ফিফটি।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এনিয়ে চতুর্থবার পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন বাবর।
মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের জুটি ভাঙতেই পারছেন না নিউ জিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে আরেকটি শতরানের জুটি উপহার দিলেন পাকিস্তানের এই দুই ব্যাটসম্যান।
তাদের জুটির রান একশ ছুঁয়েছে ৭০ বলে। যেখানে বাবরের অবদান ৫১, রিজওয়ানের ৪৫।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটির রেকর্ড আগে থেকেই তাদের। এবার নবম একশ রানের জুটি গড়ে সেটিকে আরও সমৃদ্ধ করলেন তারা।
উইকেটটি পেতে পারতেন ট্রেন্ট বোল্ট প্রথম ওভারেই। শূন্য রানে জীবন পেয়ে ফিফটি করা বাবর আজম ফিরলেন তার বলেই।
আগের ওভারেই এবারের আসরে নিজের প্রথম ফিফটি উপহার দেন বাবর। পঞ্চাশের পর তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি বোল্ট। ত্রয়োদশ ওভারের চতুর্থ বলটি ছক্কার চেষ্টায় ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি বাবর। লং-অনে সহজ ক্যাচ নেন ড্যারিল মিচেল।
৭ চারে ৪২ বলে ৫৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাবর। ভাঙে ১০৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
১৩ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ১ উইকেটে ১০৯। ক্রিজে রিজওয়ানের সঙ্গী মোহাম্মদ হারিস।
বাবর আজমের পর ফিফটি করলেন পাকিস্তানের আরেক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৩তম পঞ্চাশে পা রাখেন তিনি ৩৬ বলে। তার ইনিংসে চার ৫টি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে এটি প্রথম ফিফটি। সব মিলিয়ে ২০ ওভারের বৈশ্বিক আসরে চতুর্থ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন দ্বিতীয়বার।
পাকিস্তানের আরেকটি উইকেট নিতে পারত নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু টিম সাউদির বলে পয়েন্টে মোহাম্মদ হারিসের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মিচেল স্যান্টনার।
১ চারে তখন ১১ রানে খেলছিলেন হারিস।
পঞ্চাশ ছাড়ানো দারুণ এক ইনিংসে দলকে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন ঠিকই। শেষ পর্যন্ত থেকে কাজ শেষ করে আসতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান।
তিন ওভারে যখন ২১ রান চাই পাকিস্তানের, তখন সাজঘরে ফিরলেন দলটির কিপার ব্যাটসম্যান।
সপ্তদশ ওভারের শেষ বলটি অফ সাইডে ফুলটস করেন ট্রেন্ট বোল্ট। উড়িয়ে মেরে ডিপ কাভারে গ্লেন ফিলিপসের হাতে ধরা পড়েন রিজওয়ান। দেখে মনে হচ্ছিল বিমার, তাই তাকে রান আউটও করে নিউ জিল্যান্ড। থার্ড আম্পায়ার অবশ্য ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্তই জানান।
৫ চারে ৪৩ বলে ৫৭ রান করেন রিজওয়ান।
টিম সাউদির বল স্ট্রেইট ড্রাইভ করেই দৌড় লাগালেন শান মাসুদ। রান পূর্ণ হতেই উদযাপনে ফেটে পড়লেন পাকিস্তান দলের ক্রিকেটাররা। যেন আবেগ ছুঁয়ে গেল তাদের। হবেই বা না কেন, ১৩ বছর পর যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে পারল তারা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। প্রতিপক্ষের ১৫২ রান পেরিয়ে যায় তারা ৫ বল বাকি থাকতে।
গত পাঁচ আসরের তিনটিতেই শেষ চারে খেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু কোনোবারই যেতে পারেনি ফাইনালে। ২০০৯ সালে সবশেষ ফাইনাল খেলে তারা। যেখানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ঘরে তোলে প্রথম শিরোপা।
পাকিস্তানের এই জয়ের নায়ক দুইজন; মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। উদ্বোধনী জুটিতে ১০৫ রান করে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন তারা।
৭ চারে ৪২ বলে ৫৩ রান করেন শূন্য রানে জীবন পাওয়া বাবর। ৫ চারে ৪৩ বলে ৫৭ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন রিজওয়ান।
এর আগে নিউ জিল্যান্ডে লড়ার মতো পুঁজি এনে দেন ড্যারিল মিচেল ও কেন উইলিয়ামসন। একটি করে ছক্কা-চারে ৪২ বলে ৪৬ রান করেন উইলিয়ামসন। মিচেল অপরাজিত থাকেন এক ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ বলে ৫৩ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫২/৪ (অ্যালেন ৪, কনওয়ে ২১, উইলিয়ামসন ৪৬, ফিলিপস ৫, মিচেল ৫৩*, নিশাম ১৬*; আফ্রিদি ৪-০-২৪-২, নাসিম ৪-০-৩০-০, রউফ ৪-০-৩২-০, ওয়াসিম ২-০-১৫-০, শাহাব ৪-০-৩৩-০, নাওয়াজ ২-০-১২-১)
পাকিস্তান: ১৯.১ ওভারে ১৫৩/৩ (রিজওয়ান ৫৭, বাবর ৫৩, হারিস ৩০, মাসুদ ৩*, ইফতিখার ০*; বোল্ট ৪-০-৩৩-২, সাউদি ৩.১-০-২৪-০, ফার্গুসন ৪-০-৩৭-০, স্যান্টনার ৪-০-২৬-১, সোধি ৪-০-২৬-০)