বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার সাফল্য এখনও তরতাজা। সেই রেশকে সঙ্গী করে এবার আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিযান বাংলাদেশের।
তিন ম্যাচের সিরিজটি আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ নয়। তাই নিজেদের করণীয় বুঝে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দিয়ে তরুণ তৌহিদ হৃদয় ও ইয়াসির আলি চৌধুরিকে পরখ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। ফাস্ট বোলারদেরও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর আভাস দিয়ে রেখেছেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে।
তাই বলে আইরিশদের হালকা করে নিচ্ছে না বাংলাদেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নতুনদের দেখার পাশাপাশি ম্যাচ ও সিরিজ জয়েও কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় তারা। জয়ই যে দলের একমাত্র লক্ষ্য তা পরিষ্কার করেছেন প্রধান কোচ।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি পরিসংখ্যানেও এগিয়ে বাংলাদেশ। নিষ্পত্তি হওয়া নয় ম্যাচের ৭টিই জিতেছে তারা। দেশের মাটিতে খেলা চার ম্যাচে মিলেছে জয়। তবে এই চার ম্যাচের শেষটি প্রায় এক যুগ আগে, ২০১১ বিশ্বকাপে। সব মিলিয়ে আইরিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে খেলেছে ২০১৯ সালে।
প্রায় ৪ বছর পর আবার এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় মাঠে গড়াবে প্রথম ওয়ানডে।
বাংলাদেশ সফরের প্রথম ম্যাচে টস জিতল আয়ারল্যান্ড, নিল ফিল্ডিং।
উইকেটে কিছু ঘাস থাকায় প্রথম ১০ ওভার ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে মনে করেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের বাকি সময়ে ব্যাটিংয়ে তেমন সমস্যা হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক।
নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে চান না তামিম। তবে ২৮০ থেকে ৩০০ রান হলে নিরাপদ হবে বলে বিশ্বাস তার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির পর এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হলো তৌহিদ হৃদয়ের। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ১৪০তম খেলোয়াড় তিনি।
এছাড়া একাদশে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ, ইয়াসির আলি চৌধুরি ও নাসুম আহমেদ। সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল তাসকিনকে। স্কোয়াডেই ছিলেন না ইয়াসির ও নাসুম।
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে ফুটবল খেলার সময় পাওয়া চোটে একাদশ থেকে ছিটকে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে খেলা মাহমুদউল্লাহ ও তাইজুল ইসলাম এবার স্কোয়াডে নেই। এর বাইরে একাদশে জায়গা হারিয়েছেন আফিফ হোসেন।
তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিল তিন স্পিনার ও দুই পেসার নিয়ে।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, ইয়াসির আলি চৌধুরি, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচের দলে ছিলেন না আয়ারল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি ও অফ স্পিনার অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন। বাংলাদেশ সফরের প্রথম ওয়ানডেতে তাদের দুজনকে ফিরিয়ে খেলতে নামছে আইরিশরা।
সবশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন মারে কমিন্স ও জশ লিটল। দুজনের কেউই চলতি সফরের দলে নেই।
আয়ারল্যান্ড একাদশ: অ্যান্ড্রু বালবার্নি (অধিনায়ক), মার্ক অ্যাডায়ার, কার্টিস ক্যাম্পার, গ্যারেথ ডেলানি, জর্জ ডকরেল, স্টিভেন ডোহেনি, গ্রাহাম হিউম, অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন, পল স্টার্লিং, হ্যারি টেক্টর, লর্কান টাকার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ভালো কাটেনি তামিম ইকবালের। তবে তিন ম্যাচেই ছুঁয়েছিলেন দুই অঙ্ক। আইরিশদের বিপক্ষে সেটিও হলো না। ৩ রান করে ফিরে গেলেন ড্রেসিং রুমে।
