বিবিসি বলছে, সম্প্রতি দেশটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের যে ঘোষণা দিয়েছে তারই অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
হজ ও ধর্মীয় পর্যটন খাতে আয় বাড়াতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শহরের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি এবং শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসব পরিকল্পনা দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, সৌদি আরব হজ করতে যাওয়া ব্যক্তিদের ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি কমিয়ে আনার কথা ভাবছে।
এখন পর্যন্ত, হজব্রত পালন করতে যাওয়া ব্যক্তিরা সৌদি আরবের কোথায় কোথায় যেতে পারবেন এবং দেশটিতে কতদিন থাকতে পারবেন সেসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ নজরদারি করে থাকে।
দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ কড়াকড়ি কমিয়ে এমন নিয়ম চালু করতে চান যেন মক্কা ও মদিনা সফরে আসা হজযাত্রীরা চাইলেই তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেন।
এরফলে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন শহর ও স্থাপনা ভ্রমণে উৎসাহিত হবেন হাজিরা।
“ধর্মীয় দায়িত্ব শেষ করার পর হজযাত্রীরা যেন মদিনার কাছাকাছি মাদাইন সালে’র মতো বিভিন্ন পুরাকীর্তি দেখতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি”, বলেন সৌদির পর্যটন ও ঐতিহ্য কমিশনের প্রধান প্রিন্স সুলতান বিন সালমান।
“আমাদের আরও আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যেগুলো ভ্রমণকারীদের সাম্রাজ্যের আরও আরও জায়গায় যেতে উৎসাহিত করবে”, বলেন তিনি।
‘ধর্মীয় পর্যটন’ উৎসাহিত করতে সৌদি আরব এরইমধ্যে বড় বড় সব প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এরমধ্যে আছে মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও অন্যান্য বড় শহরকে সংযুক্তকারী রেললাইন নির্মাণ, নতুন জেদ্দা বিমানবন্দর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের শিলা দিয়ে বানানো উন্মুক্ত জাদুঘর।
দেশটির প্রভাবশালী আর্ট কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ হাফিজ বলছেন, সাংস্কৃতিক উদ্যোগকে তারা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ‘সুপ্ত সম্ভাবনা’ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
সৌদি আরবে পুরাকীর্তি খননে নেতৃত্ব দেয়া একটি দলের প্রধান মাইকেল পেত্রাগ্লিয়া জানান জুব্বাহ, শুওয়েমিস ও নেজরানে এ ধরনের নানান স্থান আছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করবে।
“এর মধ্যে চারটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, বাকিগুলোও তাদের বিবেচনার মধ্যে আছে”, বলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
দেশটির মোট জিডিপি’র ২.৭ শতাংশ নির্ভর করে পর্যটনের উপর। এর মধ্যে ইসলামি পঞ্জিকার দ্বাদশ মাসে হওয়া হজ ও বছরের অন্যান্য সময়ে চলা ওমরাহর মাধ্যমে দেশটি প্রতিবছর ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।
এ আয়কে আগামী চার বছরের মধ্যে বছরপ্রতি ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চায় দেশটির অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিল। এজন্য ওমরাহকারীদের সংখ্যা চার বছরের মধ্যে আরও সাত মিলিয়ন বাড়িয়ে ১৫ মিলিয়ন এবং ২০৩০ এর মধ্যে ৩০ মিলিয়ন করার পরিকল্পনা তাদের।
সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি লোহিত সাগরের উপর নতুন একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ওই সেতু মিশরের সঙ্গে ‘একটি নতুন সংযোগ’ ঘটাবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষের ধারণা।
৯০ লাখ মিশরীয়র সঙ্গে এই নতুন যোগাযোগ তাদের পর্যটন খাতকে আরও চাঙ্গা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।