দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
Published : 12 Mar 2023, 01:37 PM
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে কেবল ইংল্যান্ডই বাদ রয়ে গেছে। বাকি সব দলের বিপক্ষে কোনো না কোনো সংস্করণে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর সুযোগ সাকিব আল হাসান-লিটন দাসদের সামনে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে কোনো সংস্করণে প্রথম সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে নামবে বাংলাদেশ। খেলা শুরু হবে বেলা ৩টায়।
নানা অলিগলি পেরিয়ে টি-টোয়েন্টিতে আবার নতুন করে শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে দারুণ জয়ে দিয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। চট্টগ্রামে ৬ উইকেটের যে অঘটন নয়, সত্যিকারের নতুন শুরুর ছাপ, সেটাও প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ সাকিবদের সামনে।
প্রথম ম্যাচে জয়ের পর নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, এখান থেকে তাদের সিরিজ জেতা উচিত। সেই জয়ে বড় অবদান রাখেন আরেক তরুণ হাসান মাহমুদেরও একই মত।
“আমরা ইনশাআল্লাহ্ সিরিজ জিতব। আমরা ওদেরকে প্রথম ম্যাচে হারিয়েছি। এখন মোমেন্টাম অবশ্যই আমাদের দিকে। চেষ্টা থাকবে এটা ধরে রাখার। ভালো কিছু হবে। অধিনায়ক আমাদের সাহস দিচ্ছেন। দলে সবাই আমরা তরুণ। সব কিছু মিলে ঠিকঠাক চলছে।”
চট্টগ্রাম থেকে মিরপুরে ফিরেও ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন হলো না জস বাটলারের। সফরে টানা পঞ্চমবার টস হারলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান টস জিতে নিলেন ব্যাটিং।
চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচেও টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বাটলার জানান, টস জিতলে তিনিও ফিল্ডিং নিতেন।
প্রথম ম্যাচে জেতা একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শামীম হোসেনের জায়গায় ফেরানো হয়েছে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে।
বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয়।
স্পিনে শক্তি বাড়াল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ সফরে এসে ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও অভিষেক হলো রেহান আহমেদের। ১৮ বছর ২১১ দিন বয়সে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পেলেন এই লেগ স্পিনার। তাকে জায়গা করে দিতে বাদ দেওয়া হলো গতিময় পেসার মার্ক উডকে।
টেস্ট ও ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হয়ে গেলেন রেহান। ২০০৬ সালে ২০ বছর ৬৫ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল স্টুয়ার্ট ব্রডের। সেই রেকর্ড ভাঙলেন রেহান।
ইংল্যান্ড একাদশ: জস বাটলার (অধিনায়ক), মইন আলি, জফ্রা আর্চার, স্যাম কারান, বেন ডাকেট, ক্রিস জর্ডান, দাভিদ মালান, আদিল রশিদ, ফিল সল্ট, ক্রিস ওকস ও রেহান আহমেদ।
উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনেছে ইংল্যান্ড। জস বাটলারের জায়গায় ফিল সল্টের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছেন দাভিদ মালান। বিভিন্ন দলে ওপেনার হিসেবেও খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে জাতীয় দলে বেশিরভাগ সময়ই নামেন তিনে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির পর এই প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নামলেন না বাটলার।
১ ওভারে ইংল্যান্ডের রান বিনা উইকেটে ১০।
কাজে এলো না উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন। তৃতীয় ওভারেই ভাঙল শুরুর জুটি। ফিরে গেলেন প্রমোশন পেয়ে ওপেনিংয়ে নামা দাভিদ মালান।
তাসকিন আহমেদের নতুন ওভারের প্রথম বলে সজোরে মারতে চেয়ে ব্যাটে খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। পরের বল খেলেন একইভাবে, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় থার্ডম্যানে। সেখানে কোনো ভুল করেননি হাসান মাহমুদ। ভাঙে ১৬ রানের জুটি।
৮ বলে এক চারে মালান করেন ৫ রান।
প্রমোশন পেয়ে তিনে নামা মইন আলি ফিরে যেতে পারতেন দ্বিতীয় বলেই। প্রথম স্লিপে নাজমুল হোসেন আঙুল ছোঁয়াতে পারলেও ক্যাচ নিতে পারেননি। উল্টো ব্যাটসম্যান পেয়ে যান বাউন্ডারি।
৩ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ২১।
দাভিদ মালানকে হারালেও চাপে নুইয়ে পড়ছে না ইংল্যান্ড। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে এগোচ্ছেন ফিল সল্ট। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন মইন আলি।