তৃতীয় ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া মাঝ ব্যাটে খেলতে পারেননি, বাইরের কানায় লেগে ক্যাচ যায় স্লিপে, পল স্টার্লিংয়ের হাতে।
লিটন দাসের সঙ্গে জুটি বাঁধতে ক্রিজে এসেছেন নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাংলাদেশের সংগ্রহ ২.৩ ওভারে ১ উইকেটে ১৫ রান।
শুরুতে অধিনায়ককে হারানোর পর ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে আশা দেখাচ্ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু বেশি থাকতে পারলেন না স্টাইলিশ ওপেনার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসে লিটনকে ফেরালেন কার্টিস ক্যাম্পার।
ওভারের প্রথম বলে দৃষ্টিনন্দন অন ড্রাইভে চার মারেন লিটন। এক বল পর পিচ করার পর খানিক থেমে আসা ডেলিভারিতে বোকা বনে যান তিনি। ব্যাক-ফুট পুশে টাইমিং হয়নি একদম। উল্টো বল উঠে যায় আকাশে। শর্ট কভারে সহজ ক্যাচ নেন পল স্টার্লিং।
২ চার ও ১ ছয়ে ৩১ বলে ২৬ রান করেছেন লিটন। পাওয়ার প্লেতে স্রেফ এই তিনটি বাউন্ডারিই পেয়েছে বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে আপার কাট করে এখন পর্যন্ত ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি মেরেছেন লিটন।
দশ ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ইনিংস গড়ার অভিযানে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে উইকেটে যোগ দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। শান্ত ১৩ রান নিয়ে খেলছেন।
পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫০ রান।
অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি টার্নের আশায় দূর থেকে খেলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু পিচ করার পর ভেতরে ঢোকে ওই ডেলিভারি। শান্তর ব্যাট-প্যাডের বিরাট ফাঁকা জায়গা দিয়ে আঘাত করে অফ স্টাম্পে।
পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনারকে হারানোর পর মনে হচ্ছিল, সাকিব আল হাসান ও শান্তর জুটিতে গুছিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যেই ফিরে গেলেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
১ চারে ৩৪ বলে ২৫ রান করেছেন শান্ত। সাকিব খেলছেন ২৫ বলে ২০ রান নিয়ে।
পাঁচ নম্বরে নেমেছেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়।
১৬.৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৮১ রান।
তামিম ইকবালের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭ হাজার রান করলেন সাকিব আল হাসান। কার্টিস ক্যাম্পারের বলে অফ ড্রাইভে দ্রুত ১ রান নিয়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার।
৭ হাজার রানে পৌঁছতে ২২৮ ওয়ানডের ২১৬ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন সাকিব। ২০২০ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই নিজের ২০৪তম ইনিংসে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন তামিম।
এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের 'ডাবল'ও পূরণ করলেন সাকিব। তার আগে এই ক্লাবে আছেন শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া ও শহিদ আফ্রিদি। তবে এই দুজনের চেয়ে অনেক কম ম্যাচ লেগেছে সাকিবের।
আফ্রিদি এই ডাবল পূরণ করেন ৩৪১ ম্যাচে। জয়াসুরিয়ার লেগেছিল ৩৯৭ ম্যাচ। সাকিব ছুঁলেন স্রেফ ২২৮ ম্যাচে।
ইনিংসের মাঝপথে ভালো ভিত পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ১২৫ রান। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন জুটিতে এরই মধ্যে ৪৪ রান যোগ করেছেন সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৭ হাজার রান ছুঁয়ে ৩৭ রানে খেলছেন সাকিব। অভিষিক্ত হৃদয় অপরাজিত ২৩ রানে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ফেরেন তামিম ইকবাল। ৯ বলে ৩ রান।
এরপর ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও বেশি দূর যেতে পারেননি লিটন দাস। ২৬ রান করে আউট হন তিনি। নাজমুল হোসেন শান্তও ভালো শুরুর পর থামেন ২৫ রানে।
মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের ইনিংস হাল ধরেছেন সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়। দলীয় ৮১ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর চতুর্থ উইকেট জুটিতে এরই মধ্যে ৫০ রান যোগ করেছেন এই দুজন।
