সবশেষ সিরিজে হারতে হয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে কক্ষপথে ফেরার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে। প্রতিপক্ষ ভীষণ কঠিন- রোহিত শর্মার ভারত।
এই লড়াইয়ে নিয়মিতি অধিনায়ক তামিম ইকবালকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তার অনুপস্থিতিতে ওয়ানডেতে নেতৃত্বের অভিষেক হচ্ছে লিটন দাসের। থাকছেন না গতিময় পেসার তাসকিন আহমেদও।
চোটের জন্য ভারত জাসপ্রিত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামিকে পাচ্ছে না তারা।
নেতৃত্বের অভিষেকে টস জিতলেন লিটন দাস। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিলেন বোলিং। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না, টস জিতলে কি নেওয়া উচিত। তবে আভাস দিলেন তিনিও হয়তো বোলিংই নিতেন।
লম্বা সময় পর মিরপুরে হচ্ছে ওয়ানডে। সবশেষ এই সংস্করণে খেলা হয়েছিল গত বছরের ২৮ মে।
তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে নেমেছে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে পেস বোলিং আক্রমণে থাকছেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও হাসান মাহমুদ। বোলিংয়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
টপ অর্ডারে জায়গা পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও এনামুল হক বিজয়। মিডল অর্ডারে জায়গা হয়নি ইয়াসির আলি চৌধুরি রাব্বির।
বাংলাদেশ: লিটন দাস (অধিনায়ক), এনামুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত।
চিকিৎসক দলের সঙ্গে কথা বলে রিশাভ পান্তকে ওয়ানডে দল থেকে ছেড়ে দিয়েছে ভারত। চোটের জন্য আকসার প্যাটেলকে প্রথম ম্যাচে পাচ্ছে না তারা।
অভিষেক হচ্ছে পেসার কুলদিপ সেনের। ভারত খেলছে চার পেসার নিয়ে।
পান্তের অনুপস্থিতিতে উইকেটের পেছনে দাঁড়াবেন লোকেশ রাহুল।
ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, শাহবাজ আহমেদ, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ, দিপক চাহার, কুলদিপ সেন।
একটি চার মারলেও ঠিক স্বস্তিতে ছিলেন না শিখর ধাওয়ান। একের পর এক ডট বলে বাড়ছিল চাপ। সেটি সরিয়ে দিতে বাঁহাতি ওপেনার আশ্রয় নিলেন রিভার্স সুইপের। সফল হলেন না ঝুঁকি নিয়ে, উল্টো হলেন বোল্ড।
আগের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম বলটিই হয়তো নাড়িয়ে দিয়ে থাকবে শিখর ধাওয়ানকে। স্পিন করে ব্যাটের কানা ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিল বল।
সে কারণেই হয়তো ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলেন ধাওয়ান। অফ স্টাম্পে থাকা বল তার প্রত্যাশার একটু বেশি বাউন্স করায় ব্যাটে খেলতে পারেননি। কব্জিতে লেগে, শরীর ছুঁয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ভাঙে ২৩ রানের জুটি।
১৭ বলে এক চারে ৭ রান করেন ধাওয়ান।
ক্রিজে গিয়ে তৃতীয় বলেই ক্যাচের মতো তুলে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। ভাগ্য ভালো তার, একটুর জন্য ফিল্ডারের হাতে যায়নি।
৬ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ২৩।
প্রথম ১০ ওভারে একটি উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। খুব বেশি রানও করতে দেয়নি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের।
পাওয়ার প্লে শেষে ভারতের রান ১ উইকেটে ৪৮। ২৯ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ২৭ রানে খেলছেন রোহিত শর্মা। ১৪ বলে বিরাট কোহলির রান ৯।
প্রথম ১০ ওভার বোলিং করতে তিন জন বোলার ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক লিটন দাস।
২ ওভারে কেবল ৬ রান দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। একটু খরুচে ছিলেন হাসান মাহমুদ। ৪ ওভারে তরুণ এই পেসার দিয়েছেন ২৭ রান।
একমাত্র উইকেটটি নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অফ স্পিনার ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে বিদায় করেন শিখর ধাওয়ানকে।
পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আক্রমণে এলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের সফলতম বোলার চার বলের মধ্যে ফিরিয়ে দিলেন ভারতের দুই ব্যাটিং ভরসা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে।
প্রথম বল ডিফেন্স করেন রোহিত। পরের বলটি টার্ন করে বেরিয়ে যাবে ভেবে খেলেন ভারত অধিনায়ক। সেটি না করে বরং কিছুটা ভেতরে ঢুকে ছোবল দেয় স্টাম্পে।
৩১ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় রোহিত করেন ২৭।
এক বল পর মেলে আরেক বড় উইকেট। এতে অবশ্য দারুণ কৃতিত্ব লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচের। স্টাম্পে থাকা বল ড্রাইভ করেছিলে কোহিল। কিন্তু পার করতে পারেননি শর্ট কাভারে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ককে। অনেকটা গোলরক্ষকের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বল হাতে জমান লিটন!
