গত বছরই জিম্বাবুয়েতে তিন ম্যাচেও ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই সিরিজটি ছিল আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। এবার তিন ম্যাচের সিরিজি সুপার লিগের অংশ ন। বালাদেশের জন্য এই সিরিজটির গুরুত্ব নেই খুব একটা।
র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (৭) চেয়ে অনেকটা পেছনে জিম্বাবুয়ে (১৫)। দুই দলের সবশেষ ১৯টি মুখোমুখি লড়াইয়েই জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের পর আর কোনো ওয়ানডে জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের জন্য এবার তাই প্রাপ্তির হাতছানি খুব একটা নেই।
অধিনায়ক তামিম ইকবাল চোখ রাখছেন তরুণদের পারফরম্যান্সে। সিরিজ শুরুর আগের দিন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, আগামী বিশ্বকাপের সম্ভাব্য দলে দু-একটি জায়গা এখনও নড়বড়ে আছে। এই সিরিজে সেই জায়গাগুলোয় তরুণরা কেমন পারফর্ম করে, তাতে নজর রাখবে দল।
শক্তি-সামর্থ্যে এমনিতেই অনেক পেছনে জিম্বাবুয়ে। তাদের শক্তি আরও কমে গেছে চোটের থাবায়। হ্যামস্ট্রিং ও হাঁটুর চোট মিলিয়ে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। তার জায়গায় এই সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেবেন রেজিস চাকাভা। ২০২০ সালে একটি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষেই, সিলেটে।
চোটের কারণে দলের সেরা দুই পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি ও টেন্ডাই চাটারাকেও পাচ্ছে না জিম্বাবুয়ে। এছাড়াও ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচেই টস হারার পর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও টস জিততে পারেনি বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে টস জিতে অনুমিতভাবেই বেছে নিয়েছে বোলিং।
জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক রেজিস চাকাভা সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বললেন, সকাল সোয়া ৯টায় শুরু ম্যাচে একটু স্যাঁতস্যাঁতে কন্ডিশন কাজে লাগাতে চান তারা।
সকাল সোয়া ৯টায় শুরু ম্যাচে প্রথম ১০-১৫ ওভার চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন তামিম ইকবাল। এই সময়টায় খুব বেশি উইকেট হারানো যাবে না, বলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার টিনো মায়োয়ো বললেন, উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে বলেই মনে হচ্ছে তার। উইকেটে হালকা সবুজ ঘাসের ছোঁয়া আছে। তাই বাউন্স সমান থাকবে বলেই ধারণা তার।
খেলা হচ্ছে এক পাশের উইকেটে। সেই পাশের বাউন্ডারি ৬৬ মিটার। আরেক পাশে বাউন্ডারি ৭৬ মিটার।
মায়োয়োর মতে, এই উইকেটে আগে ব্যাট করলে অন্তত ২৬০ রান করতেই হবে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫০ ওভারের সংস্করণে রেকর্ড রান করে জাতীয় দলে ফেরা এনামুল হক (বিজয়) অবশেষে এই সংস্করণে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ফেরার পর ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে এবার দেখা যাবে ওয়ানডেতে।
সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন তিনি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে, শ্রীলঙ্কায়।
আগের সফরে হজের কারণে ছুটিতে থাকা মুশফিকুর রহিম স্কোয়াডে ফিরে অনুমিতভাবে আছেন একাদশেও। বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৫ উইকেট নিলেও এই ম্যাচে জায়গা হয়নি তাইজুল ইসলামের।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, এনামুল হক, মুশফিকুর রহিম, মোসাদ্দেক হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের মতো তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে জিম্বাবুয়েও। একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন বাঁহাতি স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। এছাড়াও স্পিনে আছেন অলরাউন্ডার ওয়েসলি মাধেভেরে।
