শেষের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের মুঠো থেকে যেন জয় ছিনিয়ে নিল তামিম ইকবালের দল।
Published : 14 May 2023, 03:25 PM
বৃষ্টিতে ভেসে গেছে প্রথম ম্যাচ। পরেরটিতেও বাগড়া দিয়েছে প্রকৃতি। তবে ওভার কমিয়ে হলেও মিলেছে ফল। নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি ও তাওহিদ হৃদয়ের ঝড়ো ফিফটিতে রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ।
চেমসফোর্ডের একই মাঠে রোববার শেষ ম্যাচে সিরিজ জয়ের অভিযানে নামবে তামিম ইকবালের দল। এই ম্যাচের আগে একটি দুঃসংবাদ টাইগার শিবিরে। আঙুলের চোটে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসান।
তারকা অলরাউন্ডারকে ছাড়াই বিদেশের মাটিতে নবম ও সব মিলিয়ে ৩৪তম সিরিজ জয়ের জন্য খেলবে বাংলাদেশ। সাকিব না থাকায় শেষ ম্যাচের একাদশে একটি পরিবর্তন আবশ্যিক।
গত দুই ম্যাচের মতো এদিন অবশ্য বৃষ্টির শঙ্কা তেমন নেই। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার পরে হতে পারে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। যা খেলায় তেমন বিঘ্ন সৃষ্টি করার কথা নয়।
চেমসফোর্ডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ফের টস জিতলেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আইরিশ অধিনায়ক।
প্রথম দুই ম্যাচেও দেখা গেছে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেওয়ার ঘটনা। প্রথম ওয়ানডেতে এটি করে বালবার্নি। দ্বিতীয়টিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠান তামিম ইকবাল।
সাকিব আল হাসানের চোটে একাদশে একটি পরিবর্তন অনিবার্য ছিল। তবে বাংলাদেশ করেছে তিনটি পরিবর্তন। অভিষেক হচ্ছে রনি তালুকদার ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির।
বাংলাদেশের ১৪২তম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে খেলতে নামছেন ২১ বছর বয়সী পেস অলরাউন্ডার। রনি ওয়ানডে ক্যাপ নম্বর ১৪১।
এছাড়া একাদশে ফিরেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিব ছাড়া দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন তাইজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম।
প্রায় ১৪ বছরের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে ১২৭ ম্যাচ খেলার পর ওয়ানডে ম্যাচের স্বাদ পাচ্ছেন রনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩ সেঞ্চুরি ও ১৫ ফিফটিতে ৩ হাজার ২৮৬ রান করেছেন ৩২ বছর বয়সী টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৩০ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে মৃত্যুঞ্জয়ের পেয়েছেন ৪২ উইকেট। সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৯ ম্যাচে তিনি ধরেন ১৫ শিকার।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, রনি তালুকদার, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ।
সিরিজ বাঁচানোর অভিযানে নিজেদের একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে আয়ারল্যান্ড। গ্রাহাম হিউমের বদলে নেওয়া হয়েছে আরেক পেসার ক্রেইগ ইয়াংকে।
আয়ারল্যান্ড একাদশ: পল স্টার্লিং, স্টিভেন ডোহেনি, অ্যান্ড্রু বালবার্নি, হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার, কার্টিস ক্যাম্পার, জর্জ ডকরেল, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, মার্ক অ্যাডায়ার, জশ লিটল, ক্রেইগ ইয়াং।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বদলে ফেলা হলো এই জুটি। তামিম ইকবালের সঙ্গে লিটন দাসের পরিবর্তে নামানো হয়েছে রনি তালুকদারকে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিমের ১৭তম উদ্বোধনী সঙ্গী রনি।
তৃতীয় ওভারেই তামিম ইকবালকে জীবন দিলেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। স্লিপে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ নিতে পারলেন না আইরিশ অধিনায়ক। পরের বলেই বাউন্ডারি মেরে তার হতাশা আরও বাড়ালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
জশ লিটলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলার চেষ্টা করেন তামিম। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো বালবার্নির কাছে। কিন্তু সহজতম ক্যাচটি হাতে রাখতে পারেননি তিনি।
৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪ রান। অতিরিক্ত থেকেই এসেছে ৯ রান।
তামিম ৫ রানে খেলছেন। ১১ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি অভিষিক্ত রনি তালুকদার।