কোহলির বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এই ক্যাচ ধরে ফেলেছেন তিনি। দুর্দান্ত এক ক্যাচের সাক্ষী হয়ে হতাশায় মাঠ ছাড়েন তিনি।
১১ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ৪৯।
তিন বলের মধ্যে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করছে ভারত। শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল চেষ্টা করছেন দলকে এগিয়ে নেওয়ার।
পানি পানের বিরতির সময় ভারতের রান ১৭ ওভারে ৩ উইকেটে ৮০।
২৬ বলে এক চারে ১৬ রানে ব্যাট করছেন আইয়ার। এক ছক্কায় ১৩ বলে রাহুলের রান ১১। ৩৮ বলে তাদের জুটিতে এসেছে ৩১ রান।
দ্রুত ২ উইকেটে হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া ভারতকে টানছিলেন লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আইয়ার। তাদের জুটি ভাঙলেন ইবাদত হোসেন।
টানা শর্ট বল করে যাচ্ছিলেন গতিময় এই পেসার। সাফল্য এলো সেই শর্ট বলেই। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বল পুল করার চেষ্টায় সফল হলেন না আইয়ার। বেশ উঁচুতে উঠে যাওয়া ক্যাচ গ্লাভসে নেন মুশফিকুর রহিম। ভাঙে ৫৬ বল স্থায়ী ৪৩ রানের জুটি।
দুই চারে ৩৯ বলে ২৪ রান করেন আইয়ার।
২০ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৯২। ক্রিজে রাহুলের সঙ্গী ওয়াশিংটন সুন্দর।
পাওয়ার প্লের পর ভারতকে বেশ চাপে রেখেছে বাংলাদেশ। মাঝপথে ভালো অবস্থানে আছে তারাই।
২৫ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ১০৫। ৩১ বলে এক ছক্কায় ২১ রানে খেলছেন লোকেশ রাহুল। ১৭ বলে ওয়াশিংটন সুন্দরের রান ১৭ বলে ৭।
প্রথম ১০ ওভারে ভারতের রান ছিল ১ উইকেটে ৪৮। পরের ১৫ ওভারে ৫৭ রান করতে তারা হারিয়েছে ৩ উইকেট।
উইকেট নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল ইবাদত হোসেনের ব্যর্থতায়। লংঅফে ওয়াশিংটন সুন্দরের কাজ ছাড়লেন তিনি।
মেহেদী হাসান মিরাজের বল তুলে মারেন ওয়াশিংটন। টাইমিং করতে পারেননি, ওঠে যায় ক্যাচ। কিছুটা দৌড়ে গিয়ে বলে হাত ছোঁয়ান ইবাদত। তবে মুঠোয় রাখতে পারেননি বল। সে সময় ১২ রানে ছিলেন ওয়াশিংটন।
২৮ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ১২৮।
হাসান মাহমুদের বলে ওয়াশিংটন সুন্দরের কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। বলে-ব্যাটে লাগার একটা শব্দ শোনার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তারা। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, ব্যাটে স্পর্শ করেনি বল।
২৯ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ১৩১। ৪৩ বলে ৩৪ রানে খেলছেন রাহুল। ২৯ বলে ওয়াশিংটনের রান ১৭।
একবার জীবন পাওয়া ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে জুটি গড়ে তুলেছেন লোকেশ রাহুল। উপহার দিয়েছেন ম্যাচের প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি, ৬০ বলে।
মেহেদী হাসান মিরাজের দুই বলে চারের পর ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়ান রাহুল।
ইবাদত হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি কাট করে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠালেন লোকেশ রাহুল। আর এতেই তিনি পৌঁছে গেলেন পঞ্চাশে।
৪৯ বলে তিনটি করে ছক্কা-চারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে একাদশ ফিফটি করেন রাহুল। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়।
জমে উঠেছিল লোকেশ রাহুল ও ওয়াশিংটন সুন্দরের জুটি। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসেই তাদের প্রতিরোধ ভাঙলেন সাকিব আল হাসান। ফিরিয়ে দিলেন ওয়াশিংটনকে।
উইকেটে অনেকটা সময় কাটিয়ে একটি বাউন্ডারিও মারতে পারছিলেন না ওয়াশিংটন। সাকিবকে পেয়ে সেই খরা কাটাতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ওভারের তৃতীয় বলটি রিভার্স সুইপ করে ওয়াশিংটন। কিন্তু খেলতে পারেননি ঠিকঠাক। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ ধরেন ইবাদত হোসেন। ম্যাচে যা সাকিবের তৃতীয় উইকেট।
৪৩ বলে ১৯ রান করে ফেরেন ওয়াশিংটন। ভাঙে রাহুলের সঙ্গে তার ৬০ রানের জুটি।
৩৩ ওভার শেষে ভারতের রান ৫ উইকেট ১৫২। রাহুল খেলছেন ৫৩ রানে। উইকেটে তার সঙ্গী শাহবাজ আহমেদ।