জুটির পঞ্চাশ পূরণ করতে ৫৭ বল লেগেছে তাদের। অভিষিক্ত হৃদয়ের অবদান ২৫ রান। সাকিব এই জুটিতে করেছেন ২১ রান।
২৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৩৫ রান। সাকিব ৪৩ ও হৃদয় ২৭ রান নিয়ে খেলছেন।
কার্টিস ক্যাম্পারের স্লোয়ার বাউন্সার অফ সাইডে খেলে অনায়াসে ১ রান নিলেন সাকিব আল হাসান। পৌঁছে গেলেন পঞ্চাশে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচের পর সাকিবের টানা তৃতীয় ফিফটি এটি। ওই দুই ম্যাচে ৫৮ ও ৭৫ রান করেন তিনি।
সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৩তম ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ফিফটি করতে ৬৫ বল খেলেছেন সাকিব। ৪ মেরেছেন স্রেফ দুইটি, নেই কোনো ছক্কা।
চার নম্বরে নেমে সাকিবের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪০ রানে খেলছেন হৃদয়।
৩০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৫৫ রান।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়। ৩৪তম ওভারে দুজন মিলে পূরণ করেছেন জুটির ১০০ রান। যা করতে লেগেছে ১০৩ বল। সাকিবের অবদান ৪৬ রান, হৃদয় করেছেন ৪৯।
অভিষেকে ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪৯ রানেই খেলছেন হৃদয়। সাকিব অপরাজিত ৬৭ রানে।
গত বছর ১৮ মার্চেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে ১০০ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব ও ইয়াসির আলি রাব্বি। ১৪ ম্যাচ পর এবার হৃদয়কে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১০০ রান যোগ করলেন সাকিব।
৩৪ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৮৩ রান।
ওয়ানডে অভিষেকেই পঞ্চাশের দেখা পেলেন তৌহিদ হৃদয়। ৮১ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ব্যাটিংয়ে নেমে সাবলীল ব্যাটিং করছেন ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৫ চারে এই মাইলফলকে পৌঁছতে ৫৫ বল লেগেছে তার।
বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে ৫ নম্বরে নেমে ফিফটি করা প্রথম ব্যাটসম্যান হৃদয়। অভিষেকে পাঁচে আগের সর্বোচ্চ ছিল ফয়সাল হোসেনের ১৭, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৪ সালে।
সব পজিশন মিলিয়েই ওয়ানডে অভিষেকে ফিফটি আগে ছিল স্রেফ ২ জনের। ২০১১ সালে নাসির হোসেন ৬৩ করেছিলেন আটে নেমে, ছয়ে নেমে ফরহাদ রেজা ২০০৬ সালে করেছিলেন ৫০।
হঠাৎই যেন তেতে উঠলেন সাকিব আল হাসান। হ্যারি টেক্টরের করা ৩৫তম ওভারে মারলেন পাঁচটি চার। অন্য বলে দুইসহ ওভার থেকে এলো ২২ রান। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেল ২০০ রান।
সুইপ শটে প্রথম চার মারেন সাকিব। পরেরটি যায় কভারের ওপর দিয়ে। তৃতীয় বলে আবার সুইপ, পরিণতিও অভিন্ন। চতুর্থ বলে দুই রান নেওয়ার পর শেষ দুই বলে ফের বাউন্ডারি মারেন তারকা অলরাউন্ডার।
সাকিবের নিয়ন্ত্রিত ঝড়ে ৩৫তম ওভারে দুইশ পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সাকিবও পৌঁছে গেছেন সেঞ্চুরির কাছাকাছি। প্রায় চার বছর পর শতরানের আশা জাগানো সাকিব খেলছেন ৯০ রানে। অভিষেকে ফিফটি করে হৃদয় অপরাজিত ৫৪ রানে।
৩৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২১১ রান। চতুর্থ উইকেটে অবিছিন্ন জুটিতে এরই মধ্যে এসেছে ১৩০ রান।
অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ইয়র্কার ধরনের ডেলিভারি করেছিলেন গ্রাহাম হিউম। দূর থেকেই খেলার চেষ্টা করলেন সাকিব। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে গেল কিপার লরকান টাকারের হাতে। আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানাতেই ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন সাকিব।
প্রায় ৪ বছর পর সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও স্রেফ ৭ রানের জন্য করতে পারলেন না সাকিব। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৯ চারে ৮৯ বলে ৯৩ রান করেছেন তিনি।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার নব্বই পেরিয়ে সেঞ্চুরির আগে আউট হলেন সাকিব। এছাড়া দুইবার নব্বইয়ের ঘরে অপরাজিত ছিলেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ে ভেঙেছে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে তার ১২৫ বল স্থায়ী ১৩৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম।