পাওয়ার প্লেতে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে ইংল্যান্ডের রান। ৬ ওভারে সফরকারীদের রান ১ উইকেটে ৫০। ১২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রানে খেলছেন মইন। ১৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় সল্টের রান ২৫।
পাওয়ার প্লেতে কেবল একটি ওভার স্পিন দিয়ে করান সাকিব আল হাসান। নিজের আগে নাসুম আহমেদকে আক্রমণে আনেন তিনি। সেই ওভার থেকে একটি করে ছক্কা ও চারে ইংল্যান্ড নেয় ১৩ রান। পাওয়ার প্ল শেষে আক্রমণে এসেই আঘাত হানেন সাকিব। বিদায় করে দেন দ্রুত এগোনো ফিল সল্টকে।
গতি বৈচিত্র্যে ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে পরীক্ষায় ফেলছিলেন সাকিব। সেই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সল্ট। ১৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় তিনি করেন ২৫ রান।
৭ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ৫১। ক্রিজে মইন আলির সঙ্গী জস বাটলার।
ওপেনিং থেকে পাঁচে নেমে ভালো করতে পারলেন না জস বাটলার। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে বোল্ড করে দিলেন হাসান মাহমুদ।
আগের ম্যাচেও তিনিই নিয়েছিলেন বাটলারের দামি উইকেট। ছক্কার চেষ্টায় সেবার সীমানায় ধরা পড়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এবার স্টাম্পে থাকা ইয়র্কার লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় সফল হননি। এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প।
৬ বলে বাটলার করেন ৪।
৮ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৫৫। ক্রিজে মইন আলির সঙ্গী বেন ডাকেট।
ক্রিজে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দেখে মেহেদী হাসান মিরাজকে আক্রমণে আনলেন সাকিব আল হাসান। কাজেও লাগল তা, অফ স্পিনার এনে দিলেন উইকেট। ছক্কার চেষ্টায় ফিরে গেলেন মইন আলি।
টানা তিন ওভারে তিন উইকেট হারাল ইংল্যান্ড। ফিল সল্ট ও জস বাটলারের বিদায়ের পর মইনের কাঁধে একটু বেশি দায়িত্বই ছিল। তিনি সেটা মেটাতে গেলেন পাল্টা আক্রমণে। সুইপ করে ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়লেন ডিপ মিডউইকেটে।
একটি করে ছক্কা ও চারে মইন করেন ১৭ বলে ১৫ রান।
৯ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ৫৭।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মাঝপথে দিকহারা ইংল্যান্ড। ১০ ওভারে ৬৩ রান তুলতে দলটি হারিয়েছে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে। পাওয়ার প্লেতে দাভিদ মালানের বিদায়ের পর টানা তিন ওভারে ফিরে গেছেন ফিল সল্ট, জস বাটলার ও মইন আলি।
একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান, হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
৬ বলে ২ রানে খেলছেন বেন ডাকেট। ৪ বলে স্যাম কারানের রান ৫।
ক্রিজে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাই আরেকজন অফ স্পিনারকে আক্রমণে আনলেন সাকিব আল হাসান। নাজমুল হোসেন শান্ত দিলেন ৯ রান।
অনিয়মিত এই অফ স্পিনারের প্রথম বলটি ছিল ফুলটস, সেটিতে অনায়াসে বাউন্ডারি মারেন বেন ডাকেট। পরের পাঁচ বলে এলো পাঁচটি সিঙ্গেলস।
১২ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ৭৬।
নাজমুল হোসেন শান্তর পর আফিফ হোসেনকে আক্রমণে আনলেন সাকিব আল হাসান। অনিয়মিত অফ স্পিনারের ওভার থেকে এলো ৭ রান।
এ নিয়ে পঞ্চমবার ৮ বোলার ব্যবহার করল বাংলাদেশ।
১৪ ওভার ইংল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ৯১।
স্যাম কারানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন মেহেদী হাসান। উইকেটের পেছনে দারুণ তৎপরতায় বড় অবদান রাখলেন লিটন দাস।
অফ স্পিনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন কারান। তাকে এগোতে দেখে মিরাজ বল করেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে, সেটি ব্যাটে খেলতে পারেননি ব্যাটসম্যান। বাকিটা সারেন লিটন। ভাঙে ৩২ বল স্থায়ী ৩৪ রানের জুটি।
১৬ বলে কারান করেন ১২।
এক বল পর মেলে আরেক উইকেট। অনেকটা এগিয়ে গিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ক্রিস ওকস। দ্বিতীয় চেষ্টায় বল গ্লাভসে জমিয়ে বেলস ফেলে দেন লিটন দাস। তখনও অনেক দূরে ছিলেন ব্যাটসম্যান।
২ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি ওকস।
১৫ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৬ উইকেটে ৯২। ক্রিজে বেন ডাকেটের সঙ্গী ক্রিস জর্ডান।