উইকেটে এসে টিকতে পারলেন না শাহবাজ আহেমদ। তাকে শূন্য রানের ফেরার তেতো স্বাদ দিলেন ইবাদত হোসেন। পরপর দুই ওভারে দুটি শিকার ধরল বাংলাদেশ।
ইবাদতের শর্ট বল কাভার দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন শাহবাজ। কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়নি ভালোমতো। সামনে কিছুটা ঝাঁপিয়ে বল মুঠোয় জমান সাকিব আল হাসান।
৪ বলে শূন্য রান করে ফিরলেন শাহবাজ।
৩৪ ওভার শেষে ভারতের রান ৬ উইকেটে ১৫৬। লোকেশ রাহুলের সঙ্গী শার্দুল ঠাকুর।
নিজের আগের ওভারেই ভেঙেছিলেন ভারতের জমে যাওয়া জুটি। এবার এসে জোড়া শিকার ধরলেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডেতে আরেকটি পাঁচ উইকেট পূর্ণ করলেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
ওয়ানডেতে এনিয়ে চতুর্থবার পাঁচ উইকেট নিলেন সাকিব। বিশ্বের সপ্তম স্পিনার হিসেবে এই সংস্করণে চার বা তার বেশি পাঁচ শিকার ধরলেন তিনি।
দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শার্দুল ঠাকুরকে বোল্ড করে দেন সাকিব। ওভারের প্রথম বলটি ডিফেন্স করতে যান শার্দুল। হালকা টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বল তার ব্যাটের বাইরের কানা পরাস্ত করে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে।
৩ বলে দুই রান করে ফেরেন শার্দুল।
দুই বল পর সাকিবের শিকার নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা দিপক চাহার। এবার বল আঘাত হানে তার প্যাডে। এলবিডব্লিউর আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন চাহার, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
৩৫ ওভার শেষে ভারতের রান ৮ উইকেটে ১৫৮। রাহুলের সঙ্গে উইকেটে আছেন মোহাম্মদ সিরাজ।
ওয়ানডেতে এর আগে ভারতের সঙ্গে একবারও তিন উইকেটের বেশি নিতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ১৯তম ম্যাচে এসে পেলেন ৫ উইকেটের দেখা। প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে তার আগের সেরা ছিল ২৭ রানে ৩ উইকেট।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং মুস্তাফিজুর রহমানের। ২০১৫ সালে ৪৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি এই পেসার।
আরও দুই ভারতের সঙ্গে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে মুস্তাফিজের। এছাড়া পাঁচ উইকেট নিতে পেরেছেন আর তাসকিন আহমেদ।
শেষ দিকে এসে দ্রুত কিছু রানের চেষ্টায় ছিলেন লোকেশ রাহুল। ইবাদত হোসনকে ছক্কার পর মেরেছিলেন চার। তবে শেষ হাসি হাসলেন গতিময় এই পেসার। চমৎকার এক বাউন্সারে ফেরালেন এক প্রান্ত আগলে রাখা রাহুলকে।
অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন রাহুল। ঠিক মতো খেলতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় থার্ড ম্যানে। কিছুটা সরে গিয়ে ঝাঁপিয়ে মুঠোয় জমান এনামুল হক।
৭০ বলে পাঁচ চার ও চার ছক্কায় ৭৩ রান করেন রাহুল।
৪০ ওভারে ভারতের রান ৯ উইকেটে ১৭৯।
ক্রিজে মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গী অভিষিক্ত কুলদিপ সেন।
রাহুলের বিদায়ের পর বেশিদূর এগোতে পারল না ভারতের ইনিংস। চতুর্থ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের দুইশর নিচে থামিয়ে দিলেন ইবাদত হোসেন।
অফ স্টাম্পের বাইরে বল ডিপ কাভারের উপর দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। যত দূর নিতে চেয়েছিলেন তত দূর পারেননি। সীমানায় ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
২০ বলে এক চারে সিরাজ করেন ৯ রান। তিনি ইবাদতের চতুর্থ শিকার।
ওয়ানডেতে বাঁহাতি স্পিনার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি গড়লেন সাকিব আল হাসান। দারুণ বোলিং করলেন গতিময় পেসার ইবাদত হোসেন। অবদান রাখলেন অন্যরাও। তাতে ভারতকে কম রানেই থামাল বাংলাদেশ।
৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানে গুটিয়ে গেছে ভারতের ইনিংস। ওয়ানডে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান।
ভারতের ইনিংসে পঞ্চাশ রানের জুটি একটি, পঞ্চাশ রানের ইনিংসও একটি। সর্বোচ্চ ৭৩ রান করেন লোকেশ রাহুল। দলের আর কেউ যেতে পারেননি ত্রিশ পর্যন্ত।
৩৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার সাকিব। দারুণ সব শর্ট বল করা ইবাদত ৪ উইকেট নেন ৪৭ রানে।
মিরাজ নেন একটি উইকেট। উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরুতে একটু খরুচে হলেও শেষ দিকে ভালো করেন হাসান মাহমুদও।
ওয়ানডেতে নেতৃত্বের অভিষেকে লিটন দাস ছিলেন দুর্দান্ত। বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং পজিশন ঠিক করা- সব কিছুই ছিল দারুণ। চমৎকার একটা ক্যাচও ধরেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৪১.২ ওভারে ১৮৬ (রোহিত ২৭, ধাওয়ান ৭, কোহলি ৯, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯, শাহবাজ ০, শার্দুল ২, চাহার ০, সিরাজ ৯, কুলদিপ ২*; মুস্তাফিজুর ৭-১-১৯-০, হাসান ৭-১-৪০-০, মিরাজ ৯-১-৪৩-১, সাকিব ১০-২-৩৬-৫, ইবাদত ৮.২-০-৪৭-৪)
ছোট পুঁজি নিয়ে যেমন শুরু প্রয়োজন ভারতকে সেটাই এনে দিলেন দিপক চাহার। চমৎকার এক ডেলিভারিতে ফেরালেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তকে।
অফ স্টাম্পের বাইরে পরে, প্রত্যাশার একটু বেশি বাউন্স করে ভেতরে ঢুকে বল। ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে শান্ত চেষ্টা করেন থার্ড ম্যানে খেলার। ঠিকভাবে পারেননি, ধরা পড়েন স্লিপে্
এক বল পর বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন এনামুল হক। ক্রিজে তার সঙ্গী ওপেনার লিটন দাস।
১ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৫।
নবম ওভারে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার। লিটন দাসের সঙ্গে একটু কথা বলে রিভিউ নিলেন এনামুল হক। বেঁচে গেলেন সেই জন্যই।
দিপক চাহারের বল লেগ-মিডলে পরে আরও বেরিয়ে যাচ্ছিল। লেগে খেলার চেষ্টায় সফল হননি এনামুল। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল বেরিয়ে যেত লেগ স্টাম্পের পাশ দিয়ে।
সে সময় ১৩ রানে ছিলেন এনামুল।
খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না এনামুল। আগের ওভারে বেঁচে গিয়েছিলেন রিভিউ নিয়ে। পরের ওভারে আর বাঁচলেন না তিনি। মোহাম্মদ সিরাজের আপাত সাদামাটা এক ডেলিভারিতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
গুড লেংথ বলে ফ্লিক করেন এনামুল। বল মাটিতে রাখতে পারেননি তিনি। ক্যাচ যায় শর্ট মিডউইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে।
২৯ বলে দুই চারে ১৪ রান করেন এনামুল।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩০। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসানকে দ্রুত ফেরানোর চেষ্টায় রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হলো ভারত। নষ্ট হলো একটি রিভিউ।
অভিষিক্ত পেসার কুলদিপ সেনের বল ব্যাটে খেলতে পারেননি সাকিব। বোলার, কিপারের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন রোহিত শর্মা।
রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল পড়েছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।
১২ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩৫।
শুরুতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না লিটন দাস। পরে ধীরে ধীরে ফেরেন ছন্দে। মারেন চমৎকার কিছু বাউন্ডারি। থিতু হয়ে যাওয়া এই ওপেনারকে বিদায় করে জুটি ভাঙলেন ওয়াশিংটন সুন্দর।
অফ স্পিনারের বল লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন লিটন। ঠিক মতো পারেননি। বল গ্লাভস ছুঁয়ে কিপারের কাছে যেতেই হাঁটা ধরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ভাঙে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার ৬১ বল স্থায়ী ৪৮ রানের ইনিংস।
৬৩ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে লিটন করেন ৪১ রান।
২০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৭৭। ক্রিজে সাকিবের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম।
ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে সাকিব আল হাসানকে বিদায় করলেন বিরাট কোহলি। লিটন দাসের পর বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ।
এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে ড্রাইভ করেছিলেন সাকিব। মাঝ পথে লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচ নিয়ে তাকে থামিয়ে কোহলি।
৩৮ বলে তিন চারে ২৯ রান করেন সাকিব।
২৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯৭। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।