শুরু থেকেই রানের জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন রনি তালুকদার। রান না পাওয়ার হতাশায় খেলছিলেন একের পর এক আলগা শট। শেষ পর্যন্ত এর মাশুল দিয়ে নিজের উইকেট দিয়ে এলেন অভিষিক্ত ওপেনার।
মার্ক অ্যাডায়ারের করা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে কভারের ওপর দিয়ে চার মেরে রানের খাতা খোলেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তার আগে ১২ বলে কোনো রান নিতে পারেননি তিনি।
তবে চার মারার পরের বলেই কট বিহাইন্ড হয়েছেন রনি। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল বেশ দূর থেকে খেলতে গিয়ে লরকান টাকারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ১ চারে ১৪ বলে করেছেন ৪ রান।
৪ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৮ রান। তামিম ইকবাল ৫ রানে খেলছেন। নতুন ব্যাটসম্যান গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত।
শুরুতেই অভিষিক্ত ওপেনার রনি তালুকদারকে হারালেও রানের গতি কমেনি বাংলাদেশ দলের। ৯ ওভারের মধ্যে তারা ছুঁয়েছে পঞ্চাশ রান।
পাল্লা দিয়ে রান করছেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এরই মধ্যে ৪টি বাউন্ডারি মেরেছেন শান্ত, তামিম ৩টি। দুজনই খেলছেন একশ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইক রেটে। এলোমেলো বোলিংয়ে তাদের কাজ সহজ করেছেন আইরিশ বোলাররা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে জশ লিটলের করা ইনিংসের প্রথম বলেই ওয়াইডসহ বাউন্ডারি পায় বাংলাদেশ। পরের বলটি আবারও ওয়াইড করেন লিটল। প্রথম ৮ ওভারে অতিরিক্ত থেকে আসে ১১ রান।
পরে অবশ্য ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় স্লিপে তামিমের ক্যাচ নিতে পারেননি অ্যান্ড্রু বালবার্নি। শান্তর ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগা বল অল্পের জন্য স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে।
৯ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৫৩ রান। শান্ত ২৩ ও তামিম ১৫ রানে খেলছেন।
প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৬২ রান করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে হারিয়েছে শুধু অভিষিক্ত রনি তালুকদারের উইকেট।
শুরুর ধাক্কা সামলে দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তামিম ইকবাল। ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি করে রান তুলছেন তারা। এরই মধ্যে জুটিতে যোগ করেছেন ৪৪ রান।
৬ চারে ২৯ বলে ৩১ রানে অপরাজিত শান্ত। তামিম খেলছেন ৩ চারে ১৭ বলে ১৬ রান নিয়ে।
পাওয়ার প্লে শেষ হতেই নাজমুল হোসেন শান্তকে হারাল বাংলাদেশ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দলকে সাফল্য এনে দিলেন চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা ক্রেইগ ইয়াং।
একাদশ ওভারের পঞ্চম বলে দ্বিতীয় স্লিপে অ্যান্ড্রু বালবার্নির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। ৭ চারে ৩২ বলে করেছেন ৩৫ রান।
শান্তর বিদায়ে ভেঙেছে তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়া ৪৯ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
১১ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৬৭ রান। তামিম খেলছেন ১৭ রানে। নতুন ব্যাটসম্যান আগের দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামা লিটন দাস।
তামিম ইকবালকে ফেরাতে মরিয়া আয়ারল্যান্ড নষ্ট করল একটি রিভিউ। এলবিডব্লিউর আবেদন তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠিয়ে সাফল্য পায়নি স্বাগতিকরা।
ক্রেইগ ইয়াংয়ের করা ত্রয়োদশ ওভারের শেষ বলটি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেন তামিম। বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আঘাত করে প্যাডে। সরাসরি প্যাডে লেগেছে ভেবে জোরাল আবেদন করে আইরিশ ফিল্ডাররা।
তবে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে হ্যারি টেক্টরের পরামর্শে রিভিউ নেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। রিপ্লেতে দেখা যায়, প্যাডে লাগার আগে ব্যাটের স্পষ্ট স্পাইক। ফলে নষ্ট হয় আইরিশদের রিভিউ।
১৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৮০ রান। তামিম ২২ ও লিটন দাস ৬ রানে খেলছেন।
প্রায় ৮ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে স্রেফ দ্বিতীয়বারের মতো চার নম্বরে নামলেন লিটন। ২০১৫ সালে নিজের অভিষেকের বছরে জিম্বাবুয়রের বিপক্ষে প্রথমবার এই পজিশনে ব্যাটিং করেন তিনি। সেদিন ২২ বলে ১৭ রান করে আউট হন।