ওয়ানডে অভিষেক হচ্ছে পেসার ভিক্টর নিয়াউচির। চার বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামছেন ব্যাটসম্যান তারিসাই মুসাকান্দা।
জিম্বাবুয়ে একাদশ: রেজিস চাকাভা (অধিনায়ক), ইনোসেন্ট কাইয়া, ওয়েসলি মাধেভেরে, তারিসাই মুসাকান্দা, সিকান্দার রাজা, মিল্টন শুম্বা, রায়ার্ন বার্ল, লুক জঙ্গুয়ে, ভিক্টর নিয়াউচি, রিচার্ড এনগারাভা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।
ম্যাচের প্রথম ওভারে শুরুটা দারুণ করেন রিচার্ড এনগারাভা। দুটি ডেলিভারিতে তিনি অস্বস্তিতে ফেলেন তামিম ইকবালকে। তবে ওভারের শেষ বলে লেগ স্টাম্পে বল পেয়ে আলতো গ্ল্যান্স করে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে প্রথম রানের দেখা পান তামিম।
পরের ওভারটি সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করেন লিটন কুমার দাস। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভার মেডেন নেন ভিক্টর নিয়াউচি।
প্রথম ১০-১৫ ওভার দেখে খেলার যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তামিম ইকবাল, ব্যাটিংয়েও দেখা যাচ্ছে সেটিরই প্রতিফলন। তামিম ও লিটন দাস সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করে দিয়েছেন প্রথম ১০ ওভার। কোনো ঝুঁকি নেননি দুজনের কেউই।
জিম্বাবুয়ের পেসাররা কিছু দারুণ ডেলিভারি করেছেন। বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন কয়েক দফায়। তবে যথেষ্ট ধারাবাহিক তারা হতে পারেননি। তাই যথেষ্ট চাপ তৈরি করা যায়নি। কিছু আলগা বলও করেছেন। সেটির ফায়দা নিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা, বিশেষ করে তামিম।
১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫১।
তামিম খেলছেন ৩৪ বলে ৩১ রান নিয়ে, লিটন ২৬ বলে ১৪।
তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের জুটি আরও একবার বাংলাদেশকে এনে দিলেন অর্ধশত রানের শুরু। ৫৮ বলে এসেছে দুজনের জুটির পঞ্চাশ। তাতে তামিমের অবদান ৩২ বলে ৩১, লিটনের ২৬ বলে ১৪।
উদ্বোধনী জুটিতে ৩২ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাট করে দুজনের চতুর্থ অর্ধশত রানের জুটি এটি, শতরানের জুটি আছে আরও তিনটি।
প্রথম ১৫ ওভারে খুব বেশি উইকেট না হারানোর লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন তামিম। বাংলাদেশ উইকেট হারাল না একটিও। টস জিতে বোলিং নেওয়া জিম্বাবুয়েকে হতাশ করে এগিয়ে চলছে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের জুটি।
১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৯।
৪৬বলে৩৫রানেখেলছেনতামিম, ৪৪বলে২৭লিটন।
বোলিংয়ের সময় পায়ে টান লাগায় মাঠ ছেড়ে গেলেন রায়ার্ন বার্ল। জুটি ভাঙার চেষ্টায় অনিয়মিত এই বোলারকে আক্রমণে এনেছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক চাকাভা। তবে ১.১ ওভার লেগ স্পিন করেই মাঠ ছাড়তে হলো তাকে। তার আসল কাজ ব্যাটিং, যা লাগবে পরে। জিম্বাবুয়ের জন্য তাই তার মাঠ ছেড়ে যাওয়াটা দুর্ভাবনার।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ফিফটির রেকর্ডকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিলেন তামিম ইকবাল। মিল্টন শুম্বার বাঁহাতি স্পিনে প্যাডল শটে দুই রান নিয়ে পঞ্চাশে পা রাখলেন ৭৯ বলে।