রানের খুব একটা চাপ নেই। পেছনে খুব বেশি ব্যাটিং বাকি নেই। প্রতিপক্ষ খেলছে ছয় বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে, যাদের চার জন পেসার। উইকেটে বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা আছে। এই পরিস্থিতিতে যে ব্যাটিং প্রয়োজন সেটাই করছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ।
অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে বসেছেন দুই ব্যাটসম্যান। বাউন্ডারির দিকে যাচ্ছেন না। বানিয়ে শট খেলার চেষ্টা করছেন না। এক-দুই নিয়ে সচল রেখেছেন রানের চাকা।
ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
৩৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১২২। ২৮ বলে ১৪ রানে ব্যাট করছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯ বলে মুশফিকের রান ১৭। এখনও তাদের ব্যাট থেকে আসেনি কোনো বাউন্ডারি।
ধীরে এগোনো জুটি ভাঙলেন শার্দুল ঠাকুর। এলবিডব্লিউ করে দিলেন মাহমুদউল্লাহকে।
লেগ-মিডলে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল ব্যটে খেলতে পারেননি অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া দিলে মুশফিকের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন মাহমুদউল্লাহ।
রিপ্লেতে দেখা যায় লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে যেত বল। ভাঙে ৬৯ বল স্থায়ী ৩৩ রানের জুটি।
৩৫ বলে ১৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
৩৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১২৮। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী আফিফ হোসেন।
পরপর দুই বলে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে হারাল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর নতুন ওভারের প্রথম বলে মুশফিকুর রহিমকে বোল্ড করে দিলেন মোহাম্মদ সিরাজ।
অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথ বল থার্ড ম্যানের দিকে পাঠাতে চেয়েছিলেন মুশফিক। ব্যাটের কানায় লেগে এলোমেলো করে দেয় স্টাম্প।
৪৫ বলে মুশফিক করেন ১৮ রান।
৩৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১২৮। ক্রিজে আফিফ হোসেনের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
খেলাটা গভীরে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল আফিফ হোসেনের। মেহেদী হাসান মিরাজকে একটা জুটি গড়া দরকার ছিল তার। সেই পথে না গিয়ে বড় শট খেলার চেষ্টা করে আউট হলেন তিনি।
অভিষিক্ত পেসার কুলদিপ সেনকে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দেন আফিফ। তালগোল পাকালেও শেষ পর্যন্ত মুঠোয় রাখতে পারেন মোহাম্মদ সিরাজ। প্রথম উইকেটের স্বাদ পান কুলদিপ।
১২ বলে ৬ রান করেন আফিফ।
ওভারের পঞ্চম বলে আরেকটি উইকেট পান কুলদিপ। লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় হিট উইকেট হন ইবাদত হোসেন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে হিট উইকেট হলেন তিনি। এর আগে ১৯৯৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ৪৭ বলে ১২ রান করে এভাবে আউট হয়েছিলেন শেখ সালাউদ্দিন
৩৯ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৩৫। ক্রিজে মিরাজের সঙ্গী হাসান মাহমুদ।
মোহাম্মদ সিরাজের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন হাসান মাহমুদ। ২ বলে খেলে তিনি খুলতে পারেননি রানের খাতা।
ক্রিজে গিয়ে দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০৫ বলের মধ্যে সেটাই ছিল প্রথম বাউন্ডারি।
৪০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ১৪০। ক্রিজে মুস্তাফিজের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
ছক্কার চেষ্টায় আকাশে তুলে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিপার লোকেল রাহুল অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় হাতছাড়া করলেন সুযোগ! সে সময় ১৫ রানে ছিলেন মিরাজ।
মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে কী দুর্দান্ত জয়ই না পেল বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে শেষ জুটিতে এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার কী দারুণভাবেই না মিলিয়ে দিলেন ৫১ রানের প্রায় অসম্ভব সমীকরণ!
