মৌমাছির জন্য হাহাকার!

মৌমাছির স্বল্পতার কারণে ইউরোপজুড়ে ফসলের পরাগায়ন হুমকির মুখি পড়েছে। ইউরোপের অর্ধেকের বেশি দেশে পরাগায়নের জন্য যথেষ্ঠ মৌমাছি নেই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2014, 05:36 AM
Updated : 12 Jan 2014, 05:37 AM

নতুন এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে মৌমাছি স্বল্পতা চোখে পড়ার মতো। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র একচতুর্থাংশ মৌমাছি রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী ফসলের চাষ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় পরাগায়নের জন্য অতিরিক্ত মৌমাছির চাহিদা বহুলাংশে বেড়ে গেছে।

ভ্রমর ও হোভারফ্লাইয়ের মতো জংলি পতঙ্গ পরাগায়নের এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে বলে তারা মনে করেন।

লুস ওয়ান জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পতঙ্গ মারা ওষুধের ব্যবহার এবং রোগের কারণে গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য স্থানে মৌমাছির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

যদিও ইউরোপজুড়ে ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মৌমাছির কলোনি ৭ শতাংশ বেড়েছে।

কিন্তু এই একই সময়ে জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী ফসল যেমন- সরিষা, সূর্যমুখী ও সয়াবিনের চাষ প্রায় এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ফসলের পরাগায়নে মৌমাছির ভূমিকা রয়েছে।

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. টম ব্রিজ বলেন, “অনেক দেশে সরিষা চাষের হার বেড়ে যাওয়ায় মৌমাছির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।”

বিজ্ঞানীরা বলেন, বর্তমানে ইউরোপজুড়ে ১৩.৪ মিলিয়ন কলোনি বা প্রায় সাত বিলিয়ন মৌমাছির ঘাটতি রয়েছে।

সহ লেখক প্রফেসর সিমন পটস বলেন, “এখনই যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে ভবিষ্যতে আমাদের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।”

“এজন্য পরাগবহনকারীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ মানুষের খাদ্য শিকলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তারা দেশের সত্যিকারের নায়কের ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া তারা এই কাজটি একদম বিনামূল্যে করে, যেখানে একই কাজ করাতে ব্রিটেনের কৃষকদের ১.৮ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করতে হতো।”

এদিকে ইইউভূক্ত দেশগুলোর নতুন জ্বালানি চাহিদা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ পরিবহণ জ্বালানি অবশ্যই নতুন কোনো উৎস থেকে আসতে হবে। যদিও চূড়ান্ত সংখ্যাটা নিয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে।

তবে নতুন চাহিদার পরিমাণ যাই হোক না কেন, সেটা এটাই নির্দেশ করছে যে সয়াবিন, পাম ও সরিষার মতো তেল উৎপাদনকারী ফসলের চাষ ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে।

আর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনো গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে প্রফেসর পটস বলেন, “ইউরোপ জুড়ে কৃষি ও পরিবেশনীতির মধ্যে সমন্বয়হীনতা বেড়েই চলেছে।”

“কৃষদের তেল উৎপাদনকারী ফসল চাষের জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো পরাগায়নে যেসব পোকা কাজ করে তাদের কীভাবে সাহায্য করা যায় সে ব্যাপারে যৌথ কোনো পরিকল্পনা এখনো গ্রহণ করা হয়নি।”

পরায়াগনে সাহায্যকারী এইসব পোকাদের সংরক্ষণে ইউরোপজুড়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।