)
বাংলাদেশ

শামসের জামিন শুনানিতে যা বললেন আইনজীবীরা

Byআদালত প্রতিবেদক

ভুল স্বীকার করে খবরের সংশোধনী দেওয়ার পরও গ্রেপ্তার ও মামলা কেন, চারদিন কারাবন্দি থাকার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের আবার জামিন শুনানিতে সেই প্রশ্ন তুলেছেন এক আইনজীবী।

‘এ ধরনের অভিযোগে ব্যক্তি মামলা করতে পারে না, রাষ্ট্র পারে’- এমন বক্তব্য তুলে ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আশরাফ-উল-আলম বলেন, “একজন সাংবাদিকের লেখার দায়ে যদি এই হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হতে পারে। মানুষের ভুল ত্রুটি থাকতে পারে।“

হাকিম আদালতে প্রথম দফায় নাকচের পর আবার শামসের জামিনের আবেদন করলে সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে শুনানিতে এসব বিষয় সামনে আনেন তার আইনজীবীরা।

পরে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক পুলিশ প্রতিবেদন হওয়া পর্যন্ত তাকে ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

শামসের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবুল হক, আশরাফ-উল-আলম, চৈতন্য চন্দ্র হালদার, সুমন কুমার রায়, বাহাউদ্দিন ইমরান, আমিনুল গণি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু।

এর আগে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন গত ৩০ মার্চ জামিন নাকচ করে শামসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক।

এ মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং নাম উল্লেখ না করে একজন সহযোগী ক্যামেরাম্যানকেও আসামি করা হয়েছে। রোববার মতিউর রহমান হাই কোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান।

এদিন শুনানির শুরুতে শামসের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার এজাহার পাঠ করে শুনিয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের জামিন শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি যা বলেছিলেন সেসব বিষয় অর্থাৎ ভুল স্বীকার করা, পরিবেশিত খবরের সংশোধনী দেওয়া হলে মামলা কেন, প্রেস কাউন্সিলে কেন গেলেন না ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ফুল বিক্রেতা এমন ১২/১৩ জনের বক্তব্য আর একজন দিনমজুরের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ মামলার অভিযোগ কোনোভাবেই সত্য না। হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে। মামলা না করে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দেওয়া যেতে পারত।

এ আইনজীবী সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রেক্ষিতে ওই খবরটি স্বাধীনতা বিরোধী খবর কীভাবে হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, মামলায় বলা হচ্ছে জাল পরিহিত বাসন্তীর ছবির কথা। যখন পত্রিকায় ওই ছবি ছাপা হয় কই তখন তো কেউ এগিয়ে আসেনি?

আইনজীবী আমিনুল গণি বলেন, মামলার একটি ধারা জামিনযোগ্য। মামলায় বলা হল যে- তাকে ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে ভোর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তার আশুলিয়ার বাসা থেকে। গ্রেপ্তারের অনেক পরে তার বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা হয় এর আগে। কই এখনও তো সে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

“ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত ৬১ ধারায় বলা হয়েছে যে গ্রেপ্তারকৃতকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা যাবে না। তাকে আদালতে প্রডিউস না করে এ কয়েক ঘণ্টা তাকে কীভাবে রাখা হল, কোথায় কোথায় নেওয়া হল তার কোনো উল্লেখ মামলায় নেই,”বলেন তিনি।

এ সম্পর্কে উচ্চ আদালতের অনেক নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৮ মার্চে গ্রেপ্তার করে গ্রেপ্তার দেখানো হল পরের দিন । যার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আইনজীবী বাদীর এজাহারে নেই।

তাছাড়া স্বাধীনতা নিয়ে কোনো তীর্য্ক প্রশ্ন অভিযুক্ত তোলেননি দাবি করে তিনি রাষ্ট্রপক্ষ এবং অপর আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের বন্ধুদের ভাত মাছের সমস্যা না থাকতে পারে কিন্তু প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের আছে। নিউজে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে তাদের ভাষ্য দিয়ে। কলমের স্বাধীনতা বন্ধ করা যাবে না।“

শামসের আরেক আইনজীবী আশরাফ বলেন, এ মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে হাই কোর্ট ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে। সে কারণে শামস জামিন পেতেই পারেন।

এসব বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ফুল বিক্রেতা শিশুর মুখ দিয়ে এ কথা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলানো হয়েছে। এ রকম গর্হিত কাজ সাংবাদিতা নয়। শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করলেই হবে না।

“বাসন্তীকে যারা জাল পরিয়ে ছবি তুলেছিল সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিই এ রকম কাজ করেছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী পারপাসলি এটা করেছে। আইনের অধিকাংশ ধারা নন বেইলবেল।“

শুনানির মাঝামাঝি পর্যায়ে এজলাসে অন্য মামলায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক আইনজীবী নজিবুল্লাহ হীরু বলেন, “যদিও আমি এখানে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নই। তার পরও আসামিপক্ষ থেকে যে সব বক্তব্য শুনলাম, তাতে আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু কথা বলি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। আগে মানুষ ভাত পেত না, এখন সবাই ভাত খায়। আমাদের ভাত মাছ-মাংসের স্বাধীনতা রয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।“

বিচারক প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন।

আরও পড়ুন:

SCROLL FOR NEXT