প্রায় সাড়ে ৭ বছর দ্বিতীয়বারে চারে নেমে এরই মধ্যে তার সংগ্রহ ২০ রান।
মাঝের ওভারে জুটির গড়ার চেষ্টায় তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দুজনের লড়াইয়ে ১৭তম ওভারে একশ রান পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম পঞ্চাশের চেয়ে লেগেছে এক বল বেশি।
১৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১০০ রান। ৩০ বলে ২৪ রানে অপরাজিত তামিম। লিটন ২৩ রান করেছেন ২৬ বলে। দুজনের জুটির সংগ্রহ ৩৭ বলে ৩৩ রান।
রনি তালুকদার ও নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ের পর জুটি বেধে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এরই মধ্যে দুজন মিলে যোগ করেছেন পঞ্চাশ রান।
৫৫ বলের জুটিতে তামিমের অবদান ১৮ রান, লিটনের ২৯।
প্রথম উইকেটে এই দুজন মিলে দশবার পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েছেন। এবার প্রথমবারের মতো তৃতীয় উইকেটে একসঙ্গে জোট বেধে যোগ করলেন পঞ্চাশ রান।
২০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১১৭ রান। লিটন ২৯ ও তামিম ৩৫ রানে অপরাজিত।
ভালো খেলতে খেলতে হুট করেই আলগা শটে নিজের উইকেট ছুড়ে এলেন লিটন দাস। তার বিদায়ে ভাঙল তামিম ইকবালের সঙ্গে জমে যাওয়া তৃতীয় উইকেট জুটি।
অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের বাইরে কিছুটা টেনে দেওয়া ডেলিভারি মিড অফের ওপর দিয়ে খেলার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু যতটা চেয়েছিলেন ততটা দূরে পাঠাতে পারেননি। মিড অফ থেকে কিছুটা পেছনে গিয়ে ক্যাচ নেন মার্ক অ্যাডায়ার।
৩৯ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩৫ রান করেছেন লিটন। তামিমের সঙ্গে তার জুটি ৭০ রানের।
২৪ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৩৯ রান। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪৫ রানে অপরাজিত তামিম। নতুন ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয়।
চলতি বছর ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তামিম ইকবালের। ইংল্যান্ড সফরের শেষ ম্যাচে রানে ফিরলেন তিনি, করলেন ক্যারিয়ারের ৫৬তম ওয়ানডে ফিফটি।
এই সংস্করণে ৯ ম্যাচ পর ফিফটি ছুঁতে তামিম খেলেছেন ৬১ বল। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৫টি চার মেরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ইনিংসের শুরুতেই জীবন পেয়েছেন তামিম। ১ রানে থাকতে জশ লিটলের বলে দ্বিতীয় স্লিপে তার সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি অ্যান্ড্রু বালবার্নি। এরপর আর সুযোগ দেননি বাঁহাতি ওপেনার।
অন্য প্রান্তে রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাসরা ফিরলেও রয়েসয়ে খেলে যাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেটে তার সঙ্গে জুটি বেধেছেন তাওহিদ হৃদয়।
২৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৫৬ রান। তামিম ৫২ ও হৃদয় ১২ রানে অপরাজিত।
আগের ম্যাচে দুর্দান্ত এক ইনিংসে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া তাওহিদ হৃদয় এবার পারলেন না তেমন কিছু করতে। দুই অঙ্কে পা রাখতেই বিদায় নিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
মিডল-অফ স্টাম্পের ওপরের বলটি জায়গা বানিয়ে কাট করার চেষ্টায় পুরোপুরি ব্যর্থ হন হৃদয়। স্কিড করে একটু নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলটি ছোবল দেয় তার স্টাম্পে। হতাশায় কিছুক্ষণ উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। উল্লাসে মেতে ওঠেন বাঁহাতি স্পিনার জর্জ ডকরেল।
১ চারে ১৩ রান করে ফেরেন হৃদয়। আগের ম্যাচে খেলেছিলেন ৬৮ রানের ইনিংস।
২৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৬০। অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
ফিফটির পর বড় শট খেলার অভিপ্রায় কয়েকটি বল ধরেই দেখা যাচ্ছিল তামিম ইকবালের মাঝে। শেষ পর্যন্ত ওই চেষ্টায় ড্রেসিং রুমে ফিরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
জর্জ ডকরেলকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কার চেষ্টায় ব্যাট চালান তামিম। কিন্তু বলের নিচে যেতে পারেননি তিনি। স্পিন করে ভেতরে ঢোকা লেংথ বলটি তার ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। শর্ট থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ ধরেন ক্রেইগ ইয়াং।
