সিলেট টেস্টের পঞ্চম দিন নিউ জিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল।
Published : 02 Dec 2023, 08:17 AM
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩১০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩৩৮
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩২) ৭১.১ ওভারে ১৮১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩১০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩৩৮
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩২) ৪৯ ওভারে ১১৩/৭ (ল্যাথাম ০, কনওয়ে ২২, উইলিয়ামসন ১১, নিকোলস ২, মিচেল ৪৪*, ব্লান্ডেল ৬, ফিলিপস ১২, জেমিসন ৯, সোধি ৭*; শরিফুল ৬-২-১৩-১, মিরাজ ১১-৩-৩১-১, তাইজুল ২০-৭-৪০-৪, নাঈম ১০-১-২৪-১, মুমিনুল ২-০-৫-০)
ভরাডুবির বিশ্বকাপ শেষে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে অবিস্মরণীয় এক জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। পূর্ণ শক্তির নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের অনির্বচনীয় স্বাদ পাওয়ার অপেক্ষায় নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল।
৩৩২ রানের ভীষণ কঠিন লক্ষ্য তাড়ায় ৭ উইকেটে ১১৩ রানে চতুর্থ দিন শেষ করে নিউ জিল্যান্ড। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার প্রথম টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিন সফরকারীদের চাই আরও ২১৯ রান। বাংলাদেশ চাই কেবল শেষ ৩ উইকেট।
চতুর্থ দিন উইকেটে বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা ছিল। পঞ্চম দিন সেটা আরও বাড়ার কথা। ব্যাটসম্যানদের টিকে থাকার পথ আরও কঠিন-ই হওয়ার কথা। তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানদের সামর্থ্যে আস্থা রেখে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার আশা বাংলাদেশের।
সাত উইকেট হারিয়ে ফেললেও আশা ছাড়ছে না নিউ জিল্যান্ড। ৪৪ রানে অপরাজিত ড্যারিল মিচেলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে তারা। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে যতটা সম্ভব লড়াই করতে মিচেলই তাদের ভরসা।
দিনের শুরুতেই পঞ্চাশ পূর্ণ করলেন বাংলাদেশের জয়ের পথে বড় কাঁটা হয়ে টিকে থাকা ড্যারেল মিচেল। ৬ চারে ৯৯ বলে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটিতে পৌঁছালেন তিনি।
৫২ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১১৯ রান। মিচেল ৫০, ইশ সোধি ৮ রানে খেলছেন। জয়ের জন্য তাদের এখনও প্রয়োজন ২১৩ রান।
শেষ দিনে প্রথম বলেই তাইজুল ইসলামের গুড লেংথে পিচ করা ডেলিভারি অনেকটা নিচু হয়ে যায়। এরপর অবশ্য তেমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়নি প্রথম চার ওভারে।
তাইজুল ইসলামের দারুণ ক্যাচে বিদায়ঘণ্টা বাজল ড্যারিল মিচেলের। নাঈম হাসানের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি সুইপ করার চেষ্টায় ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৭ চারে ১২০ বল খেলে ৫৮ রান করে ফিরলেন মিচেল। তার বিদায়ে জয়ের আরও কাছে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ।
৫৯ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৩৪ রান। বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ২ উইকেট। ক্রিজে এখন টিম সাউদি ও ইশ সোধি।
আরও একবার রিভিউয়ের সফল ব্যবহার করলেন ইশ সোধি। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন তিনি।
নাঈম হাসানের বেশ বড় টার্ন করা ডেলিভারি তার প্যাড ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের হাতে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন সোধি।
রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটে লাগেনি বল। পরে দেখা হয়, এলবিডব্লিউ হয়েছেন কিনা সোধি। কিন্তু অনেক বেশি টার্ন করায় লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যেত বল। তাই বেঁচে যান ১৭ রানে খেলতে থাকা সোধি।
৬৪ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৬২ রান। এরই মধ্যে অষ্টম উইকেটে এসেছে ৩০ রান। সোধি ১৭, টিম সাউদি ২১ রানে খেলছেন।
টিম সাউদির পাল্টা আক্রমণ থামিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করলেন তাইজুল ইসলাম। শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন স্রেফ ২৪ বলে ৩৪ রান করা নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক।
টেস্ট ক্যারিয়ারে তাইজুলের দ্বাদশ ৫ উইকেট এটি। চলতি বছর দ্বিতীয়।
স্মরণীয় এক জয় থেকে স্রেফ এক উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলামের লেগ স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি বাড়তি বাউন্স করে ছুঁয়ে গেল ইশ সোধির ব্যাটের বাইরের কানা। সিলি পয়েন্টে সহজ ক্যাচ নিলেন জাকির হাসান। বাংলাদেশ পেল মনে রাখার মতো এক জয়।
শেষ দিন সকালে জয় থেকে ৩ উইকেট দূরে থেকে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ড্যারিল মিচেলকে ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙেন নাঈম হাসান। শেষ দুই উইকেট নেন তাইজুল। স্বাগতিকদের জয় দেড়শ রানে।
দাপুটে পারফরম্যান্সে স্মরণীয় এই জয় দিয়েই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয় এটি। গত বছর তাদের ঘরের মাঠে প্রথম জয়।
শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। দুই ইনিংস মিলে তার শিকার ১০ উইকেট। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন তিনি। ম্যাচে দুইবার ১০ উইকেট নেওয়া তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার তাইজুল। আগের দুজন- সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩১০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩৩৮
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩২) (আগের দিন ১১৩/৭) ৭১.১ ওভারে ১৮১ (মিচেল ৫৮, সোধি ২২, সাউদি ৩৪, এজাজ ০*; শরিফুল ৬-২-১৩-১, মিরাজ ১৫-৪-৪৪-১, তাইজুল ৩১.১-৮-৭৫-৬, নাঈম ১৭-৩-৪০-২, মুমিনুল ২-০-৫-০)
ফল: বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী
টেস্টে বাংলাদেশের একাধিক জয় ছিল কেবল দুটি দেশ- জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো নিউ জিল্যান্ডের নাম।
এই তিন দেশের বিপক্ষে ঘরে ও প্রতিপক্ষের মাটিতে জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সেই তালিকায় নিউ জিল্যান্ডকে যুক্ত করতে ঢাকা টেস্টের দিকে তাকিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল।
লম্বা সময় ধরেই টেস্টে ভালো করছেন তাইজুল ইসলাম। তবে সব সময়ই কারো না কারো পারফরম্যান্সে আড়ালেই পড়ে যায় তার অবদান। তাই এতো দিনে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিততে পেরেছিলেন কেবল একবার, সেই ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
৯ বছরের বেশি সময় পর ফের ম্যাচ সেরা হলেন তাইজুল।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৮৪ রানে ১০ উইকেট নিয়েছেন অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট, দ্বিতীয়টিতে ৬টি। দুই ইনিংসেই আউট করেছেন প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসনকে।