দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের দুর্দান্ত জয়ে সেমি-ফাইনালের আশা জাগল বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে খেলবে সাকিব আল হাসানের দল।
এই ম্যাচে জিতলে সেমি-ফাইনালে যাবে পাকিস্তানও।
দক্ষিণ আফ্রিকার হারে শেষ চার নিশ্চিত হয়ে গেছে ভারতের।
খুব কাছে গিয়েও হারানো যায়নি ভারতকে। তবে সেই ম্যাচ থেকেই উপমহাদেশের আরেক পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারানোর আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে বাংলাদেশ।
মঞ্চ সেই একই। ভারতের বিপক্ষে শেষ বলের লড়াইয়ে যেখানে হেরেছে বাংলাদেশ, সেই অ্যাডিলেইড ওভালেই খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। রোববার ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়। চলতি আসরে এই প্রথম একই মাঠে দুটি ম্যাচ খেলছে সাকিব আল হাসানের দল।
শক্তি-সামর্থ্যে পাকিস্তান এগিয়ে অনেকটা। সবশেষ ম্যাচে তারা হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে। বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিংবা সার্বিক, সব রেকর্ডেই তারা যোজন যোজন এগিয়ে। দুই দলের ১৭ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ১৫টি। বাংলাদেশের দুটি জয় সেই ২০১৫ ও ২০১৬ সালে।
বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসাটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম তবু আশার তরী বেয়ে চলেছেন। বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ তাকে জোগচ্ছে সাহস।
“অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানকে হারাতে পারি। তবে সেমি-ফাইনালে খেলতে পারা আমাদের হাতে নেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে। পাকিস্তান খুব ভালো দল। নিউ জিল্যান্ডে ওদের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল। আমরা তাদের শক্তির জায়গা জানি, তারাও আমাদের শক্তির জায়গা সম্পর্কে জানে। দারুণ একটি লড়াই তাই হবে।”
সেই লড়াইয়ে যদি জিততে পারে বাংলাদেশ, সেমি-ফাইনাল খেলতে না পারলেও বিশ্বকাপ অভিযান তখন পুরোপুরি সফল বলেই ধরে নেওয়া যাবে। শেষ ভালোর রেশ আর মুখে হাসি নিয়ে দেশের উড়ানে চেপে বসা যাবে। কাগজে-কলমে সফলতম বিশ্বকাপকে সংশয়ের উর্ধ্বে
মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিলেন ব্যাটিং।
"উইকেট দেখে শুষ্ক মনে হচ্ছে। স্কোর বোর্ড রান তুলে সেটা ডিফেন্ড করতে চাই। ছেলেরা সবাই শান্ত এবং রোমাঞ্চিত।"
বাবর আজম জানিয়েছেন, টানা দুই হারের পর টানা দুই জয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরেছে পাকিস্তান দলে।
ভারতের বিপক্ষে হেরে যাওয়া দলে তিনটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। একাদশে ফিরেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। প্রথমবারের মতো চলতি আসরে খেলছেন নাসুম আহমেদ ও ইবাদত হোসেন।
এই ম্যাচে নেই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরি এবং আগের ম্যাচে খরুচে বোলিং করা দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, নুরুল হাসান সোহান, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাসুম আহমেদ, ইবাদত হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো দলে কোনো পরিবর্তন আনেনি পাকিস্তান। টিকে গেছেন আগের ম্যাচে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া মোহাম্মদ হারিস।
পাকিস্তান একাদশ: বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, মোহাম্মদ হারিস, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শান মাসুদ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের অবিশ্বাস্য কিছু করার আশায় ছিল বাংলাদেশ। সেটা ঘটিয়েই ফেলল ডাচরা। বিশ্বকাপে পেল টানা দ্বিতীয় জয়।
