‘ভারত সরকার কাকে বাঁচাতে চায়, গরু না কৃষক’   

জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গরু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকার কারণে ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্যের লাখ লাখ কৃষক তীব্র দারিদ্র্যের হুমকির মুখে পড়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 30 March 2016, 08:09 AM
Updated : 31 March 2016, 05:56 AM

গ্রামের এসব কৃষকের দুর্ভোগ যত বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) প্রতি এদের অসন্তোষও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হিন্দু (সনাতন)ধর্মে গরুকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই ঐতিহ্যগতভাবেই ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই করায় নিষেধাজ্ঞা আছে।

কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর মাংস রপ্তানিকারী দেশটিতে এ ব্যাপারে জবরদস্তি তেমন একটা ছিল না। 

কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রের মতো কয়েকটি রাজ্য গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিস্তৃত করে ষাঁড় ও বাঁছুরকেও এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা মানতে বাধ্য করতে হিন্দু স্বেচ্ছাসেবীরা গরু বিক্রেতাদের উপর হামলাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ও হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ভারতে সনাতন ধর্মের বিশ্বাস জোরদার করতে শুরু করার পরই কঠোর আইন প্রণয়ন শুরু হয়। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু হওয়ায় বিষয়টি সহজই হয়।

কিন্তু দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে ১৮ কোটি মুসলমান রয়েছে, এসব আইন প্রয়োগ জোরদার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গরুর মাংস নিষিদ্ধ করার ফলাফলও উল্লেখযোগ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে। সারা দেশে গরুর দাম পড়ে গেছে। ভারতের মাংস রপ্তানি এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্বে ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ সময় ভারতের লোকসানে লাভ হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী মাংস রপ্তানিকারী দেশ ব্রাজিলের।

পরপর দুবছর ধরে চলা খরা ও অকাল বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল মার খেয়ে লাখ লাখ কৃষক দিশেহারা। চলমান তীব্র খরায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠেছে। গোয়ালে থাকা গরুকে খাওয়ানোর মতো খাবার বা পানি কিছুই নেই।

আগে এই অবস্থায় গরুগুলোকে বিক্রি করে নগদ কিছু পেয়ে দিন গুজরান করা যেত। কিন্তু এখন তাও সম্ভব নয়। গরু বিক্রি করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে গ্রামের গরিব কৃষকদের।

মহারাষ্ট্রের একটি গরুর হাটে কয়েক সপ্তাহ ধরে দুটি ষাঁড় নিয়ে বিক্রি করার জন্য বসে আছেন রেভাজি চৌধুরি। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই।

নিজের গরুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেভাজির প্রশ্ন, “আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি, সরকার কাকে বাঁচাতে চায়-আমাদের না গরুদের?”  

ঐতিহ্যগতভাবে খরার বছরে সাধারণত কৃষকরা গরু বিক্রি করে দিতো। মুসলিম কসাইরাই সাধারণত এসব গরুর ক্রেতা ছিল। বর্ষাকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আয় বাড়লে কৃষকরা আবার গরু কিনে নিতো। এভাবেই চলে আসছিল।

কিন্তু এ চক্র ভেঙে গেছে। জুনে বপনের নতুন মওসুম শুরু হবে, কিন্তু বীজ ও সার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ কৃষকের হাতে নেই। খরা কবলিত মহারাষ্ট্রের মারাঠা এলাকায় কৃষকের আত্মহত্যার হার চলতি বছরে এরই মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।