৬ চারে ৮২ বলে ৬৪ রান করে ফেরেন তামিম। ক্রিজে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী নতুন ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ।
৩৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৮৬।
নতুন স্পেলে বোলিংয়ে ফেরা জশ লিটলকে তিন বলের মধ্যে দুটি চার মারলেন মুশফিকুর রহিম। একটিতে অবশ্য ছিল ভাগ্যের সহায়তা। এই দুই বাউন্ডারিতেই বাংলাদেশের রান স্পর্শ করল ২০০।
৩৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ২০৪। দ্রুত দুই উইকেট হারানো দলটিকে টানছেন মুশফিক। তিনি খেলছেন ২ চারে ১৯ রানে। তার সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজের রান ৫।
শেষ দিকে আরও একবার হাল ধরলেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন পঞ্চাশ রানের জুটি। ৫৪ বল থেকে ৫০ রান যোগ করলেন দুই ব্যাটসম্যান।
ওয়ানডেতে দুজনের তৃতীয় পঞ্চাশ রানের জুটি এটি। সবশেষ তিন ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয়। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতেই ৬৫ রান যোগ করেছিলেন মুশফিক ও মিরাজ।
৪৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৪১ রান। মুশফিক ৩৪ ও মিরাজ ২৬ রানে অপরাজিত।
আগের বলেই স্লগ সুইপ করে বিশাল ছক্কা মারলেন মুশফিকুর রহিম। পরের বলে আবার চেষ্টা করলেন একই শট খেলার। এবার পারলেন না ব্যাটে লাগাতে। হারালেন নিজের উইকেট।
অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের করা ৪৬তম ওভারের প্রথম বল স্কুপ করেন মুশফিক। কিপারের হেলমেটে লেগে থেমে যাওয়ায় ওই বলে রান পাননি কোনো। পরের বলে স্লগ সুইপে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মারেন বিশাল ছক্কা।
ওভারের তৃতীয় বলে আবারও স্লগ সুইপ করতে গেলে বল আঘাত হানে তার প্যাডে। জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন মুশফিক। রিপ্লেতে দেখা যায়, পিচিং ও ইমপ্যাক্ট ঠিক থাকলেও উইকেটের বেলায় আম্পায়ার্স কলে আউট বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
৩ চার ও ১ ছয়ে ৫৪ বলে ৪৫ রান করেছেন মুশফিক। ফেরার আগে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েছেন ৭২ বলে ৭৫ রানের জুটি।
৪৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৬৩ রান। মিরাজ ৩৬ রানে অপরাজিত। নতুন ব্যাটসম্যান অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি।
মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের পর দলকে ভালো ফিনিশিং এনে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে। কিন্তু এই কাজে ব্যর্থ হলেন তিনি। পরের ওভারেই ধরলেন ড্রেসিং রুমের পথ।
মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের খাটো লেংথের ডেলিভারি র্যাম্প শটের মতো করে স্কুপ খেলতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় শর্ট ফাইন লেগে। কিছুটা পেছনে গিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন ক্রেইগ ইয়াং।
৩ চারে মিরাজের সংগ্রহ ৩৯ বলে ৩৭ রান। তার বিদায়ে ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটসম্যান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি ও হাসান মাহমুদ।
জশ লিটলের ফুল লেংথ ডেলিভারি ফ্লিক করতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। তবে খালি জায়গায় পড়ায় বেঁচে যান ক্যাচ আউট হওয়া থেকে।
দ্রুত দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হলেন হাসান মাহমুদ। লম্বা ডাইভ দিলেও কোনো লাভ হয়নি। ২ বলে ১ রান করেন হাসান।
৪৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৭৩ রান। মৃত্যুঞ্জয় অপরাজিত ৮ রানে।
পাঁচ ব্যাটসম্যান ছুঁলেন ৩০। কিন্তু তামিম ইকবাল ছাড়া কেউই পারলেন না পঞ্চাশ পেরোতে। ফিফটি ছুঁয়ে তামিমও পারেননি নিজের ইনিংস আরও বড় করতে। বাংলাদেশও আটকে গেল তিনশর অনেক আগে।
চেমসফোর্ডে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে ২৭৪ রানে গুটিয়ে গেছে তামিমের দল। আগের ম্যাচে ৪৫ ওভারে ৩১৯ রান করা আইরিশদের সামনে একই পিচে এবার ৫০ ওভারে লক্ষ্য ২৭৫ রানের।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তাড়াহুড়ো করতে থাকা রনি তালুকদারের উইকেট শুরুতেই হারায় বাংলাদেশ। ৪ রান করে আউট হন অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান।
এরপর অধিনায়কের সঙ্গে মিলে দারুণ খেলতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচার মতো দিয়ে তিনি থামেন ৩৫ রান করে।