এই মিরাকলের পর বাংলাদেশের সামনে এখন সেমি-ফাইনালে খেলার সত্যিকারের সুযোগ। পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই টি-টোয়েন্টিতে দল স্পর্শ করবে নতুন উচ্চতা।
একই পরিস্থিতি পাকিস্তানেরও। টানা দুই হারের টুর্নামেন্ট শুরুর পর দলটির সামনে এখন শেষ চারে যাওয়ার হাতছানি। এর জন্য জিততে হবে কোয়ার্টার-ফাইনালে পরিণত হওয়া সুপার টুয়েলভের ম্যাচে।
টানা দুই হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। টানা দু্নই জয়ে নেদারল্যান্ডস জাগাল আগামী আসরে সরাসরি খেলার আশা।
সবেই দারুণ এক পুলে ছক্কা মেরেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু ফিরে গেলেন এর একটু পরেই। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ধরা পড়লেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
বাঁহাতি পেসারের একটু শর্ট লেংথের বলে সজোরে স্ল্যাশ করেছিলেন লিটন। পার করতে পারেননি ফিল্ডারকে। শান মাসুদ মুঠোয় জমান বল।
৬ বলে এক ছক্কায় ১০ রান করেন লিটন।
৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ২১। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী সৌম্য সরকার।
লিটন ফিরে যাওয়ার এক বল পরই ফিরে যেতে পারতেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের বলে ড্রাইভ মাটিতে রাখতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। কাভারে ক্যাচ নিতে পারেননি শাদাব খান।
সে সময় ১১ রানে ছিলেন শান্ত। সেই ওভারে একটি চার মারেন তিনি। ওভারের শেষ বল ছক্কায় ওড়িয়ে রানের খাতা খোলেন সৌম্য সরকার।
৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৩৪।
শুরুতেই লিটন দাসকে হারালেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার।
পাওয়ার প্লেতে লিটনকে হারিয়ে ৪০ রান করেছে বাংলাদেশ।
৮ বলে ৮ রানে খেলছেন সৌম্য। ২০ বলে শান্তর রান ২১।
রান হয়নি আহামরি। তবে উইকেটও কেবল একটি হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই, ইনিংসের মাঝপথে ভালো অবস্থায়ই আছে বাংলাদেশ।
প্রথম ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৭০ রান। ১৫ বলে ১৮ রানে খেলছেন সৌম্য সরকার। নাজমুল হোসেন শান্ত আছেন ৩৭ বলে ৪১ রানে।
ভালো শুরুর আভাস দেন লিটন দাস। ভারতের বিপক্ষে ৬০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা এই ওপেনার অবশ্য এবার যেতে পারেননি বেশিদূর। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা তৃতীয় ওভারে ১ ছক্কায় ৬ বলে ১০ রান করে ফেরেন তিনি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন শান্ত ও সৌম্য। দুইজনে গড়েছেন ৪৩ বলে ৪৯ রানের জুটি।
তৃতীয় ওভারেই ছন্দে থাকা লিটন দাসের বিদায়। শুরুর সেই ধাক্কা সামলে দারুণ এক জুটিতে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে এখন চাপে বাংলাদেশ।
বিরতির পর প্রথম ওভারেই পাকিস্তানকে জোড়া সাফল্য এনে দিলেন শাদাব খান। এর একটি অবশ্য আম্পায়ারের বিস্ময়কর বাজে সিদ্ধান্তে।
ওভারের চতুর্থ বলে রিভার্স সুইপ করে পয়েন্টে ধরা পড়েন সৌম্য।
একটি করে ছক্কা-চারে ১৭ বলে ২০ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ভাঙে শান্তর সঙ্গে তার ৫২ রানের জুটি।
পরের বলে আরও বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। অনেকটা এগিয়ে এসে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাকিব।
পাকিস্তানের আবেদনে আম্পায়ার অনেক দেরিতে আঙুল তুলে দিলে রিভিউ নিতে দেরি করেননি সাকিব। ইঙ্গিতে শান্তকে দেখান, ব্যাটে লেগেছে বল। রিপ্লেতে ব্যাটে বলের হালকা স্পর্শের প্রমাণ মেলে। তখন অবশ্য ব্যাট মাটির খুব কাছেই ছিল। ব্যাট মাটিতে লেগেছে ধরে নিয়ে আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন তৃতীয় আম্পায়ার!
এমনকি সাকিব যে তিন মিটারের বেশি এগিয়ে এসেছে সেটাও বিবেচনায় নেননি তিনি!