এই সংস্করণে যা তার ৫৪তম ফিফটি, সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে ১৪টি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৫ ম্যাচে তার দশম ফিফটি এটি, পাশাপাশি শতরান আছে ৪টি।
ওয়ানডেতে নিজের সবশেষ ৫ ম্যাচে এই নিয়ে তৃতীয়বার পঞ্চাশের দেখা পেলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
সিকান্দার রাজার বলে তামিম ইকবালের সিঙ্গেলে দলের রান স্পর্শ করল ১০০। একই সঙ্গে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের জুটির শতরানও হয়ে গেল।
১৩৯ বলে এলো জুটির ১০০। তাতে তামিমের অবদান ৫৩, লিটনের ৩৭।
উদ্বোধনী জুটিতে দুজনের চতুর্থ শতরানের জুটি এটি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং মাইলফলকের অনেকগুলিতেই সবার আগে পা রেখেছেন যিনি, সেই তামিম ইকবাল ৮ হাজার ওয়ানডে রানও করে ফেললেন দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে।
মাইলফলকের ৫৭ রান দূরে থেকে এই ম্যাচ শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। ৫৩ থেকে সিকান্দার রাজার বলে বাউন্ডারি মেরে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলেন তিনি।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ৩৩তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৮ হাজার ছুঁলেন তামিম। ওপেনার হিসেবে এত রান করেছেন আগে কেবল আর ৮ জন।
২২৭ ইনিংসে ৮ হাজার হলো তামিমের। ১৭৫ ইনিংসে এই মাইলফলক ছুঁয়ে বিশ্বরেকর্ড বিরাট কোহলির, ১৭৬ ইনিংস লেগেছে হাশিম আমলার।
ফিফটির পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। সেই চেষ্টায় নিজের উইকেট হারারেন তিনি। জিম্বাবুয়ে পেল প্রথম উইকেটের দেখা। ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া বোলার সিকান্দার রাজা।
রাজার লেংথ বলটি মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু পিচ করে একটু থমকে আসে বল। তামিমের ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। সেখানে ক্যাচ নেন ইনোসেন্ট কাইয়া।
৯ চারে ৮৮ বলে ৬২ রান করে শেষ হলো তামিমের ইনিংস। জুটি থামল ১১৯ রানে।
নতুন ব্যাটসম্যান এনামুল হক। ওয়ানডেতে ফিরেছেন যিনি ৩ বছর পর।
প্রিয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে আরও একটি ফিফটি করে ফেললেন লিটন কুমার দাস। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৭৫ বলে পৌঁছলেন পঞ্চাশে।
৫৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার সেঞ্চুরি ৫টি, ফিফটি হলো ৭টি। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচেই সেঞ্চুরি ৩টি, ফিফটি ২টি।
বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডেতেও গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফিফটি করেছিলেন লিটন।
ফিফটি পূর্ণ হওয়ার পর রানের গতিতে দম দেওয়ার তাড়না লিটন দাসের ব্যাটে। পঞ্চাশ ছোঁয়ার ওভারেই ওয়েলিংটন মাসাকাদজার ওভারে বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন তিনবার। প্রথম দুটি মিড উইকেট দিয়ে, পরেরটি কাট করে ডিপ পয়েন্ট দিয়ে।
তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচে অর্ধশত রানের অংশীদারী হলেন এনামুল হক। যদিও জুটিতে তার তাজ ছিল কেবল সঙ্গ দেওয়া, রান বাড়ানোর কাজটি করেন মূলত লিটন দাসই।
তামিম ইকবালের বিদায়ের পর মাত্র ৪৩ বলেই এলো দ্বিতীয় জুটির পঞ্চাশ।
জুটিতে লিটনের রান ২১ বলে ৩৩, এনামুলের রান ২২ বলে ১৭।
ফিফটির পর থেকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছিলেন লিটন দাস। দারুণ কিছু শটে বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন দলের ও নিজের রান। কিন্তু আচমকাই থামতে হলো তাকে। আউট হয়ে নয়, পায়ে টান লেগে!