৩৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২২৩ রান। অভিষেকেই ফিফটি করা হৃদয় অপরাজিত ৬২ রানে।
ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন তৌহিদ হৃদয়। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকে ৬৩ রান করেছিলেন নাসির হোসেন। এরই মধ্যে ৬৬ রান করেছেন হৃদয়।
নাসির ও হৃদয় ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে ফিফটি করেছেন স্রেফ ফরহাদ রেজা। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে ৫০।
৪০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৪২ রান।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৯৩ রানে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসান। একই সঙ্গে একটা জায়গায় সঙ্গী হয়েছেন মুশফিকুর রহিমের।
ওয়ানডে ক্রিকেটে নব্বইয়ের ঘরে চারবার করে থেমেছেন সাকিব ও মুশফিক। এর মধ্যে সাকিব আউট হয়েছেন দুইবার, অপরাজিত দুইবার। মুশফিক তিন বার আউট হয়েছেন নড়বড়ে নব্বইয়ে, অপরাজিত ছিলেন এক ইনিংসে।
সব মিলিয়েও মুশফিকের সঙ্গী হয়েছেন সাকিব। তিন সংস্করণে মোট ৮ বার নব্বইয়ের ঘরে থেমেছেন এই দুজন। তবে সাকিব আউট হয়েছেন পাঁচবার, মুশফিক সাতবার।
বিশ্ব ক্রিকেটের হিসেবে অবশ্য অনেক পিছিয়ে সাকিব-মুশফিক। তিন সংস্করণ মিলে ১০ বার নব্বইয়ের ঘরে থেমেছেন ২৪ জন ব্যাটসম্যান। নব্বইয়ের ঘরে সবচেয়ে বেশি ২৮ ইনিংস শচিন টেন্ডুলকারের।
গ্যারেথ ডেলানির খাটো লেংথের বল সজোর পুল করলেন তৌহিদ হৃদয়। অনেকটা লাফিয়েও নাগাল পেলেন না ডিপ স্কয়ার লেগের ফিল্ডার। ওই ওভারেই এক বল আগে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন মুশফিকুর রহিম।
হৃদয়-মুশফিকের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্রেফ ৩২ বলেই এসেছে পঞ্চম উইকেট জুটির পঞ্চাশ রান। মুশফিকের অবদান ১৭ বলে ৩২। হৃদয় নিয়েছেন ২২।
৪৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৭২ রান।
অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া হৃদয় খেলেছেন ৭৯ রানে। মুশফিক অপরাজিত ৩৩ রানে।
আগ্রাসী জুটিতে দলকে তিনশ রানের কাছে পৌঁছে দিয়ে একই ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরলেন মুশফিকুর রহিম ও তৌহিদ হৃদয়। গ্রাহাম হিউমের করা ৪৬তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে আউট দুই ব্যাটসম্যান।
ওভারের তৃতীয় বলে স্লোয়ার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন মুশফিক। শুরু থেকেই হাত খুলে খেলতে থাকা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্রেফ ২৬ বলে করেছেন ৪৪ রান। ৩টি করে চার-ছয়ে সাজিয়েছেন ইনিংস।
এক বল পর হিউমের হাফ ভলি ধরনের স্লোয়ারে অন সাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড হৃদয়। অভিষেকে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৯২ রানে থেমেছেন ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
৪৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯৭ রান। উইকেটে দুই নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরি ও তাসকিন আহমেদ।
অভিষেকে দারুণ ইনিংস খেলে সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ৮ রানের আক্ষেপে পুড়লেন তৌহিদ হৃদয়। ৮১ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট পতনের পর পাঁচ নম্বরে নেমে ৮ চার ও ২ ছয়ে ৮৫ বলে ৯২ রান করেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
ওয়ানডে অভিষেকে নব্বইয়ে আউট হওয়া ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হৃদয়। তার আগে নব্বই পেরিয়ে আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটসম্যান- স্টিফেন ফ্লেমিং (৯০), ফিল জ্যাকস (৯৪), ওয়েন মরগ্যান (৯৯), রাসি ফন ডার ডাসেন (৯৩) ও শামারা ব্রুকস (৯৩)।