১১ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৭৪। শান্তর সঙ্গে উইকেটে নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন।
দুই ওভার আগেই জোড়া ধাক্কা খেয়েছে দল। চাপে থাকা বাংলাদেশকে আরও বিপদে ফেলে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিফটি করেই বিদায় নিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
আগের ওভারেই ৪৬ বলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন শান্ত। তার দুই পঞ্চাশই এলো এবারের বিশ্বকাপে।
পঞ্চাশের পর বোলারদের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন শান্ত। ইফতিখার আহমেদকে দারুণ স্ট্রেইট শটে একটি বাউন্ডারিও হাঁকান তিনি। কিন্তু পরের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে বল একটু টেনে দেন ইফতিখার। তাতেই বাজিমাত, বোল্ড হয়ে বিদায় নেন শান্ত।
৭ চারে ৪৮ বলে ৫৪ রান করে ফেরেন শান্ত।
১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯২। উইকেটে আফিফ হোসেনের সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেন।
আরেকটি উইকেট হারাতে পারত বাংলাদেশ। অল্পের জন্য রান আউট হতে হতে বেঁচে গেলেন আফিফ হোসেন।
মিড উইকেটের দিকে খেলে দুই রানের জন্য দৌড় দেন মোসাদ্দেক হোসেন। বাউন্ডারি থেকে দৌড়ে এসে ফিল্ডার থ্রো করেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে। বল সরাসরি যায় স্টাম্পের গোঁড়ায় থাকা বোলার মোহাম্মদ ওয়াসিমের হাতে। কিন্তু বল হাতে জমাতে পারেননি তিনি। বল ছাড়াই যখন স্টাম্প ভাঙলেন ওয়াসিম, তখনও দাগ থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিলেন আফিফ।
৭ রানে জীবন পেলেন বাংলাদেশের তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
৭ চারে ৪৮ বলে ৫৪ রান করে ফেরেন শান্ত।
১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯২। উইকেটে আফিফ হোসেনের সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেন।
বিপদে পড়া দলকে টানতে পারলেন মোসাদ্দেক হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান। শাহিন শাহ আফ্রিদির এক ওভারেই সাজঘরে ফিরে গেলেন দুইজন।
সপ্তদশ ওভারের দ্বিতীয় বলটি ইয়র্কার করেন আফ্রিদি। বলের লাইনেই ব্যাট রাখতে পারেননি মোসাদ্দেক। বল ছোবল দেয় তার মিডল ও অফ স্টাম্পে।
১১ বলে ৫ রান করে বিদায় নেন মোসাদ্দেক।
নতুন ব্যাটসম্যান সোহান খুলতে পারেননি রানের খাতাই। দুই বল ডট খেলার পর তেড়েফুঁড়ে মারতে চান তিনি। কিন্তু ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি। বল উঠে যায় আকাশে। ডিপ পয়েন্টে সহজ ক্যাচ নেন মোহাম্মদ হারিস।
ওভারের শেষ বলটি তাসকিন আহমেদের প্যাডে আঘাত হানলে এলবিডব্লিউর রিভিউ নেয় পাকিস্তান। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যেত।
১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ১০৭। ক্রিজে আফিফ হোসেনের সঙ্গী তাসকিন।
আগের ওভারে জোড়া শিকার ধরা শাহিন শাহ আফ্রিদি এবার ফিরিয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদকে। অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ।
অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ বলটি মিড-অফ ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন তাসকিন। কিন্তু যতটা চেয়েছিলেন বল ততটা ওড়াতে পারেননি তিনি। মিড-অফেই সহজ ক্যাচ নেন বাবর আজম।
৫ বলে ১ রান করে ফিরলেন তাসকিন।
আফ্রিদির কোটার শেষ বলটি পয়েন্ট ও শর্ট থার্ডম্যানের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান আফিফ। ৪ ওভারে স্রেফ ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে আফ্রিদি।
১৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ১১৬।
শেষ ওভারে দুই চার না এলে হয়তো ১২০ রানও হতো না বাংলাদেশের। সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনোরকম একটা পুঁজি দাঁড়াতে পেরেছে তারা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ১২৭ রান করেছে বাংলাদেশ।
৭ চারে ৪৮ বলে ৫৪ রান করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩ চারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন আফিফ হোসেন।