৩৪তম ওভারে সিকান্দার রাজার বল আলতো করে অন সাইডে খেলেই দ্রুত রান নিতে ছোটেন লিটন। রানের শেষ পর্যায়ে তাকে দেখা যায় একটু খোঁড়াতে। পরে মাঠেই পড়ে যান তিনি। ফিজিও এসে চিকিৎসাও করেন তাৎক্ষনিক। তবে আর উঠে দাঁড়ানোর অবস্থা হয়নি। মাঠ ছাড়তে হয় তাকে স্ট্রেচারে করে।
৯ চার ও ১ ছক্কায় তখন ৮৯ বলে ৮১ রানে খেলছিলেন লিটন।
ফিফটি করতে তার লেগেছিল ৭৫ বল। পরের ৩১ রান আসে স্রেফ ১৪ বলেই।
সিকান্দার রাজার বলে মুশফিকুর রহিমের বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের রান স্পর্শ করল ২০০। ৩৮ ওভার শেষে দলের রান ১ উইকেটে ২০৩।
বাংলাদেশের প্রথম ১০০ এসেছিল ১৩৯ বলে। দ্বিতীয় ১০০ করতে লাগল স্রেফ ৮৯ বল।
শেষের ঝড় তোলার আদর্শ মঞ্চ পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৪০ ওভার শেষে দলের রান ১ উইকেটে ২১৩।
৪৫ বলে ৪৩ রান নিয়ে খেলছেন এনামুল হক, ১৮ বলে ১৫ রানে মুশফিকুর রহিম।
তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচটি দারুণ এক ফিফটিতে রাঙালেন এনামুল হক। মিল্টন শুম্বার বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে পঞ্চাশে পা রাখলেন ৪৭ বলেই।
৩৯ ওয়ানডেতে তার চতুর্থ ফিফটি এটি, সেঞ্চুরি আছে আরও ৩টি। সবশেষ ফিফটি করেছিলেন তিনি ২০১৪ সালের নভেম্বরে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই মিরপুরে।
পায়ে টান লেগে লিটন দাস মাঠ ছাড়ার পর আরেকটি জুটিতে অর্ধশত রান পেল বাংলাদেশ। এনামুল হক
ও মুশফিকুর রহিমের জুটির ফিফটি এলো ৪৬ বলেই।
তাতে এনামুলের অবদান ৩৩, মুশফিকের ১৭।
রিচার্ড এনগারাভার বলে লফটেড কাট শটে ছক্কার চেষ্টা করছিলেন এনামুল হক। টাইমিং ঠিকমতো হয়নি। সহজ ক্যাচ যায় কাভার সীমানায় ওয়েসলি মাধেভেরের কাছে। কিন্তু দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন মুঠোবন্দি করতে পারেননি বল। এনামুল জীবন পেলেন ৭১ রানে।
শক্ত ভিতের পর শেষ দিকে যেমন ঝড়ের প্রত্যাশা ছিল, তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে রান বাড়ছে দারুণ গতিতে।
৪৫ ওভার শেষে রান ১ উইকেটে ২৬৪।
৪০ ওভারের পর ৫ ওভারে এসেছে রান ৫১।
৬ চার ও ৩ ছক্কায় এনামুল খেলছেন ৬০ বলে ৭২ রান নিয়ে। মুশফিকের রান ৩৩ বলে ৩৫।
জীবন পাওয়ার পর খুব বেশি দূরে এগোতে পারলেন না এনামুল হক। ৭১ রানে বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যান আউট হলেন ৭৩ রানে। তবে তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচটিতে কাজে লাগালেন সুযোগ।
৪৬তম ওভারের প্রথম চার বলে রান আসে স্রেফ তিন। বড় শট তাই খেলতেই হতো। ভিক্টর নিয়াউচির বলে সেই চেষ্টাই করেন এনামুল। ফুল লেংথ বল চেষ্টা করেন ছক্কায় ওড়াতে। তবে মারে জোর পাননি বেশি। লং অনে ক্যাচ নেন তারিসাই মুসাকান্দা।
৬২ বলে ৭৩ রানে আউট হলেন এনামুল। মুশফিকের সঙ্গে তার জুটি ৭৬ বলে ৯৬ রানের।
নতুন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ।
৪৫ ওভারের পর টাইমিং করতে একটু ভুগছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে শেষ ওভারে প্রত্যাশিত ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। ৪৮ বলে স্পর্শ করলেন পঞ্চাশ।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার ৪২তম ফিফটি এটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৯ ম্যাচে ফিফটি হলো ৯টি, আরও দুটি আছে সেঞ্চুরি।
শেষ ৫ ওভারে যতটা ঝড় প্রত্যাশিত ছিল, তা হয়নি। তবে তিনশ রান ঠিকই পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলের ইনিংস থেমেছে ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৩ রানে।
৪০থেকে৪৫ওভারেরানউঠেছিল৫১।এরপর৪৬থেকে৫০, এই৫ওভারেএসেছে৩৯রান।
সকাল সোয়া ৯টায় শুরু ম্যাচে প্রথমে সাবধানে ব্যাট করে পরে রান বাড়ানোর যে পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের, তাতে দারুণভাবেই সফল তারা। শতরানের জুটিতে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস গড়ে দেন ভিত।
তামিম ফিফটির পর বেশি দূর এগোতে না পারলেও পঞ্চাশের পর ঝড় তোলেন লিটন। তিনি পায়ে টান লেগে মাঠ ছাড়ার পর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিম।
৮৮ বলে ৬২ রানে আউট হন তামিম। লিটন মাঠ ছাড়েন ৮৯ বলে ৮১ রান করেন। তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে এনামুল করেন ৬২ বলে ৭৩। আর মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৫২ রানে। শেষ দিকে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ১২ বলে করেন অপরাজিত ২০।
প্রথম ২৫ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১১৬ রান। পরের ২৫ ওভারে আসে ১৮৮ রান!
জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক রেজিস চাকাভা ব্যবহার করেন ৮ জন বোলার। খুব একটা সফল হননি কেউই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৩/২ (তামিম ৬২, লিটন আহত অবসর ৮১, এনামুল ৭৩, মুশফিক ৫২*, মাহমুদউল্লাহ ২০*; এনগারাভা ১০-১-৬১-০, নিয়াউচি ১০-১-৭০-১, মাসাকাদজা ৫-০-৩১-০, জঙ্গুয়ে ১০-০-৫৬-০, বার্ল ১.১-০-৮-০, শুম্বা ৪.৫-০-২৭-০, রাজা ৯-০-৪৮-১, মাধেভেরে ১-০-৫-০)।
ওয়ানডেতে এই নিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশের ইনিংসে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস দেখা গেল চারটি।
প্রথম এটি দেখা গিয়েছিল ২০১৪ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেবার সেঞ্চুরি করেছিলেন এনামুল হক, ফিফটি করেন ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম।
এরপর ২০১৫ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৯ রান তাড়ায় পঞ্চাশ ছাড়ান তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও সাকিব আল হাসান।
এবারেরআগেসবশেষছিলগতবছরওয়েস্টইন্ডিজেরবিপক্ষেচট্টগ্রামে, ফিফটিছাড়ানসেবারতামিম, সাকিব, মুশফিকওমাহমুদউল্লাহ।
বড় রান তাড়ায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারলেন না রেজিস চাকাভা। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক আউট হলেন ইনিংসের প্রথম ওভারেই।
ডেলিভারিটি ছির একদমই নীরিহ। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে আরও বেরিয়ে যাচ্ছিল বল। চাকাভা বলের পিচে না গিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে চেষ্টা করেন গায়ের জোরে মারার। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে আসে স্টাম্পে।
৬ বলে ২ রানে আউট চাকাভা। ১ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের রান ১ উইকেটে ২।
চার বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা সুখকর হলো না তারিসাই মুসাকান্দার জন্য। মুস্তাফিজের মতো প্রথম ওভারে উইকেটের দেখা পেলেন শরিফুল ইসলামও।
প্রথমটির মতো এটিও ব্যাটসম্যানের উপহার। শরিফুলের বলটি মোটেও খুব ভালো কিছু ছিল না। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে ফুল লেংথ বলটির প্রাপ্য ছিল বাউন্ডারি। কিন্তু উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বলের নিচে যেতে পারেননি মুসাকান্দা। টাইমিংয়র গড়বড়ে বল উঠে যায় স্রেফ ওপরে। বৃত্তের ভেতর কাভারে সহজ ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক হোসেন।
মুসাকান্দা বিদায় নিলেন ৫ বলে ৪ রান করে। ৩০৪ রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ে ২ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৬।
নতুনব্যাটসম্যানওয়েসলিমাধেভেরে, তারসঙ্গীওপেনারইনোসেন্টকাইয়া।
প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারানোর পর ওপেনার ইনোসেন্ট কাইয়া ও চারে নামা ওয়েসলি মাধেভেরে লড়াই করছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। দুজনের জুটিতে দলের রান পঞ্চাশ স্পর্শ করেছে ১০.৫ ওভারে।
ইনোসেন্ট কাইয়া ও ওয়েসলি মাধেভেরের ব্যাটে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে। ৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দুজনে গড়েছেন অর্ধশত রানের জুটি।
তৃতীয়উইকেটেদুজনেরজুটিরপঞ্চাশএসেছে৬৪বলে।
ইনোসেন্ট কাইয়া ও ওয়েসলি মাধেভেরের জমে যাওয়া জুটি ভেঙে গেল রান আউটে। মিসফিল্ডিংয়ে রান নেওয়ার চেষ্টায় অযথা উইকেট হারালেন মাধেভেরে।
