বরখাস্তের পর ‘কিলিং মেশিনে’ ফিরলেন ব্যানন

বরখাস্ত হওয়ার পর ফের ব্রেইটবার্টের শীর্ষ পদে ফিরেছেন স্টিভেন ব্যানন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 06:23 AM
Updated : 19 August 2017, 06:38 AM

রয়টার্স জানায়, শুক্রবার ট্রাম্প ব্যাননকে হোয়াইট হাউজের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট পদ থেকে সরিয়ে দেন।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কট্টর ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের নির্বাহী চেয়ারম্যন পদে যোগ দেন তিনি; যাকে একসময় তিনি নিজেই ‘কিলিং মেশিন’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

এমনিতেই জাতীয়তাবাদী ঘরানার পৃষ্ঠপোষক ব্যাননের সমর্থকগোষ্ঠী বেশ শক্তিশালী; ব্যাননকে নিজেদের লোক মনে করা রিপাবলিকানদের অনেকেই এর মধ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ‍বিরুদ্ধে গর্জেও উঠেছেন।

‘যুদ্ধ’, ব্যাননকে বরখাস্তের পর এমনটাই টুইট করেন ব্রেইটবার্টের এক সম্পাদক জোয়েল পোলাক।

ব্যাননকে হোয়াইট হাউজের বাইরে রেখে ট্রাম্প আরো বেশি মধ্যপন্থায় ঝুঁকে পড়বেন কি না সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

“ব্যাননই ট্রাম্পের কর্মসূচিগুলোকে মূর্ত করেছিলেন,” বলেন পোলাক।

গত বছর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেয়ার আগেও ব্যাননের পরিচালনায়ই চলত   ব্রেইটবার্ট।

হোয়াইট হাউজে অন্য উপদেষ্টা এবং কংগ্রেসের শীর্ষ রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে লড়াইয়ের পুরো সময়েও ব্রেইটবার্ট ব্যাননকে সাহচর্য দিয়ে গেছে।

ট্রাম্পের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সংবাদমাধ্যমটি ধারাবাহিকভাবে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেল ও নিম্নকক্ষের স্পিকার পল রায়ানের মতো প্রতিষ্ঠিত অনেক রিপাবলিকান নেতার  সমালোচনা করে গেছে।

পররাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নে ব্যাননঘনিষ্ঠদের সরিয়ে দেওয়ায় অতি সম্প্রতি তারা ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টারের দিকেও একের পর এক তীর ছুড়ছিল।

নতুন করে ব্রেইটবার্টে ফিরে ব্যানন হোয়াইট হাউজের ভেতরে যারা তার পরামর্শমতো তীব্র জাতীয়তাবাদী নীতি বাস্তবায়নে বাধা দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। এ তালিকায় এমনকী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও থাকতে পারেন।

“স্টিভের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী, তিনি এটা বজায় রাখবেন। ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে থাকা অবস্থায় তিনি যেসব নীতি বাস্তবায়নে চেষ্টা করেছিলেন তার ধারাবাহিকতাও বজায় রাখবেন,” বলেন ট্রাম্পের সাবেক নির্বাচনী প্রচার উপদেষ্টা ও ব্যাননের বন্ধুখ্যাত স্যাম নানবার্গ।

ব্যাননকে সরিয়ে দিয়ে ট্রাম্প ভুল করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

হোয়াইট হাউজের ভেতরে ব্যাননের সঙ্গে ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক গ্যারি কোন এবং ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জেরার্ড কুশনারের বিরোধ ছিল বলেও জানিয়েছে রয়টার্স; অধিক ব্যবসাবান্ধব, ট্যাক্স ও অর্থনীতির বেশ কিছু বিষয়ে মূলধারার লোক হিসেবে পরিচিত এসব তুলনামূলক মধ্যপন্থিদের ‘গ্লোবালিস্ট’ ডাকতেন ব্যানন।

সমর্থকদের একাংশের ধারণা আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা বাড়ানো নিশ্চিত করতেই ব্যাননকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যানন আফগানে নতুন করে সৈন্য পাঠানোর বিরোধিতা করেছিলেন।

হোয়াইট হাউজের ভেতরেও অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারের মতো অনেকে আছেন যারা ব্যাননের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত; হোয়াইট হাউসে ব্যাননের অনুপস্থিতি অনুভূত হবে বলেও মন্তব্য করেছেন মিলার।

ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য এক কর্মকর্তা বলেছেন, হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরীণ বিতর্কগুলোতে ব্যাননের স্থানপূরণ করতে পারবেন এমন কাউকে পাওয়া যাবেনা।

“স্টিভকে ছাড়া তথাকথিত গ্লোবালিস্টরা একের পর নীতি ও ধারণা নিয়ে ট্রাম্পকে চাপ দিতে পারবেন, হয়তো তারা এমনকী নীতি বিষয়ক বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী হওয়াও শুরু করতে পারেন,” বলেন তিনি।

ব্রেইটবার্ট এবং কট্টর ডানপন্থিরা ছাড়া বেশকিছু রক্ষণশীল গোষ্ঠীও ব্যাননের চলে যাওয়ার উদ্বিগ্ন।

রিপাবলিকান দলের দীর্ঘদিনের কর্মী রিচার্ড ভিগুয়েরি, জেনি বেথ মার্টিন ও জিনি থমাসের মতো দলের ২০ তৃণমূলকর্মী গত সপ্তাহে ট্রাম্পের কাছে লেখা এক চিঠিতে ব্যাননকে পদে রাখার আকুতি জানিয়েছিলেন। 

“হোয়াইট হাউজের স্টিভ ব্যাননকে আমরা সবসময় মনে রাখবো, কারণ তিনিই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নির্বাচনের সময় করা তার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের পথে রেখেছিলেন,” ব্যাননকে বরখাস্তের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এমনটাই বলেন টি পার্টি প্যাট্রিয়টসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্টিন।

ব্যাননের চলে যাওয়ার পরও ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা, অভিবাসন ও অর্থনীতির অন্যান্য বিষয়ে মধ্যপন্থিদের কথা শুনবেন এমনটা নিশ্চিত নয় বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

কারণ এর আগেও ট্রাম্প তার সাবেক উপদেষ্টা কোরে লেবানদোভস্কি, নিউট গিংরিচ এবং রক্ষণশীল পণ্ডিতখ্যাত শন হেনিটির পরামর্শ নিয়েছিলেন; ব্যাননও এই দলে যোগ দিতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।