এছাড়া নিজের প্রথম ওয়ানডে ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বপ্নিল পাতিল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে হৃদয়ের আগে ৯৩ রান করে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়ার ১১তম ঘটনা এটি।
সেঞ্চুরি করতে না পারলেও ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন হৃদয়। তার আগে ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকে ৬৩ রান করেছিলেন নাসির হোসেন।
সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও অল্পের জন্য পারেননি সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়। ফিফটির আশা জাগিয়েও ছুঁতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। তবে তিন জনের দারুণ ব্যাটিংয়ে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করেছে বাংলাদেশ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করেছে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর এটি। এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান করেছিল তারা।
প্রায় চার বছর পর শতরান করার আশা জাগানো সাকিব খেলেছেন ৯ চারে ৮৯ বলে ৯৩ রানের ইনিংস। অভিষিক্ত হৃদয়ের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন তারকা অলরাউন্ডার।
হৃদয় গড়েছেন অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। কিন্তু স্রেফ ৮ রানের জন্য তিনিও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ৮ চার ও ২ ছয়ে সাজিয়েছেন ৮৫ বলের ইনিংস।
বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে নাম উঠেছে বাংলাদেশের উদীয়মান তারকার।
শেষ দিকে ঝড় তোলেন মুশফিক। হৃদয়ের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে স্রেফ ৪৯ বলে ৮০ রানের জুটি গড়ার পথে ২৬ বলে ৪৪ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান। ৩টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি।
পরে ইয়াসির আলি চৌধুরি ১৭, তাসকিন ১১ ও নাসুম ১১* রানের ছোট তবে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলকে ৩৩৮ রানে নিয়ে যান।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৬০ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন আয়ারল্যান্ডের গ্রাহাম হিউম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫, সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, ইয়াসির ১৭, তাসকিন ১১, নাসুম ১১*, মুস্তাফিজ ১*; অ্যাডায়ার ১০-০-৭৭-১, হিউম ১০-০-৬০-৪, ম্যাকব্রাইন ১০-০-৪৭-১, ক্যাম্পার ৮-০-৫৬-১, টেক্টর ৬-০-৪৫-০, ডেলানি ৬-০-৫০-০)
মুস্তাফিজুর রহমানের গুড লেংথের ডেলিভারি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছিলেন পল স্টার্লিং। বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে পেছনে থাই প্যাডে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
সঙ্গী ওপেনার স্টিভেন ডোহেনির সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন আইরিশ তারকা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় মুস্তাফিজের ডেলিভারিটি চলে যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। বেঁচে যান স্টার্লিং।
উইকেট না পেলেও প্রথম তিন ওভারে আইরিশ ওপেনারদের আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তিন ওভারে স্রেফ একটি বাউন্ডারি মেরেছে সফরকারীরা।
৩ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ কোনো উইকেট না হারিয়ে ১২ রান। স্টার্লিং ৬ ও ডোহেনি ২ রানে খেলছেন। অতিরিক্ত থেকে এসেছে ৪ রান।
বাকি ৪৭ ওভারে তাদের করতে হবে আরও ৩২৭ রান।
স্কোরবোর্ডে বিশাল পুঁজি নিয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ। নিরাপদে ১০ ওভার কাটিয়ে ৫১ রান করে ফেলেছেন দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও স্টিভেন ডোহেনি।
তৃতীয় ওভারে অবশ্য স্টার্লিংয়ের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। তবে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান আইরিশ তারকা। ওই ওভারেই ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি মারেন তিনি।