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে অন সাইডে খেলেন মাধেভেরে। একটি রান হয়ে যায় অনায়াসেই। মিড উইকেটে বদলি ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম বল থামাতে গিয়ে গড়বড় করেন খানিকটা। তাতেই আরেকটি রান নিতে চেষ্টা করেন দুই ব্যাটসম্যান। তবে ফিল্ডার দ্রুতই সামলে থ্রো করেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। রান নিতে গিয়ে মাঝ উইকেটে চলে যাওয়া মাধেভেরে আবার ফেরার চেষ্টায় পারেননি সফল হতে। বোল্ডার মিরাজ বল ধরে ফেলে দেন বেলস।
২৭ বলে ১৯ রান করে আউট হলেন মাধেভেরে। ৫৬ রানে থামল তৃতীয় উইকেট জুটি।
নতুন ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে বড় ভরসা সিকান্দার রাজা।
মাধেভেরের রান আউটের পর জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে নিচ্ছেন ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। ২০.২ ওভারে দলের রান স্পর্শ করেছেন ১০০।
বাংলাদেশের ১০০ হয়েছিল ২৩.১ ওভারে।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পেলেন ইনোসেন্ট কাইয়া। প্রথম ওভারে উইকেট হারানোর পর ক্রিজে গিয়ে দারুণ কিছু শট খেলা ব্যাটসম্যান ফিফটি পূর্ণ করলেন ৭ চারে ৬৬ বল খেলে।
শুধু ধাক্কা সামাল দেওয়াই নয়, ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার জুটি রানের গতিও বাড়িয়ে লক্ষ্যের পথে রেখেছে জিম্বাবুয়েকে। দুজনের ব্যাটে চতুর্থ উইকেট জুটির ফিফটি এসেছে ৫৬ বলেই।
জুটিতে বেশি সক্রিয় রাজা, তার ব্যাট খেকে এসেছে ৩১ রান। কাইয়ার অবদান ১৯ রান।
জুটি ভাঙার একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাসকিন আহমেদের বলে সিকান্দার রাজার ক্যাচ ছাড়লেন বদলি হিসেবে মাঠে নামা তাইজুল ইসলাম।
তাসকিনের ফুল লেংথ বলে ড্রাইভ করেন রাজা। একটু পিচ করে একটু থমকে আসে বল। তাতে টাইমিং ঠিকমতো না হওয়ায় বল যায় শর্ট কাভারে। সেখানে তাইজুল ছেড়ে ছেড়ে সহজ ক্যাচ।
রাজা তখন ব্যাট করছিলেন ৪৩ রানে।
প্রয়োজনীয় রান রেট বাড়ছে। তবে রান তাড়ায় এখনও ভালোভাবেই লড়াইয়ে আছে জিম্বাবুয়ে। ৩০ ওভার শেষে তাদের রান ৩ উইকেটে ১৪৭।
৬৫ রান নিয়ে খেলছেন কাইয়া, ৪৭ রানে রাজা। জুটির রান ৮৩।
এইপর্যায়েতারাবাংলাদেশেরচেয়েএগিয়েআছে।৩০ওভারশেষেবাংলাদেশেররানছিল১উইকেটে১৪৪।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই নতুন মাত্রা পেয়েছে জিম্বাবুয়ের রান তাড়া। দারুণ সব শট খেলে তিনি বাড়াচ্ছেন রান, দলকে রেখেছেন লক্ষ্যে। মুস্কাফিজুর রহমানের স্লোয়ারে লং অফ দিয়ে ছক্কা মেরে তিনি পৌঁছে গেছেন ফিফটিতে।
তার ইনিংসের তৃতীয় ছক্কা সেটি। আগে ছক্কা মেরেছেন শরিফুল ও তাসকিনকে। ফিফটি করেছেন ৫৭ বলে।
তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি এটি। সেঞ্চুরি আছে আরও তিনটি।
ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার জুটি ক্রমশই হুমকি হয়ে উঠছে বাংলাদেশের জন্য। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রাজার বাউন্ডারিতে জুটির শতরান এসেছে ১১২ বলে।
জুটিতেঅনেকটাইঅগ্রণীরাজা, একাইকরেছেনএখানে৬৩রান।কাইয়ারব্যাটথেকেএসেছে৩৭।
সিকান্দার রাজার পর আরেক ব্যাটসম্যান ইনোসেন্ট কাইয়াকে ফেরানোর সুযোগও হারাল বাংলাদেশ। যদিও এবারের সুযোগটি ছিল তুলনামূলক একটু কঠিন।
শরিফুল ইসলামের লেংথ বলে স্লগ করার চেষ্টা করেন কাইয়া। বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে উড়ে যায় থার্ড ম্যানের দিকে। সেখানে ফিল্ডার তাসকিন আহমেদ দৌড়ে এসে বলের নিচে গেলেও মুঠোবন্দি করতে পারেননি বল।
কাইয়ার রান তখন ৬৮।
শরিফুলের ওভারে আরও একবার রক্ষা পেলেন ইনোসেন্ট কাইয়া। এবার ক্যাচ নিতে পারলেন না বোলার নিজেই।
অফ স্টাম্পে থাকা ফুল লেংথ বল সোজা ব্যাটে সজোরে খেলেন কাইয়া। বল উড়ে যায় বোলারের দিকে। শরিফুল ফলো থ্রুতে বলে হাত লাগালেও জমাতে পারেনি মুঠোয়। উল্টো চোট পেয়ে পড়ে যান মাঠে।
৬৮ রানের পর কাইয়া আবার বেঁচে গেলেন ৭৪ রানে।
ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার দারুণ ব্যাটিংয়ে ক্রমশ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে জিম্বাবুয়ে। ৩৫.৪ ওভারে দলের রান হয়ে গেল ২০০।
প্রথম একশ হয়েছিল তাদের ১২২ বলে, দ্বিতীয় একশতে বল লাগল ৯২টি।
৭ বছর পর রাজার সেঞ্চুরি
কাইয়ার সেঞ্চুরির ওভারেই শতরান পূরণ করলেন সিকান্দার রাজা। তাসকিন আহমেদের বলে দুটি রান দিয়ে সেঞ্চুরি করলেন তিনি স্রেফ ৮১ বলে। তার ইনিংসে চার ৮টি, ছক্কা ৪টি।
জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ব্রেন্ডন টেইলরের, ৭৯ বলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
রাজার এটি চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম।
৭বছরপরতিনিস্বাদপেলেনওয়ানডেসেঞ্চুরির।এইসংস্করণেতারসবশেষসেঞ্চুরিছির২০১৫সালেরঅগাস্টে।
দারুণ ব্যাটিংয়ে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন ইনোসেন্ট কাইয়া। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডেতেই পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ।
তাসকিন আহমেদের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১১৫ বলে এলো তার শতরান।
বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের কোনো ব্যাটসম্যানের সবশেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল শন উইলিয়ামসের, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে।
৪০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের রান ৩ উইকেটে ২৪২। শেষ ১০ ওভারে তাদের প্রয়োজন স্রেফ ৬২ রান।
৪০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছির ২১৩।
ইনোসেন্ট কাইয়াকে আউট করার আরেকটি সুযোগ হারাল বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক হোসেনের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি। স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ, কিন্তু বল গ্লাভসেই জমাতে পারলেন না কিপার এনামুল হক।
কাইয়া জীবন পেলেন ১১০ রানে। আগেও বেঁচে গেছেন দুই দফায়।
জীবন পাওয়ার পরের বলেই আরেকটি সুযোগ দিলেন ইনোসেন্ট কাইয়া। মোসাদ্দেকের বল স্লগ করে উঠিয়ে দিলেন ওপরে। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। সহজ ক্যাচটি নেন শরিফুল ইসলাম।
তবে ১২২ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছেন কাইয়া। রাজার সঙ্গে তার জুটি থামল ১৯২ রানে।
জিম্বাবুয়ের রান ৪ উইকেটে ২৫৪।
ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার এই ১৯২ রানের জুটি বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটেই জিম্বাবুয়ের সেরা জুটি।
দুজনেভেঙেদিয়েছেন২৫বছরপুরনোরেকর্ড।১৯৯৭সালেকেনিয়ারনাইরোবিতেওপেনিংয়ে১৬১রানেরজুটিগড়েছিলেনদুইভাইঅ্যান্ডিওগ্রান্টফ্লাওয়ার।
ইনোসেন্ট কাইয়াকে ফেরাতে পারলেও জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজা ও লুক জঙ্গুয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন জয়ের পথে।
শেষ ৪ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন স্রেফ ২১ রান।
রাজা খেলছেন ১২৫ রানে, জঙ্গুয়ে ১০ রানে।
ক্যাচ ছাড়ার মহড়ায় যোগ হলো আরেকটি। এবার মুস্তাফিজুর রহমানের বলে লুক জঙ্গুলের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন তাসকিন আহমেদ। জঙ্গুয়ের রান তখন ১৭।
দারুণ এক ক্যামিও খেলে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বিদায় নিলেন লুক জঙ্গুয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তিনি সীমানায় ধরা পড়লেন ১৯ বলে ২৪ রান করে।
খবি একটা শঙ্কা অবশ্য তাতে নেই জিম্বাবুয়ের। জয় তাদের নাগালেই।
মোসাদ্দেক হোসেনের বল উড়িয়ে মেরেই সিকান্দাররাজা বুঝে গেলেন, বল উড়ে যাচ্ছে সীমানার বাইরে। ফেটে পড়লেন তিনি হুঙ্কার আর উল্লাসে। জিতে গেল জিম্বাবুয়ে!