৪০ বলে জুটির রান ছুঁয়েছিল পঞ্চাশ।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবারের মতো কোনো ম্যাচে দশম উইকেট জুটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়ে জেতাল।
রোমাঞ্চের নানা বাঁক পেরিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ জিতল ১ উইকেটে। ভারতের ১৮৬ রান পেরিয়ে গেল ২৪ বল বাকি থাকতে।
ওয়ানডে ১ উইকেটে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় জয়। আগের দুটি জয়ই ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে।
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে এটি ষষ্ঠ জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৪১.২ ওভারে ১৮৬ (রোহিত ২৭, ধাওয়ান ৭, কোহলি ৯, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯, শাহবাজ ০, শার্দুল ২, চাহার ০, সিরাজ ৯, কুলদিপ ২*; মুস্তাফিজুর ৭-১-১৯-০, হাসান ৭-১-৪০-০, মিরাজ ৯-১-৪৩-১, সাকিব ১০-২-৩৬-৫, ইবাদত ৮.২-০-৪৭-৪)
বাংলাদেশ: ৪৬ ওভারে ১৮৭/৯ (শান্ত ০, লিটন ৪১, এনামুল ১৪, সাকিব ২৯, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১৪, আফিফ ৬, মিরাজ ৩৮*, ইবাদত ০, হাসান ০, মুস্তাফিজ ১০*; চাহার ৮-১-৩২-১, সিরাজ ১০-১-৩২-৩, কুলদিপ ৫-০-৩৭-২, শাহবাজ ৯-০-৩৯-০, ওয়াশিংটন ৫-০-১৭-২, শার্দুল ৯-১-২১-১)
৮ রানের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, ইবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদকে হারিয়ে হারের দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে থেকে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ৫১ রানের জুটিতে দলকে অসাধারণ এক জয় এনে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ভারতের বিপক্ষে হৃদয় ভাঙা হারের স্মৃতি কম নেই বাংলাদেশের। এবার উল্টো চিত্রটা দেখল তারা। রোহিত শর্মাদের হাতের মুঠোয় থেকে ছিনিয়ে আনল জয়।
রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচে ১ উইকেটের নাটকীয় জয়ের নায়ক মিরাজ। ৩৯ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। এই সংখ্যাগুলো ঠিক বোঝাতে পারছে না তার ইনিংস কতটা অসাধারণ।
১১ নম্বরে নেমে ২ চারে মুস্তাফিজের ১০ রানের ইনিংসের মূল্যও কম নয়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে উচ্ছ্বসিত মেহেদী হাসান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জানান, মুস্তাফিজুর রহমানকে স্রেফ এক প্রান্ত আগলে রাখতে বলেছিলেন। ঝুঁকি যাওয়ার নেওয়ার তিনিই নেবেন। সেটা কাজে লেগে যাওয়ায় খুশিতে ভাসছেন মিরাজ।
নেতৃত্বের অভিষেকটা দারুণ হলো লিটন দাসের। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতল দল। স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ খুশি তিনি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জানালেন প্রতিক্রিয়া।
"আমি আর সাকিবভাই যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল সহজেই জিতব। মাঝে ওরা খুব ভালো বোলিং করেছে। বাউন্সও তখন অসমান ছিল।"
"শেষ ৬/৭ ওভারে মিরাজ ও মুস্তাফিজ যে ব্যাটিং করেছে সেটা খুব উপভোগ করেছি। আমার আস্থা ছিল আফিফ, মিরাজের উপর। মিরাজ যে ব্যাটিং করেছে অবিশ্বাস্য।"