সিরীয়দের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার

কয়েক বছরের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সিরীয়দের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতা দেশগুলো।

সৈয়দ নাহাস পাশা লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2016, 05:35 PM
Updated : 4 Feb 2016, 05:52 PM

সিরীয়দের সহায়তায় তহবিল গঠনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার লন্ডনে মিলিত হন বিশ্বের ৬০ দেশের প্রতিনিধিরা।

ওই সম্মেলনে সহায়তার এ প্রতিশ্রুতি এসেছে বলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন।

কোটি সিরীয়কে ‘জীবনরক্ষাকারী’ খাবার, চিকিৎসা সেবা ও আশ্রয়ে এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে শরণার্থীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ায় অবরুদ্ধ অবস্থায় অনাহারে মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে।

লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ কনফারেন্স সেন্টারে ‘সাপোর্টিং সিরিয়া অ্যান্ড দ্য রিজিয়ন’ শিরোনামে সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন।

প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ছাড়াও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, যুক্তরাষ্ট্রের  পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী শেল সাবাহ আল খালিদ আল সাবাহ, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও চ্যারিটির প্রধানরা সম্মেলনে অংশ নেন।

যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কুয়েত, নরওয়ে ও জাতিসংঘ আয়োজিত সম্মেলনে বান কি-মুন বলেন, সিরিয়া সংকট অচিরেই ষষ্ঠ বছরে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরিয়া সংকট সমাধানে জেনেভায় শান্তি আলোচনা ভেঙে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “বিভাজন অনেক গভীর।”

সিরীয়দের সহযোগিতায় এ বছরই ৮ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন বান।

বক্তব্যে ইসরায়েলি অবরোধে আটকা ফিলিস্তিনিদের নিয়েও কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

“ফিলিস্তিনী শরণার্থীরা আরও বেশি করুন অবস্থায় আছেন।”

জিম্মি অবস্থা থেকে তাদের মুক্ত করে ভুখা মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কথা জোর দিয়ে বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি সিরীয় শরণার্থীদের জন্য আরও সহায়তার পরিমাণ আরও ৩০ শতাংশ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন সম্মেলনে সিরীয়দের সহায়তায় আরও ১ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন পাউন্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রিটেন।

জার্মান চ্যান্সেলর মেরকেল সিরীয়দের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউরো করার ঘোষণা দেন। এ বছরে দেওয়া ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরোর সঙ্গে  ২০১৮ সালের মধ্যে এই অর্থ দেবে দেশটি।

এছাড়া ৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিরিয়া সংকট নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করেন  যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি

ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতগলু।

জেনেভা শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জন্য মস্কোকে দোষারোপ করেন কেরি।

সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিরোধীদের ওপর রুশ বোমা হামলা বন্ধেরও দাবি জানান তিনি।

আসাদ সরকার মধ্যযুগীয় কায়দায় জনগণকে ভুখা রেখে সাজা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী, যাদের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় আইএসকে সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে। 

বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রীরা ছাড়াও সম্মেলনে বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সিরয়া সংকট উত্তরণের পথ খুঁজতে দিনব্যাপী বিভিন্ন সেশনে আলোচনা হয়। শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের স্ত্রী সারাহ ব্রাউন, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এমা সলবার্গ এবং ইউএনডিপি, ইউনেস্কো ও ইউএনএইচসিআর- এর কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

এই সম্মেলন উপলক্ষে লন্ডনে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাউস অব কমন্সের অদূরে কনফারেন্স সেন্টারের আশপাশের রাস্তাগুলোয় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হেলিকপ্টার টহলও দেখা যায় এ সময়।