নাসুম আহমেদের করা সপ্তম ওভারে ইনিংসের প্রথম ছক্কাটিও মারেন স্টার্লিং। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ইনসাইড আউট করে দৃষ্টিনন্দন শটে কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন ডোহেনি। সাকিব আল হাসানের ওই ওভারে আরও দুই চারসহ মোট ১৫ রান নেন তিনি।
স্টার্লিং ২৯ বলে ২২ রান নিয়ে খেলছেন। সাকিবের ওভারে ঝড় তোলা ডোহেনির সংগ্রহ ৩১ বলে ২৫ রান।
এই ম্যাচ জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হবে আইরিশদের। ওয়ানডেতে তাদের সর্বোচ্চ ৩২৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে। এবার সেটি ভাঙতে ছুটতে হচ্ছে ৩৩৯ রানের পেছনে।
বাকি ৪০ ওভারে তাদের করতে হবে আরও ২৮৮ রান।
আগের ওভারেই স্টিভেন ডোহেনির কাছে দুই চার ও এক ছয় হজম করেছিলেন সাকিব আল হাসান। পরের ওভারেই ঘুরে দাঁড়ালেন দারুণভাবে। প্রথম বল ডট দেওয়ার পর দ্বিতীয় বলেই কট বিহাইন্ড করলেন ডোহেনিকে।
অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারি টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে পেছনের পায়ে খেলার চেষ্টা করেন ডোহেনি। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে।
৪ চার ও ১ ছয়ে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেছেন ডোহেনি। তার বিদায়ে ভেঙেছে ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি। পল স্টার্লিংকে সঙ্গ দিতে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে এসেছেন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি।
১২ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৬১ রান। স্টার্লিং খেলছেন ২২ রান।
শেষ ৩৮ ওভারে আইরিশদের প্রয়োজন ২৭৮ রান।
ইবাদত হোসেনের লেগ স্টাম্পের ওপর করা বাউন্সারে পুল করার চেষ্টা করেছিলেন পল স্টার্লিং। টাইমিংয়ে গড়বড়ে বল তার গ্লাভসে ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পেছনে। দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় বাম দিকে ঝাঁপিয়ে সেটি লুফে নেন মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেনা উদযাপনে 'স্যালুট' দেন ইবাদত।
দুই ওভারে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ১টি করে চার-ছয়ে ৩১ বলে ২২ রান করেছেন স্টার্লিং। আগের ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে কট বিহাইন্ড হওয়া স্টিভেন ডোহেনি করেন ৩৪ রান।
১৩ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৬৪ রান। উইকেটে দুই নতুন ব্যাটসম্যান অ্যান্ডু বালবার্নি ও হ্যারি টেক্টর।
পাওয়ার প্লেতে ইবাদত হোসেনকে আক্রমণে আনেননি তামিম ইকবাল। একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে জোড়া চার হজম করেন ডানহাতি পেসার। তবে তাকে সরাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এর সুফলও পেলেন হাতেনাতে। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট নিলেন ইবাদত। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইবাদতের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি অনেক দূর থেকে ড্রাইভের চেষ্টা করেন হ্যারি টেক্টর।
ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে যাওয়া বল সহজেই গ্লাভস নেন মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে সঙ্গে 'স্যালুট' দিতে ভোলেননি ইবাদত। নিজের আগের ওভারে পল স্টার্লিংকেও বিদায় করেন তিনি।
৮ বলে ৩ রান করতে পেরেছেন টেক্টর।
ইবাদতের দ্বিতীয় স্যালুটের উপলক্ষ্যে এনে দেওয়া ক্যাচটি ম্যাচের মুশফিকের তৃতীয়। সাকিব আল হাসানের বলে ক্যাচ নিয়ে স্টিভেন ডোহেনিকে ফেরান অভিজ্ঞ কিপার।
১৫ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৭৩ রান। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি বালবার্নি ও লরকান টাকার।
বাকি ৩৫ ওভারে আইরিশদের প্রয়োজন আরও ২৬৬ রান।
নতুন বলে প্রথম স্পেলে ৩ ওভার করে সরে গিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দিলেন ডানহাতি গতিময় পেসার। বোল্ড করে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠালেন অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে।