আগের ১৯ ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। সেরা ছিল ১৭ রানে ৩ উইকেট। সেটা ছাড়িয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো চার উইকেটের স্বাদ পেলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
দলে ফেরার ম্যাচে নিজের শেষ বলে ক্রিস জর্ডানকে ফেরান মিরাজ। ছক্কার চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে রনি তালুকদারের হাতে ধরা পড়েন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ১০ বলে তিনি করেন ৩।
৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে মিরাজ নেন ৪ উইকেট।
১৭ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ১০০। ক্রিজে বেন ডাকেটের সঙ্গী অভিষিক্ত রেহান আহমেদ।
অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি বেন ডাকেট। শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানকে ছক্কার বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফিরে যান ক্যাচ দিয়ে। মিড অন থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
২৮ বলে দুই চারে ডাকেট করেন ২৮ রান।
ওয়াইড বলে রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান রেহান আহমেদ। ১১ বলে দুই চারে ১১ রান করেন তিনি।
শেষ বলে দ্রুত ১ রানের চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান জফ্রা আর্চার। শেষ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস।
১৩ ম্যাচ পর অলআউট হলো টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসের বিবেচনায় ২৭ ম্যাচ পর।
শেষ বলে ১১৭ রানে থামে জস বাটলারের দল। ২০ ওভার ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন এটাই। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ১১৮ ছিল আগের সর্বনিম্ন।
সফরকারীদের এতো কম রানে গুটিয়ে দেওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান মেহেদী হাসান মিরাজের। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে মাত্র ১২ রানে ৪ উইকেট নেন দলে ফেরা এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১১৭ (সল্ট ২৫, মালান ৫, মইন ১৫, বাটলার ৪, ডাকেট ২৮, কারান ১২, ওকস ০, জর্ডান ৩, রেহান ১১, রশিদ ১*, আর্চার ০; তাসকিন ৪-০-২৭-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, নাসুম ১-০-১৩-০, সাকিব ৩-০-১৩-১, হাসান ২-০-১০-১, মিরাজ ৪-০-১২-৪, শান্ত ১-০-৯-০, আফিফ ১-০-৭-০)
রান তাড়ায় তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারাল বাংলাদেশ। আরও একবার বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলেন লিটন কুমার দাস।
স্যাম কারানের অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের শর্ট বলটি পুল করেন লিটন। কিন্তু শটে তেমন জোর দিতে পারেননি তিনি। ডিপ স্কয়ার লেগে মাথার ওপর থেকে বল মুঠোয় জমান ফিল সল্ট।
১ চারে ৯ রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন। আগের ম্যাচে তিনি করেন ১২ রান। ওয়ানডেতে তিনটিতে তার রান ছিল ৭, ০, ০।
৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ১৭। রনি তালুকদারের সঙ্গে উইকেটে নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
পাওয়ার প্লের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারাল বাংলাদেশ। লিটন দাসের মতো রনির তালুকদারও ফিরে গেলেন তুলে মারতে গিয়ে।
জফ্রা আর্চারকে মিড অনের উপর দিয়ে ওড়াতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ওপেনার। টাইমিং করতে পারেননি, পিছিয়ে গিয়ে সহজ ক্যাচ নেন মইন আলি।
১৪ বলে এক চারে ৯ রান করেন রনি।
৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩২। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী তৌহিদ হৃদয়।
পাওয়ার প্লেতে ২ ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদারকে হারানো বাংলাদেশ কক্ষপথে আছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৫৫। জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে আরও ৬৩ রান চাই তাদের।
২০ বলে এক চারে ১৭ রানে ব্যাট করছেন শান্ত। ১২ বলে দুই চারে হৃদয়ের রান ১৭। এর মধ্যে দুই জনে উপহার দিয়েছেন ২৯ বলে ২৮ রানের জুটি।
অভিষেকে নিজের দ্বিতীয় বলেই্ উইকেট পেলেন রেহান আহমেদ। আপাত সাটামাটা এক ডেলিভারিতে ক্যাচ দিলেন তৌহিদ হৃদয়। ভাঙল ৩১ বল স্থায়ী ২৯ রানের জুটি।
লেগ স্পিনারে শর্ট, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন হৃদয়। ১৮ বলে দুই চারে তিনি করেন ১৭।
১১ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৬০। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরার ম্যাচে বল হাতে আলো ছড়ানোর পর এবার ব্যাটিংয়ে অবদান রাখার সুযোগ তার সামনে। প্রমোশন পেয়ে নেমেছেন পাঁচে।
আদিল রশিদকে ছক্কায় ওড়িয়ে সমীকরণ কিছুটা সহজ করে ফেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই স্বস্তি উবে যেতে বসেছিল ইংল্যান্ড রিভিউ নেওয়ায়। তবে আম্পায়ার্স বলে বেঁচে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
লেগ স্পিনারের বলে সুইপ করেছিলেন তিনি। ব্যাটে খেলতে পারেননি। লাগতো অফ স্টাম্পের বাইরের দিকে। সে সময় ২৬ রানে ছিলেন শান্ত।
১৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৮৩।
আদিল রশিদের পর ছক্কা মেরেছিলেন মইন আলিকে। স্পিনারদের খুব ভালোভাবে খেলছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সে কারণেই হয়তো জফ্রা আর্চারকে আক্রমণ ফিরিয়েছিলেন জস বাটলার। কাজে লেগেছে এই বোলিং পরিবর্তন, মিলেছে উইকেট।
অফের দিকে সরে গিয়ে আর্চারকে পুল করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। টাইমিং হয়নি, মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন আদিল রশিদ। ভাঙে ৩২ বল স্থায়ী ৪১ রানের জুটি।
২০ বলে দুই চারে ২০ রান করেন মিরাজ।
১৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯৭। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী সাকিব আল হাসান। জয়ের জন্য ২৪ বলে স্বাগতিকদের চাই ২১ রান।
খুব বেশি রান প্রয়োজন নেই, ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে দলকে লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবুও ঝুঁকি নিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক এর মাশুল দিলেন সীমানায় ক্যাচ দিয়ে।
মইন আলির অফ স্পিন ইনসাইড আউটে ওড়াতে চেয়েছিলেন সাকিব। টাইমিং করতে পারেননি, ক্যাচ যায় ক্রিস জর্ডানের হাতে। ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো আউট হলেন শূন্য রানে।
১৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১০২। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী আফিফ হোসেন।
পরপর তিন ওভারে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেল বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের পর ফিরে গেলেন আফিফ হোসেন।
জফ্র আর্চারের দ্রুত গতির ডেলিভারির কোনো জবাব জানা ছিল না আফিফের। এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প! ৩ বলে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ২ রান।
৪ ওভারে মাত্র ১৩ রানে ৩ উইকেট নিলেন আর্চার। জাগিয়ে তুললেন ইংল্যান্ডের আশা।
১৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১০৫। শেষ ২ ওভারে ১৩ রান চাই স্বাগতিকদের। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী তাসকিন আহমেদ।
জফ্রা আর্চারের দারুণ বোলিংয়ে শেষটা জমে ওঠেছিল ম্যাচ। শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন বলে ম্যাচ হেলে ছিল স্বাগতিকদের দিকেই।
জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। ক্রিস জর্ডানের করা ১৯তম ওভারে শান্ত ও তাসকিন আহমেদের তিন চারে ৭ বল বাকি থাকতেই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১১৭ (সল্ট ২৫, মালান ৫, মইন ১৫, বাটলার ৪, ডাকেট ২৮, কারান ১২, ওকস ০, জর্ডান ৩, রেহান ১১, রশিদ ১*, আর্চার ০; তাসকিন ৪-০-২৭-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, নাসুম ১-০-১৩-০, সাকিব ৩-০-১৩-১, হাসান ২-০-১০-১, মিরাজ ৪-০-১২-৪, শান্ত ১-০-৯-০, আফিফ ১-০-৭-০)
বাংলাদেশ: ১৮.৫ ওভারে ১২০/৬ (লিটন ৯, রনি ৯, শান্ত ৪৬*, হৃদয় ১৭, মিরাজ ২০, সাকিব ০, আফিফ ২, তাসকিন ৮*; কারান ৩-০-১৫-১, ওকস ১-০-৭-০, আর্চার ৪-০-১৩-৩, মইন ৪-০-২৪-১, রশিদ ৪-০-২৮-০, রেহান ২-০-১১-১, জর্ডান ০.৫-০-১৫-০)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ছিল না কোনো সিরিজ জয়। সেই আক্ষেপ কাটল এবার। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করল সাকিব আল হাসানের দল।
ইংল্যান্ডের ১১৭ রান ৭ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ। ১২ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ২০ রানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে এতে বড় অবদান মেহেদী হাসান মিরাজের। ফিল্ডিংয়ে আরেকটি দারুণ দিন কাটানোর পর তিন চারে ৪৭ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্তর অবদানও কম নয়।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বেশে খেলতে নেমে প্রথম সিরিজেই হারল ইংল্যান্ড।