ছক্কা দিয়েই রাজা ম্যাচ শেষ করে দিলেন ১০ বল বাকি রেখে। জিম্বাবুয়ে জিতে গেল ৫ উইকেটে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫৮ রানের বেশি তাড়া করে আগে কখনও জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে। এবার সেটিকে ছাড়িয়ে তারা ম্যাচ জিতল ৩০৪ রান তাড়ায়।
তিনশর বেশি রান তাড়ায় জিতল তারা মাত্র চতুর্থবার।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেন জিততেই ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ২০১৩ সালের পর আর কোনো ওয়ানডেতে তারা পারেনি বাংলাদেশকে হারাতে। অবশেষে অনেক প্রতীক্ষা আর পালাবদলের পর ধরা দিল বহু কাঙ্ক্ষিত সেই জয়।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা ১৯ ওয়ানডে হারার পর এলো এই জয়!
সবশেষ জয়টি ছিল বুলাওয়ায়োতে। ২০১৩ সালের মে মাসে সেই জয়ে দলের অধিনায়ক ছিলেন ব্রেন্ডন টেইলর। এল্টন চিগুম্বুরা, প্রসপার উতসেয়া, কাইল জার্ভিস, ব্রায়ান ভিটরি, ভুসি সিবান্দারা খেলছেন তখনও! সেই জয়ের দল থেকে এবারের জয়ে খেলেছেন কেবল রাজাই।
সেই রাজা এবারের জয়ের নায়ক। ৮ চার ও ৬ ছক্কায় তিনি অপরাজিত ১০৯ বলে ১৩৫ রান করে।
প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারানোর পর ইনোসেন্ট কাইয়া ও ওয়েসলি মাধেভেরের ৫৬ রানের জুটিতে গড়া হয় প্রতিরোধ। এরপর কাইয়া ও রাজার ১৯২ রানের রেকর্ড গড়া জুটি দুর্দান্ত এই জয়।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল ধারহীন। ফিল্ডিং ছিল যাচ্ছেতাই। সেঞ্চুরির আগে ২ দফায় জীবন পান কাইয়া। সেঞ্চুরির পর আরেকবার। রাজা সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ৪৩ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৩/২ (তামিম ৬২, লিটন আহত অবসর ৮১, এনামুল ৭৩, মুশফিক ৫২*, মাহমুদউল্লাহ ২০*; এনগারাভা ১০-১-৬১-০, নিয়াউচি ১০-১-৭০-১, মাসাকাদজা ৫-০-৩১-০, জঙ্গুয়ে ১০-০-৫৬-০, বার্ল ১.১-০-৮-০, শুম্বা ৪.৫-০-২৭-০, রাজা ৯-০-৪৮-১, মাধেভেরে ১-০-৫-০)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৮.২ওভারে৩০৭/৫ (চাকাভা২, মুসাকান্দা৪, কাইয়া১১০, মাধেভেরে১৯, রাজা১৩৫*, জঙ্গুয়ে ২৪, শুম্বা ১*; মুস্তাফিজ৯-০-৫৭-১, শরিফুল৮.৪-০-৫৭-১, তাসকিন১০-১-৫২-০, মিরাজ১০-০-৫৯-১, মোসাদ্দেক৯.২-০-৬৭-১, মাহমুদউল্লাহ১.২-০-১২-০)।