তাসকিনের অফ স্টাম্প লাইনে পিচ করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন আইরিশ অধিনায়ক। তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে মিডল স্টাম্পে আঘাত হানে বল।
এই ওভার থেকে কোনো রান দেননি তাসকিন। শেষ বলে অল্পের জন্য কট বিহাইন্ড হননি নতুন ব্যাটসম্যান কার্টিস ক্যাম্পার।
১২ বলে ৫ রান করেছেন বালবার্নি। ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটির পর স্রেফ ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে গেছে আয়ারল্যান্ড। উইকেটে এখন লরকান টাকার ও ক্যাম্পার।
১৬ ওভার শেষে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৭৩ রান।
ইবাদত হোসেনের পর টানা দুই ওভারে দুই উইকেট নিলেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিজের দ্বিতীয় ওভারে তিনি আউট করলেন লরকান টাকারকে। ১৮ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে আয়ারল্যান্ড।
তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা শর্ট অব গুড লেংথের ডেলিভারি অন সাইডের দিকে খেলতে চেয়েছিলেন টাকার। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে। ডান দিকে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
কিপার-ব্যাটসম্যান ৮ বলে করেছেন ৬ রান। উদ্বোধনী জুটিতে ৬০ রান করার পর স্রেফ ১৬ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে আইরিশরা। উইকেটে এখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান কার্টিস ক্যাম্পার ও জর্জ ডকরেল।
পরপর দুই ওভার উইকেট মেডেন নিয়েছেন তাসকিন।
১৮ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৭৬ রান।
পাওয়ার প্লেতে টানা তিন ওভার বোলিং করে থেমেছিলেন তাসকিন আহমেদ। দিয়েছিলেন কেবল ১০ রান। ১৬তম ওভারে আক্রমণে ফেরার পর তার বোলিংয়ে রানই নিতে পারছিল না আয়ারল্যান্ড।
দ্বিতীয় স্পেলে টানা ১৬ বল ডট দেওয়ার পর প্রথম রান দেন তাসকিন। ১৭তম বলে কভার ড্রাইভে চার মারেন জর্জ ডকরেল। মাঝের ১৬ বলে তাসকিন ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান অ্যান্ড্রু বালবার্নি ও লরকান টাকারকে।
সব মিলিয়ে ছয় ওভারে দুই মেডেনসহ স্রেফ ১৫ রানে তাসকিনের শিকার ২ উইকেট।
২০ ওভার শেষে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৮৯ রান। শেষ ৩০ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে তাদের প্রয়োজন আরও ২৫০ রান।
১৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদে পড়া দলকে উদ্ধারের অভিযানে নেমেছিলেন দুই অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্পার ও জর্জ ডকরেল। তাদের বেশি দূর যেতে দিলেন না নাসুম আহমেদ।
তার করা ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন ক্যাম্পার। পরের বলেই প্রতিশোধ নেন বাঁহাতি স্পিনার। মিডল-লেগ স্টাম্পে পিচ করা ডেলিভারি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে লাইন মিস করেন ক্যাম্পার।
বল তার সামনের প্যাডে লাগলে জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি ক্যাম্পারের। ২ চারে ১৭ বলে ১৬ রান করে ফেরেন আইরিশ অলরাউন্ডার।
ক্যাম্পারের বিদায়ের ভেঙেছে ৩৩ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। যা ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
২৪ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১০৯ রান। জয় থেকে এখনও ২৩০ রান দূরে তারা।
২৬তম ওভারের শেষ দুই বলে দুই উইকেট নিলেন নাসুম আহমেদ। গ্যারেথ ডেলানিকে এলবিডব্লিউ করার পর কট বিহাইন্ড হলেন অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন। এলবিডব্লিউর আবেদনে রিভিউ নেননি ১ রান করা ডেলানি।
পরের বলে বাংলাদেশের জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। আত্মবিশ্বাসী নাসুম ও মুশফিকুর রহিম সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় ম্যাকব্রাইনের গ্লাভস ছুঁয়ে গেছে বল।
ইনিংসের নাসুমের তৃতীয় উইকেট এটি। মুশফিক নিলেন চতুর্থ ক্যাচ। আর একের পর এক উইকেট নিয়ে বড় জয়ের কাছে চলে গেছে বাংলাদেশ।