ইনিংসের শুরুতে লিটন দাসকে হারালেও শান্ত ও সৌম্য পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শাদাব খানের এক ওভারে সৌম্যর পর আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে সাকিব আল হাসানের বিদায়ে পথ হারিয়ে ফেলে তারা।
পরে দুর্দান্ত বোলিংয়ে দুই ওভারে তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে অল্পতে আটকে রাখেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন এই পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৮ (শান্ত ৫৪, লিটন ১০, সৌম্য ২০, সাকিব ০, আফিফ ২৪*, মোসাদ্দেক ৫, সোহান ০, তাসকিন ১, নাসুম ৭, মুস্তাফিজ ০*; আফ্রিদি ৪-০-২২-৪, নাসিম ৩-০-১৫-০, ওয়াসিম ২-০-১৯-০, রউফ ৪-০-২১-১, শাদাব ৪-০-৩০-২, ইফতিখার ৩-০-১৫-১)
হতাশার ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়েও বাংলাদেশের শুরুটা হলো বাজে। প্রথম ওভারেই সুযোগ হাতছাড়া করলেন নুরুল হাসান সোহান।
তাসকিন আহমেদের দারুণ এক ডেলিভারিতে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে সহজ ক্যাচ যায় কিপারের কাছে। নিদারুণ ব্যর্থতায় গ্লাভসে নিতে পারেননি সোহান।
শূন্য রানে বেঁচে গিয়ে পরের বলে ছক্কা মারেন রিজওয়ান। আগের ম্যাচে তাসকিনের বলে রোহিত শর্মাকে জীবন দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। দারুণ বোলিং করলেও সেই ম্যাচে পরে আর উইকেট পাননি তাসকিন।
১ ওভারে পাকিস্তানের রান বিনা উইকেটে ৬।
প্রথম ওভারে সহজ সুযোগ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এরপর থেকে আর কোনো ধরনের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটের খোঁজে মরিয়া এখন তারা।
দেখেশুনে খেলে পাকিস্তানকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন রিজওয়ান ও বাবর আজম। ৮ ওভার শেষে তাদের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২।
১ ছক্কা ও ২ চারে ২৬ বলে ২৯ রানে খেলছেন রিজওয়ান। সাবধানী ব্যাটিংয়ে বাবর ১ চারে ২২ বলে ১৩ রানে আছেন।
রান আসেনি খুব বেশি। তবে কোনো উইকেটও হারায়নি পাকিস্তান। দেখেশুনে খেলে পাকিস্তানকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পেরিয়েছে দলটি।
মাঝপথে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এখন পাকিস্তানের হাতে। ১০ ওভার শেষে তাদের রান ৫৬। ১ ছক্কা ও ২ চারে ২৮ বলে ৩১ রানে খেলছেন রিজওয়ান। ২ চারে ৩২ বল ২৫ রান বাবরের।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারাতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন নুরুল হাসান সোহান।
এরপর থেকে বাংলাদেশকে আর কোনো সুযোগই দেয়নি পাকিস্তান। শেষ ১০ ওভারে তাদের ৭২ রান।
অবশেষে প্রথম উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। বিরতির পর তাদেরকে সাফল্য এনে দিলেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি এই স্পিনার ফেরালেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে।
অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে বলের চেয়ে রানে পিছিয়ে ছিলেন বাবর। ব্যবধান কমাতে নাসুমকে ছক্কার চেষ্টা করে তিনি। হাঁটু গেঁড়ে স্লগ করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করে আকাশে তুলে দেন তিনি। শর্ট থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ নেন মুস্তাফিজুর রহমান।
২ চারে ৩৩ বলে ২৫ রান করেন বাবর।
ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নাওয়াজের প্যাডে বল লাগলে এলবিডব্লিউর আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার সাড়া না দিলে নেয় রিভিউ। কিন্তু রিপ্লিতে দেখা যায় ইমপ্যাক্ট ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
১১ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ১ উইকেটে ৬১। রিজওয়ানের সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান নাওয়াজ।
প্রথম ওভারে জীবন পাওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ানকে দ্বাদশ ওভারে এসে ফেরালেন ইবাদত হোসেন। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
ইবাদতের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে করা স্লোয়ার বলটি স্ল্যাশ করেন রিজওয়ান। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান নাজমুল হোসেন শান্ত।