প্রায় সাড়ে সাত বছর পর চার নম্বরে নামা লিটন দাসের শুরুটা ছিল সাবলীল। তামিমের সঙ্গে জুটিতে পঞ্চাশ রান যোগ করেন তিনি। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনিও থামেন ৩৫ রানে।
তাওহিদ হৃদয় বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পরে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়ার আভাস দেন তামিম। কিন্তু ক্যারিয়ারের ৫৬তম ফিফটি ছুঁয়ে তিনিও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ, ৮২ বলে করেন ৬৯ রান। ।
প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও ষষ্ঠ উইকেটে দলের হাল ধরেন মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজ। স্রেফ ৭২ বলে ৭৫ রান যোগ করেন এই দুজন। ৪৬তম ওভারে আম্পায়ার্স কলে কাটা পড়েন মুশফিক।
ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪৫ রান করে থামেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ে যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে। ২০ বলের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা।
আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মার্ক অ্যাডায়ার। ম্যাকব্রাইন ও জর্জ ডকরেল ধরেন ২টি করে শিকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৪ (তামিম ৬৯, রনি ৪, শান্ত ৩৫, লিটন ৩৫, হৃদয় ১৩, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ৩৭, মৃত্যুঞ্জয় ৮, হাসান ১, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ১*; লিটল ৯-০-৬৫-০, অ্যাডায়ার ৮.৫-০-৪০-৪, ইয়াং ১০-০-৫৩-১, ক্যাম্পার ৫-০-৩৭-০, ম্যাকব্রাইন ৯-০-৩৯-২, ডকরেল ৭-০-৩১-২)
শুরু থেকে আঁটসাঁট বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। স্টিভেন ডোহেনিকে ফিরিয়ে দলকে এনে দিলেন প্রথম সাফল্য।
অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ডোহেনি। ৪ রান করতে ১৬ বল খেলেছেন আইরিশ ওপেনার।
১৭ রানে ভাঙল উদ্বোধনী জুটি। নতুন ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু বালবার্নি। পল স্টার্লিং অপরাজিত ৪ রানে।
২৭৪ রানের পুঁজি নিয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। লেগ বাই থেকে এসেছে একটি চার।
নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও তৎপর বাংলাদেশ। মিড অন থেকে ডানে ঝাঁপিয়ে একটি নিশ্চিত চার ঠেকিয়ে দেন তামিম ইকবাল। স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ডাইভ দিয়ে আরেকটি বাউন্ডারি থামান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি।
প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে একটির বেশি উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড করেছে ৪৯ রান। এর মধ্যে অতিরিক্ত থেকে এসেছে ১০ রান।
শুরুর জড়োসড়ো ব্যাটিংয়ের পর হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা।
১৭ রানের মাথায় স্টিভেন ডোহেনিকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর ২৮ বলে ৩২ রান যোগ করেছেন পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নি। এই সময়ের মধ্যে দুজন মিলে ৫ চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছক্কা।
স্টার্লিং ২৯ বলে ২১ ও বালবার্নি ১৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত।
শুরুতেই স্টিভেন ডোহেনিকে হারানোর পর দারুণ জুটি গড়েছেন পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নি। এরই মধ্যে দুজন মিলে যোগ করেছেন ৫৩ রান।
বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে শুরুতে কিছুটা সময় নেন স্টার্লিং। থিতু হওয়ার পর ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন অভিজ্ঞ ওপেনার। দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন অধিনায়ক বালবার্নি।
৩ চারে ৩৭ বলে ২৪ রান করেছেন বালবার্নি। ৩ চার ও ১ চয়ে ৩৭ বলে ৩১ রানে অপরাজিত স্টার্লিং।
১৫ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৭০ রান। বাকি ৩৫ ওভারে করতে হবে আর ২০৫ রান।
আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের একদম শেষ দিকে বোলিংয়ে আনা হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। বোলিং করেন স্রেফ ২ ওভার। আরও পাঁচ জন স্পেশালিষ্ট বোলার থাকায় তার অভাব তেমন অনুভূত হয়নি।
আজকের ম্যাচে মিরাজসহ বোলার ঠিক ৫ জন৷ এদিন বল হাতে পেলেন আগেভাগেই। ১৮তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম ওভারে ৫ রান দিয়েছেন মিরাজ।
