)
বাংলাদেশ

বিস্ফোরণে কাঁপল আশেপাশের ভবনও, ভূমিকম্প ভেবে দৌড়

Byকামাল তালুকদার

মিরপুর রোডের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে সকাল পৌনে ১১টার দিকে নিজের টেইলারিং শপে গিয়ে বসেন মাহবুব; কয়েক মিনিট না যেতেই হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা ভবন।

আতঙ্কে দ্বিতীয় তলা থেকে তিনি দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। দেখতে পান, পাশের একটি ভবন ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায়।

ভয়ে বেশ হকচকিয়ে যাওয়া মাহবুব ততক্ষণে বুঝতে পারেন, তাদের মার্কেটে নয়, পাশের সেই ভবনেই ঘটেছে ভয়ানক কিছু।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে তিনি বলেন, “সবেমাত্র দোকানে এসে বসেছি। হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে পুরো ভবন। ভূমিকম্প ভেবে দৌড়ে নিচে নেমে দেখতে পাই পাশের ভবনেই বিস্ফোরণ।”

দুর্ঘটনার পরপরই গিয়ে দেখা যায়, শিরিন ভবন নামের তিনতলা ওই ভবনের পশ্চিম ও উত্তর পাশে নিচের সড়কে দেয়ালের অংশ, টেবিল, স্টিলের আলমারি ও দোকানের শাটারের অংশ বিশেষসহ বিভিন্ন জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। ততক্ষণে সেখানে ফুটপাতের দোকান না বসায় বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে বলে মনে করেন সানা উল্লাহ ভূঁইয়া নামে প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের আরেক দোকানদার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রক্ষা! বিস্ফোরণের সময় ফুটপাতে দোকান বসার সময় হয়নি।”

তিনি জানান, যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটির সামনের রাস্তার পাশে ফুটপাতে অন্তত ১৫টি দোকান বসে। বেলা ১২টা থেকে এসব দোকান খুলতে শুরু করে। ঘটনাটি ১১টার দিকে হওয়ায় বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচা গেছে বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকার মিরপুর রোডে সুকন্যা টাওয়ারের কাছে তিনতলা এ ভবনে বিস্ফোরণ হয় সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পলাশী, ধানমণ্ডি টহল ও সিদ্দিকবাজার স্টেশনের চার ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহজাহান মোল্লা জানান, বিস্ফোরণে তিনতলা ওই ভবনের একপাশের দেয়াল ধসে পড়ে।

ছবি: শাফাত রহমান 

এ ঘটনায় আহত ৩০ থেকে ৪০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া হয় কাছের পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক হোসেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় কাপড়ের দোকানপাট, দ্বিতীয় তলায় সেলুন ও লন্ড্রির দোকান এবং তৃতীয় তলায় ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের অফিস। বিস্ফোরণের পর তৃতীয় তলার ওই অফিসের চেয়ার, দরজার শাটার ও আসবাবপত্রের কিছু সড়কে ছিটকে পড়ে।

ঘটনাস্থলে থাকা শামসুল আলম খোকন নামে এক প্রকৌশলী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এত বিকট ছিল যে ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ মিটার দূরে সায়েন্স ল্যাবে তার অফিসের দরজার গ্লাস ভেঙে গেছে।

“আমি মনে করেছিলাম, আমার অফিসেই কোথাও বিস্ফোরণ হয়েছে।”

বিস্ফোরণের সময় ওই ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন একটি বেল্টের দোকানের কর্মচারী কামাল হোসেন। তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কামালের ছোট ভাই আমির হোসেন সাংবাদিবদের বলেন, বিস্ফোরণের সময় তার ভাইয়ের মাথার ওপর ইট জাতীয় ভারী কিছু পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আহত কবির হোসেন জানান, তিনি নিউ মার্কেটে একটি পোশাকের দোকানের সেলসম্যান। ওই ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয় আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ওই জটলার মধ্যে পড়ে তিনি আহত হন।

পড়ে আছে পেঁপে, নেই দোকানদার

শিরিন ভবনের পশ্চিম-উত্তর কোণে নিচে একটি টুকড়িতে পেঁপে নিয়ে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের পর অনেক সময় গড়ালেও তার খোঁজ মেলেনি, স্যান্ডেল আর পেঁপেসহ টুকড়ি পড়েছিল সড়কেই।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ৩০টির মত পেঁপে আছে টুকড়িতে, একটি পেঁপে পলিথিনে ভরা। স্থানীয় দোকানিদের ধারণা, বিস্ফোরণের সময় তার কাছে ক্রেতাও ছিল, দাঁড়িপাল্লা পড়ে আছে উপুড় হয়ে। আশেপাশের দোকানিরাও তার খোঁজ দিতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী সানা উল্লাহ বলেন, ঘটনার পর অনেককে রাস্তায় আহত হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছেন। বিস্ফোরণ হওয়া ভবনের তৃতীয় তলা থেকে একজন লাফ দিতে চেয়েছিলেন, চিৎকার করে তিনি রশি চাচ্ছিলেন।

“রশি দিতে পারিনি। তবে অভয় দিয়েছি যে, আগুন নেই, আপনি সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান। পরে ওই ব্যক্তি সিঁড়ি দিয়েই নামেন।”

ঘটনাস্থলের ঠিক পাশের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের তৃতীয় তলায় একটি টেইলার্সের মালিক মিনার হোসেন বলেন, “বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে একটি বস্তু উড়ে এসে আমাদের দোকানের গ্লাসে লাগে। গ্লাস ভেঙে দোকানে থাকা নান্নু ও মো. হোসেন নামে আমাদের দুই কর্মচারী আহত হয়েছেন। এছাড়া পাশের দোকানের জিল্লুর নামে এক কর্মচারী আহত হন।”

নাশকতার আলামত মেলেনি

বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিটিটিসি ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধানে নামে। বিষ্ফোরণের পর আগুন লাগলেও তার ব্যাপ্তি খুব অল্প ছিলে বলে জানাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘটনাটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বিস্ফোরণের কারণে।

“এখানে আগুনের বিষয়টির খুব একটা গুরুত্ব নেই। আগুন খুবই স্বল্প সময় ছিল, যা প্রায় সাথে সাথে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিস্ফোরণের ঘটনা। বিস্ফোরণের পর যেসব আলামত পাওয়া গেছে তা ‘সাসপেক্টেড’। আর এ কারণে বোমা বিশেষাজ্ঞদের খবর দেওয়া হয়।”

গ্যাস লাইনের ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এখানে গ্যাসের কোনো বিষয় নেই।”

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) যুগ্ম কমিশনার এ এইচ এম কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে এই ভবন ধসে পড়ার ক্ষেত্রে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।”

তার ধারণা, গ্যাস লাইনের ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

SCROLL FOR NEXT