২৬ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১১৮ রান। জয় এখন তাদের জন্য অনেক দূরের পথ। এখনও বাকি ২২১ রান। এক প্রান্ত আগলে রেখে ২৫ রানে খেলছেন জর্জ ডকরেল। নতুন ব্যাটসম্যান মার্ক অ্যাডায়ার।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ১৬৯ রানে। ২০২০ সালে সিলেটের মাঠেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল তারা। সেই রেকর্ড নতুন করে লিখতে আয়ারল্যান্ডকে ১৬৮ রানের মধ্যে থামালেই হবে।
আয়ারল্যান্ডের প্রথম তিন উইকেটেই ক্যাচ নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। মাঝে বিরতি দিয়ে পরে গ্লাভসে নিলেন আরও দুটি। ইবাদত হোসেনের বলে মার্ক অ্যাডায়ারের ক্যাচটি নিয়েই ছুঁলেন রেকর্ড।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে কিপারদের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড ৫টি। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ৫টি ক্যাচ নেন মুশফিক। প্রায় ৮ বছর পর আবারও ৫ ক্যাচ নিলেন তিনি।
এছাড়া ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে তিন ক্যাচ ও দুই স্টাম্পিংয়ে পাঁচ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েছিলেন খালেদ মাসুদ।
২৯ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১৪৪ রান। জর্জ ডকরেল ৩৭ রানে খেলছেন। তবে বড় জয়ই দেখছে বাংলাদেশ।
অপর প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও পথের কাঁটা হয়ে টিকে ছিলেন জর্জ ডকরেল। দারুণ এক ইয়র্কারে তাকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়া জয় এনে দিলেন ইবাদত হোসেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় ৩৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে স্রেফ ১৫৫ রানে গুটিয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড।
স্বাগতিকদের জয় ১৮৩ রানের রেকর্ড ব্যবধানে। একই মাঠে ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় ছিল ১৬৯ রানে। সেদিন ৩২২ রানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল ১৫২ রানে।
সাকিব আল হাসানের ৯৩ ও অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের ৯২ রানের সৌজন্যে বিশাল লক্ষ্য পাওয়ার পর বল হাতে বাকি কাজ সেরেছেন ইবাদত, নাসুম হোসেন, তাসকিন আহমেদরা।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪২ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন ইবাদত। এই ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে ফেরা নাসুমের শিকার ৪৩ রানে ৩ উইকেট।
দাপুটে বোলিং করা তাসকিন ৬ ওভারে দুই মেডেনসহ স্রেফ ১৫ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। অন্য উইকেট গেছে সাকিব আল হাসানের ঝুলিতে।
উইকেটের পেছনে দারুণ দিন কাটানো মুশফিকুর রহিম নিয়েছেন ৫টি ক্যাচ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কিপারদের মধ্যে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ড এটি।
২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৫ ডিসমিসালের কীর্তি গড়েন খালেদ মাসুদ। তিন ক্যাচের সঙ্গে দুইটি স্টাম্পিং করেন তিনি। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ৫ ক্যাচ নিয়ে তার পাশে বসেন মুশফিক।
দ্বিতীয়বারের মতো ৫ ক্যাচ নেওয়ার আগে ব্যাটিংয়েও ২৬ বলে ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫, সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, ইয়াসির ১৭, তাসকিন ১১, নাসুম ১১*, মুস্তাফিজ ১*; অ্যাডায়ার ১০-০-৭৭-১, হিউম ১০-০-৬০-৪, ম্যাকব্রাইন ১০-০-৪৭-১, ক্যাম্পার ৮-০-৫৬-১, টেক্টর ৬-০-৪৫-০, ডেলানি ৬-০-৫০-০)
আয়ারল্যান্ড: ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ (ডোহেনি ৩৪, স্টার্লিং ২২, বালবার্নি ৫, টেক্টর ৩, ক্যাম্পার ১৬, ডকরেল ৪৫, ডেলানি ১, ম্যাকব্রাইন ০, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ২*; মুস্তাফিজ ৬-০-৩১-০, তাসকিন ৬-২-১৫-২, নাসুম ৮-০-৪৩-৩, সাকিব ৪-০-২৩-১, ইবাদত ৬.৫-০-৪২-৪)
ফল: বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী