ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আদালতের আদেশে গত সপ্তাহে ওই নিষেধাজ্ঞার একটি অংশ স্থগিত হয়ে যায়।
ফেডারেল কোর্টের ওই আদেশ বাতিল চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের করা একটি আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত শনিবার নাইন্থ সার্কিট আপিল কোর্ট নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দাবি নাকচ করে দেয়।
আদেশে বলা হয়, পুরো আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতই থাকছে। এ সপ্তাহের শেষ দিকে আপিল আদালত শুনানি শেষ করে রায় দিতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
মঙ্গলবার এ মামলার শুনানিতে স্যানফ্রান্সিসকোর আপিল আদালতের তিন বিচারকের একজন রিচার্ড ক্লিফটন প্রশ্ন তোলেন- যেখানে বিশ্বের ১৫ শতাংশ মুসলমানের ওপর ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে, সেখানে ওই নির্বাহী আদেশকে মুসলমানদের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কেন বলা হবে না।
বিবিসি লিখেছে, মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রায় এক ঘণ্টা শুনানি করেন আপিল আদালতের তিন বিচারক। তাবে এ আদালতে যে রায়ই আসুক, শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শুনানিতে বলে, যুক্তরাষ্ট্রে কে প্রবেশ করতে পারবে আর কে পারবে না- তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসই প্রেসিডেন্টকে দিয়েছে।
আদালত এক পর্যায়ে জানতে চায়, যে সাত দেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে- এমন ধারণার পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কি না।
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অগাস্ট ফ্লেন্তজে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু সোমালীয় নাগরিকের সঙ্গে জঙ্গি দল আল-শাবাবের যোগাযোগ পাওয়া গেছে।
ওয়াশিংটন রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী নোয়াহ পুরসেন আদালতকে বলেন, প্রেসিডেন্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো ক্ষতি হয়নি।
বরং সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে এ রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন, বহু শিক্ষার্থীর ওয়াশিংটনে ফেরা বিলম্বিত হয়েছে এবং অনেকে তাদের প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না বলে যুক্তি দেখান ওই আইনজীবী।
শুনানির শেষ দিকে ট্রাম্পের এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মুসলমানদের দূরে রাখার উদ্যোগ কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিষয়টি এমন হলে সেটা অসাংবিধানিক হবে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পক্ষে সোমবার রাতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি বলা হয়, ‘ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে নিরপেক্ষভাবে’ ওই নির্বাহী আদেশ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের মুসলমানদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন ওয়াশিংটন রাজ্যের আইনজীবী পুরসেল।
তিনি আদালতে ট্রাম্পের উপদেষ্টা রুডি জুলিয়ানির একটি বক্তব্যের বিষয়েও উল্লেখ করেন। জুলিয়ানি বলেছিলেন, তাকে মুসলমানদের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার বৈধ একটি পথ খুঁজে বেরতে বলা হয়েছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ক্লিফটন বলেন, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা মাত্র সাতটি দেশের উপর এবং ওবামা প্রশাসন ও কংগ্রেস সন্ত্রাসী হামলার হুমকি বিবেচনায় ওই দেশগুলোকে সনাক্ত করে গেছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, গত প্রশাসন ও কংগ্রেস ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?”
জবাবে পুরসেল বলেন, “না, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছেন। যদিও এটা পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং এটা বৈষম্য।”