১ ছক্কা ও ২ চারে ৩২ বলে ৩২ রান করে পাকিস্তান কিপার-ব্যাটসম্যান।
এক বল পর এলবিডব্লিউর আবেদন করে বাংলাদেশ। এর মাঝেই রান আউটের সুযোগও আসে। কিন্তু শান্তর সরাসরি থ্রো থেকে উল্টো বাই থেকে চার রান পেয়ে যায় পাকিস্তান।
১২ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ২ উইকেটে ৬৯। ক্রিজে মোহাম্মদ নাওয়াজের সঙ্গী মোহাম্মদ হারিস।
বাংলাদেশকে আরেকটি উইকেট এনে দিলেন লিটন দাস। তার সরাসরি থ্রোতে বিদায় নিলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ।
অফ সাইডে ঠেলেই সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দেন নাওয়াজ। শর্ট কাভার থেকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন লিটন। রিপ্লেতে দেখা যায়, তখনও দাগের ভেতর ঢুকতে পারেননি নাওয়াজ।
১১ বলে ৪ রান করে ফিরলেন নাওয়াজ।
১৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ৩ উইকেটে ৯৪। শেষ ৩০ বলে তাদের চাই ৩৪ রান। ক্রিজে মোহাম্মদ হারিসের সঙ্গী শান মাসুদ।
দলকে দ্রুত জয় এনে দেওয়ার লক্ষ্যে ছিলেন মোহাম্মদ হারিস। কিন্তু পারলেন না তিনি কাজ শেষ করে ফিরতে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চেষ্টায় ফিরলেন সাকিব আল হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে।
সপ্তদশ ওভারে প্রথম চার বলে শান মাসুদের দুই চারের সুবাদে আসে ১১ রান। জয়ের জন্য তখন ৭ রান চাই পাকিস্তানের। পঞ্চম বলটি উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলেন হারিস। কিন্তু সাকিবের মন্থর গতির বলটি ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি তিনি। পয়েন্টে ক্যাচ নেন নাসুম আহমেদ।
২ ছক্কা ও ১ চারে ১৮ বলে ৩১ রান করেন হারিস।
১৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ৪ উইকেটে ১২১। মাসুদের সঙ্গী ইফতিখার আহমেদ।
ছক্কায় ম্যাচ শেষ করতে চেয়েছিলেন ইফতিখার আহমেদ। কিন্তু ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরলেন তিনি সাজঘরে।
মুস্তাফিজুর রহমান যখন ১৮তম ওভারের শেষ বলটি করতে আসেন, পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার কেবল ২ রান। ফুল লেংথের স্লোয়ার বলটি আকাশে তুলে দেন ইফতিখার। উল্টো দিকে দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
৩ বলে ১ রানে ফিরলেন ইফতিখার।
নেদারল্যান্ডসের মিরাকলে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল সাকিব আল হাসানের দল।
বাংলাদেশের ১২৭ রান তাড়া ছাড়িয়ে গেল ১১ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে গেল বাবর আজমের দল।
শাহিন শাহ আফ্রিদির ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পর ব্যাটসম্যানদের মিলিত চেষ্টায় ৫ উইকেটে জিতল পাকিস্তান। গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে গেল তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৮ (শান্ত ৫৪, লিটন ১০, সৌম্য ২০, সাকিব ০, আফিফ ২৪*, মোসাদ্দেক ৫, সোহান ০, তাসকিন ১, নাসুম ৭, মুস্তাফিজ ০*; আফ্রিদি ৪-০-২২-৪, নাসিম ৩-০-১৫-০, ওয়াসিম ২-০-১৯-০, রউফ ৪-০-২১-১, শাদাব ৪-০-৩০-২, ইফতিখার ৩-০-১৫-১)
পাকিস্তান: ১৮.১ ওভারে ১২৮/৫ (রিজওয়ান ৩২, বাবর ২৫, নাওয়াজ ৪, হারিস ৩১, মাসুদ ২৪*, ইফতিখার ১, শাদাব ০*; তাসকিন ৩-০-২৬-০, নাসুম ৪-০-১৪-১, সাকিব ৪-০-৩৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-১, ইবাদত ৩.১-০-২৫-১)
নিজেদের সেরা বিশ্বকাপেও গ্রুপে পঞ্চম বাংলাদেশ। রান রেটে তাদের পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরের আসরে সরাসরি খেলা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে নেদারল্যান্ডস। এই মুহূর্তে চার নম্বরে আছে ডাচরা।
ভারতের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভ পর্বের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ে জিতে গেলে তলানিতে থেকে আসর শেষ করবে সাকিব আল হাসানের দল। সেক্ষেত্রে সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবে ক্রেইগ আরভিনদের।
৬ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত গ্রুপ সেরা পাকিস্তান। সবচেয়ে বেশি ছয়বার শেষ চার নিশ্চিত করা দলটিকে পেছনে ফেলার সুযোগ আছে ভারতের সামনে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলে তারাই ফিরবে শীর্ষে।