২৭৫ রানের লক্ষ্যে দারুণভাবে এগোচ্ছে আয়ারল্যান্ড। পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নির দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২১ ওভারেই একশ রান করে ফেলেছে তারা।
ফিফটির দুয়ারে দাঁড়িয়ে ৫৪ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত স্টার্লিং। বালবার্নি খেলছেন ৫৬ বলে ৪০ রানে৷
২১ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১০২ রান৷
ইবাদত হোসেনের খাটো লেংথের ডেলিভারি দারুণ পুল শটে বাউন্ডারি মারলেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। স্পর্শ করলেন নিজের পঞ্চাশ। একইসঙ্গে গড়লেন পল স্টার্লিংয়ের সঙ্গে একশ রানের জুটি।
বালবার্নির আগে পঞ্চাশ ছুয়েছেন স্টার্লিংও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম পঞ্চাশ করতে ৫৮ বল খেলেছেন তিনি৷ ৩ চারের সঙ্গে মেরেছেন ২ ছক্কা।
কিছুটা রয়েসয়ে খেলা বালবার্নি ৭১ বলে করেন ১৪তম ফিফটি৷ তিনি মারেন ৬টি চার।
২৬ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১২৬ রান৷ বাকি ২৪ ওভারে প্রয়োজন ১৪৯।
ইবাদতের আগের ওভারে চার মেরে ফিফটি করেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। এরপর তাকে বেশি দূর যেতে দিলেন না বাংলাদেশের গতিময় পেসার। পরের ওভারেই ফেরালেন ড্রেসিং রুমে।
ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে বড় শট খেলার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে রনি তালুকদারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বালবার্নি৷ ৭৮ বলে ৬ চারে ৫৩ রান করেছেন আইরিশ অধিনায়ক।
তার বিদায়ে ভেঙেছে পল স্টার্লিংয়ের সঙ্গে গড়া ১০৯ রানের জুটি৷ নতুন ব্যাটসম্যান হ্যারি টেক্টর।
২৭ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১২৮ রান। স্টার্লিং অপরাজিত ৫৭ রানে৷
মেডেন ওভার করে পল স্টার্লিংকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের ওভারে দ্রুত রানের খোঁজে নিজের উইকেট খোয়ালেন আইরিশ ওপেনার।
অফ স্টাম্পের বাইরে খানিক টেনে দেওয়া ডেলিভারি কাট করেন স্টার্লিং। ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে বল চলে যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। লাফিয়ে উঠে দারুণ ক্যাচ নেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি।
৪ চার ও ২ ছয়ে ৭৩ বলে ৬০ রান করেছেন স্টার্লিং। নতুন ব্যাটসম্যান লরকান টাকার।
৩২ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৫৩ রান। হ্যারি টেক্টর অপরাজিত ২০ রানে।
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্কুপ করলেন লরকান টাকার। ব্যাটে লেগে বল আঘাত করল তার প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় ও মুশফিকুর রহিমের জোরাল আবেদন। আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার।
রিভিউ নিতে এক মুহূর্তও ভাবেননি টাকার। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছিল, প্যাডের আগে ব্যাট থেকেই গিয়েছে বলটি। রিপ্লেতে সেটি নিশ্চিত হন থার্ড আম্পায়ার। বদলে যায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।
নিজের উইকেট বাঁচাতে পারলেও মাঠের আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানানোয় ওই বল থেকে নেওয়া রানটি পাননি টাকার।
৩৫ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৬৫ রান। শেষ ১৫ ওভারে তাদের করতে হবে আরও ১১০।
হ্যারি টেক্টর ৩১ বলে ২৭ ও টাকার ১২ বলে ৬ রানে অপরাজিত।
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির প্রায় বুক সমান উচ্চতার ডেলিভারি অফ সাইডে খেলার চেষ্টা করলেন লরকান টাকার। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে গেল থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারির ওপারে। পাশাপাশি উচ্চতার কারণে 'নো' বল ডাকলেন স্কয়ার লেগ আম্পায়ার।
নিজের ভুল শুধরে ফ্রি হিট বলটি ভালো ডেলিভারি করেন মৃত্যুঞ্জয়। বড় শটের চেষ্টায় ব্যাটেই লাগাতে পারেননি টাকার। বল আঘাত করে স্টাম্পে। কিন্তু ফ্রি হওয়ায় বেঁচে যান টাকার। উল্টো বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। আয়ারল্যান্ড পেয়ে বোনাস ৪ রান।
ঠিক পরের বলে আবারও ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বাউন্ডারি পেয়ে যান টাকার। এক বল পর আরও একটি চার মেরে ওভার থেকে ২১ রান তোলেন আয়ারল্যান্ডের কিপার-ব্যাটসম্যান।
এই ওভারের সৌজন্য দুইশর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে আয়ারল্যান্ড। ৩৭ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৯৫ রান। বাকি ৭৮ বলে প্রয়োজন আর ৮০ রান।
হ্যারি টেক্টর ৩৪ বলে ৩১ ও টাকার ২২ বলে ২৬ রানে খেলছেন।
পল স্টার্লিংয়ের বিদায়ের পর আয়ারল্যান্ডকে চাপে পড়তে দেননি হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার। এরই মধ্যে দুজন মিলে গড়েছেন পঞ্চাশ রানের জুটি। আয়ারল্যান্ড পেরিয়েছে দুইশ রান।
৩৯ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২০৭ রান। টেক্টর-টাকারের জুটিতে এসেছে সেফ ৪৮ বলে ৬১ রান। বাকি ৬৬ বলে প্রয়োজন আর ৬৮ রান।
হ্যারি টেক্টর ৪০ বলে ৩৩ ও টাকার ২৮ বলে ৩৪ রানে খেলছেন।
দ্বিতীয় স্পিনারের অভাবে ৪২তম ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে বল তুলে দিলেন তামিম ইকবাল। অধিনায়ককে হতাশ করলেন না শান্ত। পঞ্চম বলেই এনে দিলেন পরম আকাঙ্ক্ষিত উইকেট।
শান্তর খানিক টেনে দেওয়া ডেলিভারি কাউ কর্নার দিয়ে উড়িয়ে মারেন হ্যারি টেক্টর। লং অন থেকে অনেকটা দৌড়ে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন লিটন দাস। শান্ত পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট।
৩ চার ও ২ ছয়ে ৪৮ বলে ৪৫ রান করেছেন টেক্টর। তার বিদায়ে ভেঙেছে লরকান টাকারের সঙ্গে গড়া ৬৫ বলে ৭৯ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।
৪২ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২২৬ রান। টাকার অপরাজিত ৩৭ বলে ৪০ রানে। নতুন ব্যাটসম্যান কার্টিস ক্যাম্পার।
হ্যারি টেক্টরের বিদায়ের পর উইকেটে টিকতে পারলেন না কার্টিস ক্যাম্পার। পরের ওভারেই তাকে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠালেন মুস্তাফিজুর রহমান।
অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন ক্যাম্পার। বল উঠে যায় আকাশে। মিড অফে সহজ ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল।
৪ বলে ১ রান করে ফিরেছেন ক্যাম্পার। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে এসেছেন জর্জ ডকরেল। লরকান টাকার খেলছেন ৩৭ বলে ৪০ রানে।
মুস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের বল কিছুটা সরে সজোরে কভার ড্রাইভ করলেন জর্জ ডকরেল। গুলির বেগে বল চলে গেল কভারের দিকে। অনেকটা নিচু হয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় সেটি তালুবন্দি করলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
ইয়াসিরের অসাধারণ ক্যাচে ড্রেসিং রুমে ফিরলেন ৫ বলে ৩ রান করা ডকরেল। তার বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ল আয়ারল্যান্ড। কারণ লরকান টাকারের সঙ্গে আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বাকি রইল না।
৪৫ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৩৭ রান। টাকার অপরাজিত ৪৫ বলে ৪৬ রানে। নতুন ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন।
মুস্তাফিজুর রহমানের লো ফুল টসে স্কুপ খেলার চেষ্টা করলেন লরকান টাকার। ব্যাটের নিচের কানায় লেগে বল আঘাত করল অফ স্টাম্পে। পায়ে লেগেছে ভেবে এলবিডব্লিউ আবেদন করতে থাকলেন মুস্তাফিজ।
দৌড়ে এসে মুস্তাফিজকে জড়িয়ে ধরে মেহেদী হাসান মিরাজ জানালেন বোল্ড হয়েছেন আইরিশ কিপার-ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ পেয়েছে সপ্তম উইকেট। ৪ চার ও ১ ছয়ে ৫৩ বলে ৫০ রান করেছেন টাকার।
নিজের শেষ স্পেলের তিন ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ৪৪ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট।
৪৭ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৪৩ রান। উইকেটে দুই ব্যাটসম্যান মার্ক অ্যাডায়ার ও অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন।
শেষ দিকে আক্রমণে এসে মহামূল্যবান ব্রেক থ্রু দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের শেষ স্পেলে 'আনপ্লেয়েবল' হয়ে উঠলেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারে অসাধারণ বোলিং করলেন হাসান মাহমুদ। হাত থেকে ছুটতে থাকা ম্যাচ দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে জিতে নিল বাংলাদেশ।
চেমসফোর্ডে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে ২৭৫ রানের লক্ষ্যে দারুণ জুটিতে আইরিশদের জয়ের ভিত গড়ে দেন পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নি। হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার মিলে এগিয়ে নেন আরও অনেকটা পথ। কিন্তু কেউই পারেননি তুলির শেষ আঁচড় টানতে। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেল বাংলাদেশ।
বৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচ ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে ৪৫ ওভারের মধ্যে ৩২০ রান তাড়া করে জেতে বাংলাদেশ। নাটকীয়তায় ভরপুর শেষ ওয়ানডে জিতে সিরিজও নিজেদের করে নিল তামিম ইকবালের দল।
এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হলো আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশের সব খেলা। ৬ সিরিজের ২৪ ম্যাচে ১৫টি জিতেছে তামিমের দল। একটি পরিত্যক্ত ম্যাচসহ ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
জয় দিয়ে সুপার লিগ শেষ করার পথে ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বড় অবদান রাখলেন মুস্তাফিজ। শেষ ওভারে হাসান পেলেন ২ উইকেট। দারুণ বোলিংয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ, ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও শান্তর শিকার ১টি করে উইকেট।
আইরিশদের রান তাড়ায় শুরুতেই স্টিভেন ডোহেনিকে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান মুস্তাফিজ। শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৯ রান যোগ করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্টার্লিং ও বালবার্নি।
এই জুটি ভাঙেন ইবাদত। ফিফটি ছুঁয়ে ফেরেন বালবার্নি। কিছুক্ষণ পর একই পথে হাঁটেন আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান স্টার্লিং। তবে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের বিদায়কে বড় হতে দেননি টেক্টর ও টাকার।
আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা টেক্টর এদিনও খেলতে থাকেন দারুণভাবে। টাকারের সঙ্গে তার জুটিতে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধানে অনেকটাই কমিয়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড। শেষ ১০ ওভারে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে তাদের প্রয়োজন থাকে ৬২ রান।
৪২তম ওভারে প্রথমবার শান্তকে বোলিংয়ে আনেন তামিম। এটিই পরে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়। নিজের পঞ্চম বলে টেক্টরকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দেন শান্ত। লং অনে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন দাস।
বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের পরের অংশে পুরোটা মুস্তাফিজের লেখা। নিজের শেষ স্পেলে ফিরে তিন ওভারেই নেন একটি করে উইকেট। স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হন ক্যাম্পার, ইয়াসির আলির দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন জর্জ ডকরেল।
তবু পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন টাকার। নিজের শেষ ওভারে তাকেও ফেরান মুস্তাফিজ। লো ফুল টসে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন কিপার-ব্যাটসম্যান। এলবিডব্লিউয়ের জন্য আবেদন করতে থাকা মুস্তাফিজ প্রথমে বুঝতেই পারেননি বোল্ডের কথা।
টাকারের বিদায়ের পরও বাংলাদেশকে স্বস্তিতে থাকতে দেননি মার্ক অ্যাডায়ার। ২ চার ও ১ ছয়ে স্রেফ ৯ বলে তিনি করে ফেলেন ২০ রান। শেষ ওভারে বাকি থাকে ১০ রান।
হাসানের প্রথম বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড অ্যাডায়ার। তাতেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। এক বল পর অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনকেও আউট করেন হাসান। শেষ বলে ৬ রানের সমীকরণে দারুণ ইয়র্কারে দলকে জেতান তরুণ পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৪ (তামিম ৬৯, রনি ৪, শান্ত ৩৫, লিটন ৩৫, হৃদয় ১৩, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ৩৭, মৃত্যুঞ্জয় ৮, হাসান ১, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ১*; লিটল ৯-০-৬৫-০, অ্যাডায়ার ৮.৫-০-৪০-৪, ইয়াং ১০-০-৫৩-১, ক্যাম্পার ৫-০-৩৭-০, ম্যাকব্রাইন ৯-০-৩৯-২, ডকরেল ৭-০-৩১-২)
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬৯/৯ (ডোহেনি ৪, স্টার্লিং ৬০, বালবার্নি ৫৩, টেক্টর ৪৫, টাকার ৫০, ক্যাম্পার ১, ডকরেল ৩, ম্যাকব্রাইন ৪, অ্যাডায়ার ২০, ইয়াং ৩*, লিটল ১*; হাসান ৯-০-৪৪-২, মুস্তাফিজ ১০-১-৪৪-৪, ইবাদত ১০-১-৫৩-১, মৃত্যুঞ্জয় ৮-০-৬৪-০, মিরাজ ১০-১-৩৮-১, শান্ত ৩-০-১০-১)
ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-০তে জয়ী